বিশ্বভারতী
নতুন কমিটি গড়ে ক্ষুব্ধ প্রাক্তনীদের ‘বার্তা’ উপাচার্যের
প্রাক্তনীদের একটি অংশের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে নামলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। এক দিকে, ওই প্রাক্তনীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা বেনিয়মের অভিযোগ তুলছেন। অন্য দিকে, বিশ্বভারতীও পাল্টা বেনিয়মের অভিযোগ তুলে দু’ মাস আগেই তালা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে প্রাক্তনী সংগঠন বা ‘অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন’-এর দফতর। সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশনকে আরও ‘সক্রিয়’ করার যুক্তিতে বিশ্বভারতী ‘অন্তর্বর্তী কমিটি’ও গঠন করেছে। বিশ্বভারতীর একটি মহল মনে করছে, ওই কমিটি গড়ে আদতে তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়া প্রাক্তনীদেরই চাপ দিলেন সুশান্তবাবু।
এত দিনের পুরনো ‘অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন’ সম্পর্কে বিশ্বভারতীর এক আধিকারিকের মন্তব্য, “পদাধিকার বলে ওই অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের কাজই ছিল নিজের ছেলেমেয়েকে বিশ্বভারতীতে ভর্তি করা আর দফতরে বসে বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা। এ বার সেটাই বন্ধ করা হল।”
নতুন কমিটি গঠনই আদতে সেই ‘দাওয়াই’ বলে মনে করছেন অনেকেই। কী সেই কমিটি?
গত ১৪ জানুয়ারি কর্মসচিব ডি গুণশেখরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন, নতুন ‘অন্তর্বর্তী কমিটি’তে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তনীদের যুক্ত করা হবে। কমিটি মূলত বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীদের সংগঠন ‘অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন’কে আরও সক্রিয় করে গড়ে তোলার বিষয়গুলি খতিয়ে দেখবে। প্রয়োজনে ‘অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন’-এর নিয়ম-নীতিতে পরিবর্তন আনার সুপারিশ এবং নির্বাচন সংক্রান্ত নানা প্রস্তাবও ওই কমিটি উপাচার্যকে দেবে। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের নির্দেশেই ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মসচিব। কমিটির সদস্যদেরও মনোনীত করেছেন উপাচার্যই। গুণশেখরণ বলেন, “উপাচার্য মনোনীত প্রাক্তনীদের এই কমিটি রবীন্দ্র আদর্শে অনুপ্রাণিত বিশ্বভারতীতে শিক্ষার উৎকর্ষ ফেরানো, প্রাক্তনীদের সংগঠনকে ঢেলে সাজা-সহ একাধিক বিষয়ে সুপারিশ করবে।”
ওই কমিটি গঠন নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন ‘অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন’-এর ‘প্রাক্তন’ সম্পাদক পুলক চক্রবর্তী। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “প্রতি বছর নির্বাচনের মাধ্যমে অ্যালামনির কমিটি তৈরি হয়। সেই কমিটিই নিয়মিত ভাবে কাজকর্ম করে। কিন্তু বিদেশের প্রাক্তনীরা কী ভাবে ওই অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হবেন?” “বিশ্বভারতীর হৃত গৌরব ফেরানোর বিষয়ে তাঁরা বরং পরামর্শ দিন।” যোগ করলেন পুলকবাবু। প্রাক্তনীদের একটি বড় অংশ তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়াতেই সুশান্তবাবু ওই কমিটি গঠন করেছেন বলে মনে করছেন তাঁরা।
পুলকবাবুরা সম্প্রতি সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়ম-সহ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ তুলে বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। এ ছাড়া সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও করেছেন আর এক প্রাক্তনী সুবোধ মিশ্র। প্রাক্তনীদের অভিযোগ, এই সব কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়েই সুশান্তবাবু অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশনের দফতরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার নির্দেশে দেন। তার প্রতিবাদে পৌষমেলা চলাকালীন পুলকবাবুরা আম্রকুঞ্জে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌনী মিছিলও করেছিলেন। এরপরেই ভূগোল বিভাগে গবেষণারত পুলকবাবুকে বহিষ্কার করে বিশ্বভারতী। এ বিষয়ে বিশ্বভারতীর ছাত্র পরিচালক শমিত রায়ের দাবি, “বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার জন্যই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
“আসলে নিজেকে ঢাকতেই বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে চক্রান্তের জুজু দেখাচ্ছেন সুশান্তবাবু।” ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন এক প্রবীণ আশ্রমিক। সম্প্রতি বিশ্বভারতী অঞ্চলে ‘অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন’-এর ‘প্রাক্তন’ সম্পাদকের প্রবেশও নিষিদ্ধ করেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। একই নির্দেশ পেয়েছিলেন রবীন্দ্রভবনের ‘সাময়িক ভাবে বরখাস্ত’ হওয়া প্রাধিকারিক নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ওই নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ বিশ্বভারতীর ইসি (এগজিকিউটিভ কাউন্সিল) সদস্য বিশিষ্ট চিত্রকর যোগেন চৌধুরীই। তাঁর মন্তব্য, “এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করা কি ঠিক?” বিশ্বভারতীর চরিত্রের সঙ্গে ওই সিদ্ধান্ত একেবারেই মানায় না বলেই মনে করছেন বহু প্রাক্তনীই।
ওই প্রাক্তনীরা ক্ষুব্ধ হলে কি হবে, বিশ্বভারতী আপাতত নজর দিতে চাইছে হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের বক্তব্য, “নতুন উপাচার্য এ বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগী। প্রাক্তনীদের সংগঠনকে গঠনমূলক কাজে সক্রিয় করতেই সুশান্তবাবু প্রেসিডেন্সির ধাঁচে দেশ-বিদেশের প্রাক্তনীদের বিশ্বভারতীর কর্মকাণ্ডে জড়াতে চেয়েছেন। তাই চিনা ভবনের প্রতিষ্ঠাতা তান ইয়ুন শান-এর ছেলে তান লি-কে (পাঠভবনের প্রাক্তনী) ওই কমিটির সভাপতি করে উপাচার্য বিশ্বভারতীর মানোন্নয়নেরই বার্তা দিতে চেয়েছেন।” কোনও বিষয়েই অবশ্য মন্তব্য মেলেনি উপাচার্যের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.