বই থেকে গ্রন্থমেলা, পরিবর্তনের পরিকল্পনায় দলবাজির অভিযোগ |
ছিল বইমেলা, হল গ্রন্থমেলা। ছিল গোপাল চাকী প্রাঙ্গণ, এবার তা হচ্ছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রাঙ্গণে। কুড়ি বছরে বইমেলার সঙ্গে সব সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটাতে চলেছে গ্রন্থমেলা। ধূপগুড়ির মানুষ বলছেন, সিপিএম-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে আগের বইমেলার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখা হচ্ছে না এবারের গ্রন্থমেলায়। পরিবর্তনের সঙ্গে যাতে বেমানান না হয়ে যায় সেই জন্য মঞ্চ থেকে বুক স্টলগুলি নীল, সাদা রঙের কাপড়ে মুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার শহরের ফুটবল ময়দানে ওই গ্রন্থমেলার সূচনা হবে।
এই মেলাকে ঘিরে এখন তরজার আসর পাড়ায় পাড়ায়। কেউ বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা যে গ্রন্থমেলা করছে সেখানে দলবাজি করা হচ্ছে। আবার অন্য পক্ষের যুক্তি, সিপিএম কুড়ি বছর ধরে কুক্ষিগত করে রেখেছিল বইমেলা। এবার মুক্তির স্বাদ পেল। পুরসভার গ্রন্থমেলায় দলবাজির অভিযোগ করেন ধূপগুড়ির সিপিএম বিধায়ক মমতা রায়। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী দলতন্ত্র নয়, গণতন্ত্রের কথা বললেও সর্বত্র দলবাজি চলছে। এই মেলা তার ব্যতিক্রম নয়। আমি মেলার উদ্বোধনে যাচ্ছি না।” বইমেলার সহ সভাপতি পদে থাকা সিপিএম জোনাল সম্পাদক তুষার বসু নয়া গ্রন্থমেলা থেকে বাদ গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “কী হচ্ছে তা মানুষ দেখছেন। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন তা নিয়ে ব্যস্ত। মেলায় যাব সাধারণ মানুষ হিসাবে।”
২২ বছর আগে ধূপগুড়ির কয়েক জন বই প্রেমীর উদ্যোগে মেলার সূচনা হয়। বৈরাতিগুড়ি স্কুল ঘরের ওই মেলা তিন বার চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। দুই বছর বাদে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা সিপিএম নেতা গোপাল চাকীর উদ্যোগে ফের মেলা শুরু হয়। ২০০২ গোপালবাবু কেএলও জঙ্গির গুলিতে পার্টি অফিসে মারা যান। ২০০৩ সাল থেকে তাঁর স্মরণে বইমেলা প্রাঙ্গণের নাককরণ তাঁর নামে হয়। অভিযোগ, তার পর থেকে বইমেলাটি আর গুটি কয়েক বই প্রেমীদের হাতে ছিল না। মেলার পুরো নিয়ন্ত্রণ করত সিপিএম। দলের বিধায়ক থেকে পার্টির নেতারা ছিলেন বইমেলা কমিটির কর্তারা। নানা কারণে গত বার বই মেলা বন্ধ ছিল। রাজ্যে ধরাশায়ী সিপিএম নেতৃত্ব মেলা করতে উৎসাহ দেখায়নি। কয়েক মাস আগে তৃণমূল ধূপগুড়ি পুরসভা দখল করে। এ বার মেলার পুরো দায়িত্ব নিয়েছে পুরসভা। তার পরে সব বদল। মেলা কমিটির কয়েক জনের কথায়, ঠিক হয় আগের মেলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা চলবে না। নাম পরিবর্তন থেকে প্রাঙ্গনের নাম বদল সব করা হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান শৈলেন চন্দ্র রায় বলেন, “বইমেলা নিয়ে সিপিএম দলতন্ত্র করেছে। কোনও দলতন্ত্র করছি না। বিধায়ককে সভার চিঠি দিয়েছি।”
এবারের মেলা কমিটির উদ্যোক্তা জয় বসাক, অলোক সরকারের কথায়, “আমাদের রক্তে বইমেলা। দল বা অন্য কিছু আমাদের মাথাব্যথা নয়।”
|