মমতায় ব্যস্ত শহরে বিপত্তি চিতাবাঘ
উৎসবের হাত ধরেই দাওয়াই উন্নয়নের
তাঁর কথার নড়চড় হয় না। গত নভেম্বরে হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধনে তিনি কলা-শিল্প এবং বাণিজ্য-শিল্পকে এক পংক্তিতে এনে ফেলেছিলেন। এ দিনও সেখানেই রইলেন। বললেন, রীতিমতো ব্যাখ্যা দিয়ে, “নাচ-গান-যাত্রা এ সব কি শিল্প নয়? এটাও তো বড় শিল্প। উৎসবের মধ্যে দিয়েও আর্থিক উন্নয়ন ঘটে। অনেকে জিনিসপত্র বিক্রি করেন। তাই এর একটা বাণিজ্যিক মূল্যও রয়েছে।”
কিন্তু কোষাগারে যেখানে টাকা নেই, বাণিজ্য-শিল্পের (অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে যে শিল্পের কোনও বিকল্প নেই) কোনও দেখা নেই, তখন এত ঢালাও উৎসব করার যুক্তি কী? প্রশ্নটা অনেকের মতো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও তুলেছিলেন, রবিবারেই।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিপক্ষের নাম না করে বললেন, “আসার সময়ে মুকুল (দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়) বলল, কে এক জন নাকি বলছেন, সরকারের টাকা নেই, আর উৎসব করা হচ্ছে! তাঁদের বলি, আমরা উৎসব করব না তো কি শ্রাদ্ধ করব? শকুনের ভাগাড় তৈরি করব? ওঁরা ক্যাডার-ভাতা দিতেন। ক্যাডারদের পকেটে টাকা ঢুকেছে।” বাম জমানার তুলনা টেনে তাঁর বক্তব্য, “উৎসব তো আগেও হত। তবে তাতে প্রাণ ছিল না। আমাদের উৎসবে প্রাণ রয়েছে। উৎসব তাকেই বলি, যেখানে আত্মায় আনন্দ মেশে। নাচ-গান যাত্রা সেখানেই।” সোমবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে উত্তরবঙ্গ উৎসবে দাঁড়িয়ে এত বলার পরে মমতার কথা, “যদি খুশি দিই, তবে ক্ষতি কী?”
উত্তরবঙ্গ উৎসবে রং-তুলি হাতে মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু কতটা খুশি দিতে পারছে তাঁর সরকার? শিল্পমহল বলছে, মুখে লগ্নি টানার কথা যতই বলুন, মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর সরকারের শিল্প-নীতি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে। সরকারের জমি-নীতিও স্পষ্ট নয়। সঙ্গে যোগ হয়েছে অস্থির পরিবেশ ও দলীয় জুলুমবাজি। পরের পর ঘটনায় রাজ্যের ভাবমূর্তি নিয়ে নেতিবাচক বার্তা গিয়েছে শিল্পমহলের কাছে। তাই দিল্লির শিল্প সম্মেলন বা হলদিয়ায় ‘বেঙ্গল লিডস’ কোনও ক্ষেত্রেই বড় শিল্পপতিদের দেখা মেলেনি। মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলনও পিছনো হয়েছে মাটি উৎসবের জন্য। ফলে সরকারের মুখের কথা ও সদিচ্ছা নিয়ে রীতিমতো সংশয় তৈরি হয়েছে শিল্পমহলের কাছে।
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারের কাছে শিল্পের থেকে উৎসবের গুরুত্ব বেশি? শিল্পের সংজ্ঞা নিয়ে মমতার অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। গত নভেম্বর তিনি প্রথম ক্ষুদ্র শিল্প ও কলা শিল্পকে একাসনে বসিয়েছিলেন। সেই থেকে এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ধোঁয়াশা এবং কৌতুকের জন্ম দিয়েছে। ধন্দ আরও বাড়ে যখন হলদিয়ায় শিল্পপতিদের তিনি গান গাওয়ার অনুরোধ করেন।
দুই শিল্পকে এক করে ফেলা নিয়ে মমতাকে বিঁধেছেন কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ। বলেছেন, “কোনটা শিল্প (ইন্ডাস্ট্রি) আর কোনটা কলা, তা ওঁর বোধের বাইরে। মা-মাটি-মানুষের তিন ম এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে মিছিল, মহোৎসব এবং মারপিট।” একই সঙ্গে উৎসব প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “শ্রাদ্ধও কিন্তু উৎসব! আগেকার দিনে মুনি-ঋষিরা নিজের শ্রাদ্ধ নিজে করতেন। উনিও তেমনই করছেন।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, “এই ধরনের মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। রাজ্যের জমা-খরচের হিসাব যে মিলছে না, এই প্রতিক্রিয়া থেকেই তা স্পষ্ট।”
মুখোমুখি মান্তু ও মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার কাঞ্চনজঙ্ঘার মঞ্চে।
শুধু উত্তরবঙ্গই নয়, গত দেড় বছরে আরও বেশি কিছু উৎসব হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে উৎসবের সংখ্যা। যে তালিকায় নতুন সংযোজন মাটি উৎসব। এই সবের জন্য প্রয়োজনীয় টাকার অধিকাংশই আসছে রাজ্য কোষাগার থেকে। যোজনা কমিশনের আশঙ্কা, পরিকল্পনা খাতের টাকা ঘুরপথে এখানে খরচ হচ্ছে। এই আশঙ্কা থেকেই রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট চাইবে তারা। লাগামহীন ধার নেওয়ার জেরে আর্থিক বছর শেষ হওয়ার আগেই ধার নেওয়ার সীমাও প্রায় শেষের মুখে। জানুয়ারি মাসে ৮০০ কোটি টাকা বাজার থেকে তোলার পরে এই ধার দাঁড়িয়েছে ১৭,৩০০ কোটি টাকায়।
রাজনীতির কারবারি থেকে অর্থনীতিবিদ, সকলেই বলছেন, এই ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর ‘খুশি’ বিতরণের দায় মেটাতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে।

উৎসব করব না তো কি শ্রাদ্ধ করব? শকুনের ভাগাড় তৈরি করব?
শিলিগুড়িতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মেলার ছলে
• ক্লাবকে অনুদান ৪০ কোটি
• সুন্দরবন কাপে খরচ ১.১৮ কোটি
• জঙ্গলমহল কাপে দলকে অনুদান ৪.৫ কোটি
• বিবেক উৎসব ও বিশ্ব যুব উৎসব ১৫ কোটি
• মাটি উৎসব ১ কোটি
• কৃষি মেলা ৩ কোটি
* সূত্র: অর্থ দফতর

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.