তিন কন্যাসন্তানকে খুন, যাবজ্জীবন সাজা হল বধূর
রপর তিন মেয়ের মৃত্যু হয়েছিল অস্বাভাবিক ভাবে। তৃতীয় মেয়েটির মৃত্যুর পরে ঘটনাচক্রে তদন্তে নামে পুলিশ। ‘কন্যাসন্তান’ হওয়াতেই খুন এমন অভিযোগেই গ্রেফতার করা হয় মাকে। মেয়েকে খুনের দায়ে মা সুমন অগ্রবালকে সোমবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বারাসত আদালত। কন্যা-ভ্রুণ নষ্টের প্রবণতার কারণে যখন নারীর অনুপাত কমে যাওয়া নিয়ে এত প্রচারাভিযান চলছে, তখন প্রত্যন্ত গ্রামে নয় এমন ঘটনা ঘটেছে খাস কলকাতার বুকেই।
ঘটনায় শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর প্ররোচনা ছিল না বলেই তদন্তে জেনেছে পুলিশ। এমনকী, সুমনের শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা ছিল না বলেও জানা গিয়েছে। মামলার সরকারি কৌসুঁলি রণজিৎ সাহা বলেন, “স্রেফ মেয়ে বলেই তিনটি বাচ্চাকে খুন করা হয়। পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণও তেমনই বলছে।”
আদালতের নানা প্রশ্নের জবাবে কেবল ‘আমি নির্দোষ’ ছাড়া আর কিছু বলেননি বছর পঁচিশের সুমন। ছাপা শাড়ি আর চাদর গায়ে দোহারা চেহারার বধূটি এ দিনও আদালতে ছিলেন ভাবলেশহীন মুখে। বারাসত আদালতের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক শাব্বার রশিদি যাবজ্জীবনের রায় শোনানোর পরে অবশ্য নিজের বাবার কোলে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুমন। বাবাকে আঁকড়ে বলে ওঠেন, “আমি আর জেলে থাকব না, বাড়ি যাব। আমি তোমাকে ছাড়ব না বাবা।”
আদালতে সুমন।—নিজস্ব চিত্র
পুলিশ সূত্রের খবর, বছরকয়েক আগে কলকাতার বড়বাজারের রূপচাঁদ রায় স্ট্রিট থেকে বাগুইআটি থানার জ্যাংড়ার মণ্ডলপাড়ার সুখেন মণ্ডলের বাড়িতে দুই মেয়েকে নিয়ে ভাড়া আসেন সুমন ও পবন অগ্রবাল। ২০১০-এর ৯ সেপ্টেম্বর মারা যায় তাঁদের ছোট মেয়ে বছর আড়াইয়ের রাধিকা। ২০১০-এর ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ অফিসে বেরিয়ে যান পবন। সুমন ও দম্পতির সাড়ে তিন বছরের মেয়ে তুলসী তখন বাড়িতেই ছিল। চার্জশিটে বলা হয়েছে, ১০টা নাগাদ সুমন স্বামীকে ফোন করে বলেন, “তুলসী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ঘন-ঘন শ্বাস ফেলছে।” সঙ্গে সঙ্গেই অফিস থেকে বাড়ি ফিরে স্থানীয় দেশবন্ধুনগর হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে যান পবন। চিকিৎসকেরা জানান, তার আগেই মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে এই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করে বাগুইআটি থানার পুলিশ। ময়না-তদন্তে ধরা পড়ে, শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে তুলসীকে। এর পরেই পুলিশ নিজে থেকে (সুয়োমোটো) খুনের মামলা দায়ের করে। তদন্তে জানা যায়, রাধিকারও ঠিক একই ভাবে মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ডাক্তার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এ অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করেননি। পুলিশ আরও জানতে পারে, প্রকৃত পক্ষে অগ্রবাল দম্পতির তিন মেয়ে। ২০০৯-এ তাদের আর এক মেয়েও মুখে রক্ত উঠে মারা গিয়েছিল। তিনটি মৃত্যুর ক্ষেত্রেই ঘরে সুমন ছাড়া আর কেউ ছিলেন না বলেও জানতে পারে পুলিশ। এর পরেই সুমন গ্রেফতার হয়। ২০১১-র এপ্রিলে সুমনের নামে খুনের চার্জশিট দেয় পুলিশ। মামলা শুরু হয় বারাসত আদালতে।
সরকারি কৌঁসুলি জানান, এই মামলায় পবন ছাড়াও, চিকিৎসক, পড়শি-সহ মোট ১১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। পবন আদালতে জানান, মেয়েদের উপরে ‘অত্যাচার’ হচ্ছে বলে তিনি কিছুটা আঁচ করলেও এমন ‘ভয়ঙ্কর ঘটনা’র কথা ভাবতে পারেননি। জ্যাংড়ায় অগ্রবাল দম্পতির পড়শিরাও আদালতে জানান, নানা কারণে বিরক্ত হয়ে মেয়েদের মারধর করতে দেখা যেত সুমনকে। রায় শুনে ভেঙে পড়া সুমনের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে তাঁর বাবা বলছিলেন, “কাঁদিস না। নিজের মেয়েকে কি কেউ খুন করতে পারে? আরও বড় আদালতে যাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.