মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাই সার
শুরুই হয়নি অ্যানিকেতের কাজ
ংসাবতীর উপর অ্যানিকেত তৈরিতে জোর দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্য সভায় তিনি ঘোষণা করেছেন, দ্রুত গতিতে অ্যানিকেতের কাজ হবে। অথচ এখনও সেই কাজ শুরুই করা যায়নি। সেচ দফতর জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষে কাজ শুরু করা যেতে পারে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প রূপায়িত হলে উপকৃত হবেন কয়েক লক্ষ মানুষ। কয়েক হাজার একর জমিতে গ্রীষ্মেও সেচের সুবিধে পাওয়া যাবে।
কাজ শুরুতে দেরি হচ্ছে কেন?
সেচ দফতর জানিয়েছে, অ্যানিকেত বাঁধ করতে হলে ‘শিট পাইল’ করতে হবে। যে সংস্থা থেকে তা কেনার কথা, বেশ কিছু দিন ধরে তার উৎপাদন বন্ধ ছিল। সেচ দফতরের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সুবীর লাহা বলেন, “এ বার উৎপাদন শুরু হয়েছে। আশা করছি, চলতি মাসের শেষেই কাজ শুরু হযে যাবে। ২০১৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে।”
অ্যানিকেত হল কংসাবতী নদীর একটি সেচ বাঁধ। মেদিনীপুর শহর ঘেঁষা মোহনপুরের কাছে এই বাঁধ ব্রিটিশ আমলে তৈরি। বাঁধটি প্রথম ভাঙে ২০০৭ সালে। প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই সেই বাঁধ ভাঙে বলে অভিযোগ। মূলত, বালি তোলা এবং বাঁধের উপর দিয়েই বালি বোঝাই গাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁধটি ভেঙে যায়।
কংসাবতীর উপর অ্যানিকেত বাঁধ। পুরনো এই স্লুইস গেটের
সামনেই নতুন গেট তৈরি হওয়ার কথা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
বালি তুলে নেওয়ায় বাঁধের নীচের অংশ আলগা হয়ে যায়, আর বালি বোঝাই গাড়ি চলাচলের জন্য ব্রিটিশ আমলে একাধিক কুয়োর উপর তৈরি বাঁধটি ধীরে ধীরে বসে যেতে থাকে। ফলে, বর্ষায় জলের তোড়ে সহজেই ভাঙে এই অ্যানিকেত। প্রশাসন বালি তোলা বন্ধে যেমন উদ্যোগী হয়নি, তেমন বাঁধের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচলেও নিষেধজ্ঞা জারি করেনি। ভাঙার পর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কয়েকবার সংস্কারও করা হয়। ফের পরের বর্ষায় ভেঙে যায়! এভাবেই অর্থ খরচ হয়, কিন্তু উপকার মেলে না।
কংসাবতীর এই বাঁধের উপকারিতা অপরিসীম। কারণ, বর্ষা ছাড়া কাঁসাইয়ে জল থাকে না। আর বর্ষায় সেই নদীই দুকূল ছাপিয়ে ভাসিয়ে দেয় মেদিনীপুর সদর ব্লক, কেশপুর ও ডেবরার বিস্তীর্ণ অঞ্চল, গ্রীষ্মে তা শুকিয়ে ধূ ধূ মাঠ। তাই বাঁধ দিয়ে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমল থেকেই। পাশ দিয়ে বের করা হয়েছিল ক্যানালও। এই ধরে রাখা জল থেকেই মেদিনীপুর সদর ব্লক, কেশপুর, খড়্গপুর ১ ও ২ ব্লক, পিংলা এবং ডেবরার একাংশ সেচের উপরেও নির্ভরশীল। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বাঁধের জল থেকে ৮৭ হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়া যায়। আগে যা হত। উপকৃত মানুষের সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৫ হাজার।
এর বাইরে রয়েছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই নদীই খড়্গপুর ও মেদিনীপুর শহরের একমাত্র পানীয় জলেরও উৎস। নদী থেকে পাম্পের মাধ্যমে জল তুলে দুই শহরে সরবরাহ করে পুরসভা। খড়্গপুর আইআইটিও এই নদী থেকেই জল নেয়। অ্যানিকেত ভেঙে যাওয়ায় গত কয়েক বছর গ্রীষ্মে নদীতে একেবারেই জল থাকে না। ফলে জলস্তরও নেমে যায়। পাম্প দিয়ে জল তোলাও সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। দুই শহরের পাম্পগুলি থেকে জল ওঠে কম। শহরের কুয়োগুলিও শুকিয়ে যায় কিংবা জল নেমে যায় একেবারে নীচে। দ্রুত অ্যানিকেত সংস্কার না হলে ভবিষ্যতে যে সমূহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে তা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। তাই বাঁধ সংস্কারের জোরালো দাবি ওঠে সব মহল থেকেই। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এ বার মজবুত ভাবে বাঁধ তৈরি করা হবে। আর তা করতে গেলে প্রায় ৫০০ মিটার বাঁধ তৈরি করা প্রয়োজন। তার জন্য ১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে সরকার।
গত বছরই অর্থ বরাদ্দ হয়ে যায়। কিন্তু এখনও বাঁধ তৈরি শুরু হয়নি। আবার জুন মাস এলেই বর্ষা। স্বাভাবিক ভাবেই বর্ষায় কাজ বন্ধ থাকবে। যদিও সেচ দফতর জানিয়েছে, ২০১৪ সালের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। অর্থাৎ আরও দু’টি গ্রীষ্মে শহরের মানুষকে যেমন পানীয় সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হবে, তেমনই সেচের সমস্যায় পড়তে হবে চাষিদেরও। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, কাজ শুরু করতেই যা দেরি করা হচ্ছে তাতে আদৌ কি ২০১৪ সালেই বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হবে। নাকি আরও বেশি দিন দুর্ভোগ পোয়াতে হবে দুই শহরের শহরবাসী ও বিভিন্ন ব্লকের ২ লক্ষ ৬৫ হাজার মানুষকে। সময়েই মিলবে জবাব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.