|
|
|
|
যখন ঘাড়ে এসে পড়ল থাবা |
শুভঙ্কর মণ্ডল
(প্রতিবেদক হাকিমপাড়ার বাসিন্দা) |
বাঘে ছুঁলে যেন কত ঘা!
ঘাড়ে যেন গেঁথে গিয়েছে ছুরি। কানের কাছে ঘড়ঘড়ে গলায় হুঙ্কার। নাকে আসছে বোঁটকা গন্ধ। ছোঁওয়া টোওয়া নয়, চিতাবাঘে ধরেছে আমায়।
আর সে কী ওজন তার! যখন ঘাড়ে পড়ল, সঙ্গে সঙ্গে আমি ছিটকে মাটিতে। ৬০-৭০ পা দূরেই আমার বাড়ি। হাঁচোড়পাঁচোড় করছি। বুঝতে পারছি না, ওই ক’টা পা আর ফেলতে পারব কি না!
ঠিক তখনই আবার। এ বার ডান হাত, বুকের কাছে থাবা মারল বাঘটা। যন্ত্রণা করছে। তার মধ্যেই কেঁপে উঠলাম। শিরদাঁড়া দিয়ে নীচের দিকে একটা স্রোত নামছে। ঠান্ডা। বাঘটার কান দু’টো মাথার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। লেজটা ছটছট করে বাড়ি মারছে। এ বার বুঝি টুঁটি ছিড়ে নেবে। আর
রক্ষে নেই! মনে হল, সময় ঘনিয়ে এসেছে আমার।
দিব্বি ছিলাম সকালে। বেলা ৯টা নাগাদ বিছানা ছেড়েছি। আয়েস করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে-দিতেই শুনছিলাম, পাড়ায় শোরগোল, ‘বাঘ ঢুকেছে’। আমাদের এলাকায় বাঘ আসাটা একটু অস্বাভাবিক। ঘনবসতি। তা ছাড়া, আগে কখনও শুনিনি এলাকায় বাঘ-টাঘ ঢুকেছে বলে। মনে হল, বড়জোর বনবিড়াল হবে। লোকে সেটাকেই রং চড়িয়ে বাঘ বলছে। দেখতে যাব কি যাব না ভাবতে-ভাবতেই আমি রাস্তায়, চার-পাঁচ
জন পাড়ার বন্ধুর সঙ্গে। আমাদের বাড়ির পরে দু’টো বাড়ি পেরিয়ে শম্ভু পালের বাড়ি। তার গায়ে কলাবাগান। সবাই বলছিল, চিতাবাঘটা সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে। বেলা সাড়ে৯টায় কলাবাগানের পাশে ভিড়। ক্রমশ বাড়ছে। তবে কলাবাগান অবধি পৌঁছতে হল না। তার আগেই হইচই, ‘বেরিয়েছে, বেরিয়েছে’। বোঝার আগেই দেখি, হলুদ-বাদামি চিতাবাঘ লাফাতে লাফাতে আসছে আমাদের দিকে। আরও ঠিক করে বললে, যেন আমাকেই তাক করেছে ও। এখুনি পালাতে হবে। বাড়ির দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছুট লাগিয়েছি। কিন্তু দু’তিন পায়ের বেশি যেতে হল না। ঘাড়ে এসে পড়ল চিতাবাঘ। মারল থাবা। ঘাড়ে যেন ছুরি বিঁধে গেল! |
জখম শুভঙ্কর। —নিজস্ব চিত্র |
ঘাড়ের চামড়া ফালা। মাটি ছেড়ে যখন উঠলাম, রক্ত গড়িয়ে নামছে পিঠ দিয়ে। মাথাটা কেমন যেন ফাঁকা! গায়ে যত জোর ছিল তা দিয়েও যেন পা দু’টোকে টানতে পারছি না।
৭০-৬০-৫০ পা। বাড়ির দরজাটা একটু একটু করে বড় হচ্ছে। এগোচ্ছি আর ভাবছি, যদি ফের ঘাড়ে এসে পড়ে থাবা!
৩০-২০-১০ পা। অনেকগুলো মুখ। সবাই কী যেন সব বলছে! কান ভোঁ-ভোঁ করছে। বাড়ির দরজা খোলা। মা ছুটে আসছে। পিসিও।
তার পর সব অন্ধকার।
চোখ খুললাম, হাসপাতালের পথে। ঘাড়, পিঠ, হাত, বুকে যন্ত্রণা। সব ক’টা জায়গা থেকেই রক্ত ঝরছে...।
ফের হুঁশ ফিরল যখন ডাক্তারবাবু চোখের পাতা ধরে টানছেন। বেডের পাশে মা, বাবা, বোন দাঁড়িয়ে। মুখগুলো শুকনো। ওরাই বলল, চিতাবাঘটা ধরা পড়েছে।
আমি তখন ঘা গোনার চেষ্টা করছি। |
|
|
|
|
|