স্বাধীনতা-উত্তর কালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য যে ভাতার ব্যবস্থা ছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বামফ্রন্ট সরকার এই ভাতা চালু করে। ভাতা বন্ধ করার যুক্তি হিসাবে কয়েক জন মন্ত্রী বলেছেন, সি পি এম ক্যাডারদের এই ভাতা দেওয়া হচ্ছিল, তাই তাঁরা এটি বন্ধ করছেন।
’৬৮ থেকে ’৭৭-এর মধ্যে প্রায় ছ’বছর জেলে ছিলাম। কিছু দিন পি ডি অ্যাক্ট-এ, কিছু দিন বিচারাধীন বন্দি হিসাবে। সহবন্দিরা অনেকেই কোনও দলভুক্ত ছিলেন না। গোপীবল্লভপুরে ’৬৯-এর কৃষক অভ্যুত্থানের পর প্রায় হাজার মানুষ গ্রেফতার হন, তাঁরা তিন/চার/পাঁচ বছর পর্যন্ত বিচারাধীন হিসাবে জেলে ছিলেন। এঁরা দরিদ্র কৃষক, দলিত ও আদিবাসী, যাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না। ১৯৭০-এর ১৬ ডিসেম্বর মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে গুলি চলে, বেশ কিছু কৃষক মারা যান। বামফ্রন্ট সরকার স্থির করে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে যাঁরা ছ’মাসের বেশি জেল খেটেছেন বা যাঁদের অঙ্গহানি ঘটেছে, তাঁদের আয় বছরে ছ’হাজার টাকার কম হলে ভাতার জন্য বিবেচিত হবেন। |
মেদিনীপুর-সহ নানা জেলার জেল-খাটা মানুষদের ভাতার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করি। কিছু মানুষ ভাতা পান। সকলে পাননি, তার কারণ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত জেলে থাকার প্রমাণপত্র দেখানোর প্রশ্নে কড়া মনোভাব নেন। জেল কর্তৃপক্ষ সবাইকে জেলবন্দির সার্টিফিকেট দেননি। অনেক ক্ষেত্রে বলেন, পুরনো রেকর্ড হারিয়ে গেছে। দফতরের গড়িমসির জন্য সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও কিছু দরখাস্ত মঞ্জুর হয়নি। গোপীবল্লভপুর এলাকার প্রায় ২৫০ আবেদনকারীর পক্ষে মামলা দায়ের করি কলকাতা হাইকোর্টে। হাইকোর্ট দ্রুত ভাতাদানের নির্দেশ দেন।
বর্তমান রাজ্য সরকার রাজনৈতিক ভাবে নির্যাতিতদের ভাতা বন্ধ করে ঠিক করেনি। তাদের উচিত ছিল ওই ভাতা চালু রাখা ও ’৭৭-এর পরে যাঁরা নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে ছ’মাসের বেশি কারারুদ্ধ হন, তাঁদেরও ভাতার আওতায় আনা। সন্তোষ রাণা। কলকাতা-৭৮ |