গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’ যে কলিকাতায় হইবে না, আগরায় হইবে, তাহা আনন্দ শর্মা বহু পূর্বেই জানাইয়া দিয়াছিলেন। কাজেই, সেই সম্মেলনে দেশবিদেশের বিনিয়োগকারীদের সম্মুখে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বক্তৃতা করিতেছেন, সেই ছবি দেখিয়া পশ্চিমবঙ্গবাসীর হৃদয় ফুঁড়িয়া তীব্র দীর্ঘশ্বাস বাহির হইতে পারে, কিন্তু তাহাকে আকস্মিক আঘাত বলা যাইবে না। বস্তুত, ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের শোকসভার রূপক। রাজ্যবাসীর দীর্ঘশ্বাস শোকসভার আবেগমাত্র, প্রিয়জনের মৃত্যুকে পাকাপাকি ভাবে মানিয়া লওয়ার বিষাদ। অখিলেশ যাদব যখন শিল্পপতিদের আশ্বাস দিতেছিলেন যে তাঁহার রাজ্যে সরকারি সহযোগিতার কোনও অভাব হইবে না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন কলিকাতা বইমেলার অকালবোধনে ব্যস্ত ছিলেন। মহানগরীর বইমেলা ফুরাইলেই পানাগড়ে ‘মাটি উৎসব’ তাঁহার অপেক্ষায় থাকিবে। পশ্চিমবঙ্গের শোকসভায় মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি লক্ষণীয়।
আনন্দ শর্মা যখন সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে এই সম্মেলনটি কলিকাতার পরিবর্তে আগরায় হইবে, তিনি একটি কারণ দর্শাইয়াছিলেন: যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন, সেই রাজ্যের রাজধানীতে বিদেশি লগ্নিকারীদের লইয়া যাওয়ার ঝুঁকি কেন্দ্রীয় সরকার লইতে পারে না। সম্মেলনটি যে রাজ্যে গেল, সেই রাজ্যের শাসক দলও খুচরা ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবল বিরোধী। কিন্তু অখিলেশ যাদবের সহিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্থক্য প্রথম জন দলীয় রাজনীতি এবং রাজ্যের স্বার্থরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রাখিতে জানেন, দ্বিতীয় জন জানেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উৎকৃষ্ট দলীয় রাজনীতিক, কিন্তু ব্যর্থ প্রশাসক। কোথায় রাজ্যের স্বার্থে দলীয় রাজনীতিকে ছাড়িতে হয়, সেই বিবেচনা তাঁহার নাই। তিনি প্রমোদে মন ঢালিয়া দিয়াছেন। মাটি উৎসবে অংশগ্রহণ করিবেন বলিয়াই তিনি মুম্বইয়ে প্রস্তাবিত শিল্প-সম্মেলন পিছাইয়া দিয়াছেন। শিল্প অপেক্ষা করিতে পারে, কিন্তু উৎসব এখনই চাই।
কলিকাতার এক বণিক সভার প্রধান হতাশ গলায় বলিয়াছেন, যে কোনও শিল্প সম্মেলনেই কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে এমন কি কিছুই বলিবার আছে, যাহা আকর্ষণীয় হইবে? পশ্চিমবঙ্গের শিল্পনীতি কী? মাটি উৎসবে এই প্রশ্নগুলির বালাই নাই। সম্ভবত সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী শিল্প সম্মেলন অপেক্ষা মাটি উৎসবে অধিক আগ্রহী। কিন্তু, কেন শিল্পপতিরা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করিতে আগ্রহী হইবেন সেই প্রশ্নের সদুত্তর মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে হইবে। অবিলম্বে। বিনিয়োগকারীরা কী চাহেন, তিনি এত দিনে নিশ্চয়ই জানেন। সেই চাহিদা অন্যায় নহে। সেই চাহিদা পূরণ না করিবার জেদ অন্যায়। রাজ্যবাসীর প্রতি অন্যায়। তাঁহার দল আজ ক্ষমতায়, আগামী কাল হয়তো তাহার লেশমাত্র থাকিবে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থাকিবে। তাহার সর্বাঙ্গে কুশাসনের ক্ষত থাকিবে। এই অন্যায় করিবার অধিকার মুখ্যমন্ত্রীর নাই। তিনি নিজেকে বদলান। এখনই। |