|
|
|
|
অখিলেশ পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন, খুশি কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনাকে ষোলো আনা কাজে লাগালেন অখিলেশ যাদব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলদিয়ায় ‘বেঙ্গল লিড্স’ করেছেন। কিন্তু আগাম ঘোষণা করেও সেখানে রাজ্যের নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করতে পারেননি। সরকারের দিশা জানতে না-পেরে শিল্প মহল স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু আগরায় ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’-এ নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতি ঘোষণা করে দিলেন।
স্বচ্ছ শিল্পনীতির সঙ্গে বিনিয়োগের অন্যতম শর্ত সড়ক পরিকাঠামো ও বিমানবন্দর। অখিলেশ রাজ্যের সড়ক ব্যবস্থার উন্নতিতে ২৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। যে প্রকল্পে লখনউ ও আগরার মধ্যে একটি এক্সপ্রেসওয়ে হবে। আগরা ও কুশীনগরে দু’টি নতুন বিমানবন্দরের কথাও ঘোষণা করেছেন অখিলেশ। তাঁরা ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে শ’খানেক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের ক্ষমতার আস্ফালনেও রাজ্যের মানুষ বিরক্ত। সমাজবাদী পার্টির শীর্ষনেতা মুলায়ম সিংহ যাদব এবং তাঁর পরিবারের লোকেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী হাওয়া ঘোরাতে উন্নয়নকেই অস্ত্র করতে চেয়েছেন মুলায়ম-পুত্র। সওয়ার হয়েছেন মমতার জেদে কলকাতা থেকে আগরায় সরে আসা আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলনে।
মমতা যখন দিল্লিতে তাঁর শিল্প সম্মেলনে কোনও বড় মাপের শিল্পপতিকে হাজির করতে পারেননি, ‘বেঙ্গল লিড্স’ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে, মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলন স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছেন আগরায় তখন প্রায় ৪৫টি দেশের শিল্পসংস্থার ভিড়। সেখানে বসেই ভারত-মার্কিন বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি রন সমার্স ঘোষণা করেছেন, মার্চে মার্কিন লগ্নিকারীদের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল উত্তরপ্রদেশে আসছেন। রাজ্যের কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে লগ্নি করতে মার্কিন সংস্থাগুলি আগ্রহী। শুধু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রেই অন্তত ১৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সে বিষয়ে কথাবার্তা পাকা করতেও মার্কিন প্রতিনিধি দলটি উত্তরপ্রদেশে আসবে। শিল্প সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা বণিকসভা সিআইআই-এর ডিজি চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানান, বিদ্যুৎ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়াও শিল্পনীতি তৈরিতে উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন তাঁরা।
ইউপিএ সরকারের সঙ্গে তৃণমূলের ভাঙনের পরে পার্টনারশিপ সামিট আগরায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে পথে নামেন, সে রাজ্যে বিদেশি লগ্নিকারীদের নিয়ে যাওয়া নিরাপদ নয়। মুলায়মের দলও এফডিআই-এর বিরোধী। কিন্তু তারা সেই প্রতিবাদকে চরম জায়গায় নিয়ে যায়নি। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিশ্রুতিতে চিঁড়ে ভেজে না। শিল্পমহল চায় কাগজে-কলমে নির্দিষ্ট নীতি। শুধু শিল্পনীতি ঘোষণা না-করা নয়, জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন প্রত্যাহার না-করে নিজের পছন্দমতো ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন মমতা। যা নিয়ে শিল্পমহলের ঘোর আপত্তি।
কিছু দিন আগেই দিল্লিতে পর্যটনে বিনিয়োগের আহ্বান জানাতে এসে রাস্তার হাল নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে। আগরায় কিন্তু শিল্প মহলের চাহিদা মেপেই তাস ফেলেছেন অখিলেশ। ঘোষণা করেছেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। ব্যাখ্যা করেছেন নতুন পরিকাঠামো ও শিল্প বিনিয়োগ নীতিও। সরকার কোথায়, কী ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেবে, তা জানিয়েছেন। ৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে রাজ্য সরকার যে আরও ছাড় দিতে আগ্রহী, তা-ও জানান। ইনফোসিসকে এসইজেড তকমা না-দেওয়ার জন্য ধনুক ভাঙা পণ করেছেন মমতা। আর অখিলেশের ঘোষণা, ‘ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং ইনভেস্টমেন্ট জোন’ তৈরি হবে রাজ্যে। নির্দিষ্ট শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট পরিকাঠামো গড়তে টাকা ঢালবে সরকার। |
|
|
|
|
|