কলকাতা মেট্রো এলাকায় ‘গরিব’ বাসিন্দাদের জন্য কম দামে সেট-টপ বক্স ও চ্যানেল দেখার প্যাকেজের প্রস্তাব দিল মাল্টি সার্ভিস অপারেটরেরা (এমএসও)। সোমবার মহাকরণে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করে এই প্রস্তাব দেন এমএসও সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা। কিন্তু কী ভাবে তা করা হবে, ‘গরিব’রা তা কতটা গ্রহণ করছেন, কত শতাংশ টিভিতে বক্স লাগানোর কাজ হয়েছে, তা রাজ্য সরকার নিজেই সমীক্ষা করে দেখবে। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সব অ্যানালগ সিগন্যাল একতরফা বন্ধ করা হলে এমএসও-দের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে মন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন।
ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই সব ক’টি অ্যানালগ চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হবে। তার বদলে সম্পূর্ণ ডিজিটাল সম্প্রচার চালু হবে। দিল্লিতে ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টার্স ফাউন্ডেশনের (আইবিএফ) সদর দফতর থেকে গত সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে কলকাতায় মোট ৯টি এমএসও সংস্থা তড়িঘড়ি এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য সোমবার দুপুরে বৈঠকে বসে। বেলা তিনটে নাগাদ তারা মহাকরণে নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যায়।
পরে এমএসও-রা সাংবাদিকদের জানায়, রাজ্য সরকারের অনুরোধে গরিব বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ৭৯৯ ও ৯৯৯ টাকার দুই ধরনের সেট-টপ বক্সই ৪৫০ টাকায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এ ছাড়া, বাংলা-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার বিনোদন, সিনেমা, খেলাধুলো ইত্যাদি নির্দিষ্ট ৭৫টি চ্যানেল ৭৫ টাকার ভাড়ার প্যাকেজ এই বক্সের সঙ্গে দেওয়া হবে। চ্যানেলের ভাড়ার সঙ্গে রাজ্য সরকারকে দেয় ১০ টাকা প্রমোদকর এবং ১২.৩৬ শতাংশ হারে পরিষেবা কর যুক্ত হবে। তিন মাস পর পর নির্দিষ্ট চ্যানেল অদলবদল হতে পারে বলে তারা জানায়।
কিন্তু কারা ‘গরিব’, জানা যাবে কী ভাবে? এর জবাবে সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে মন্থন কেব্লের ডিরেক্টর সুদীপ ঘোষ এবং সিটি কেব্লের ডিরেক্টর সুরেশ শেঠিয়া জানান, তাঁরা শহরের বিপিএল বাসিন্দাদের কার্ড দেখে কম দামের প্যাকেজ দেবেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, বিপিএল তালিকাভুক্ত হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত বাড়িতে টেলিভিশন না-থাকা। এর জবাবে বক্তারা জানান, কোন পূর্বশর্ত মেনে কী ভাবে কারা বিপিএল কার্ড পেয়েছেন, তা দেখা এমএসও-র কর্তব্য নয়। দারিদ্রের যে কোনও একটি মাপকাঠি ধরে নেওয়ার জন্য বিপিএল কার্ডের কথা ভাবা হয়েছে।
এমএসওদের প্রস্তাব নিয়ে মহাকরণে অবশ্য নগরোন্নয়ন মন্ত্রী সরকারি ভাবে কিছু বলতে চাননি। পরে সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রী বলেন, “একতরফা ভাবে অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত মানি না। আমরা দেখব, গরিব মানুষেরা এমএসও-দের প্রস্তাব কতটা গ্রহণ করছেন। তা ছাড়া, আজ আমার কাছে যে সব এমএসও এসেছিল, তাদের মধ্যে দু’টো মত আছে। একদলের বক্তব্য ৯৫ শতাংশ টিভিতেই সেট-টপ বক্স লাগানো হয়ে গিয়েছে। আর এক দল বলছে ৫০ শতাংশ। সেটাও সরকার বিচার করে দেখবে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন যদি অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে এখানে ব্যবসা করা মুশকিল হবে।”
কিন্তু এমএসও সংস্থাগুলি জানায়, দিল্লি, মুম্বই বা সিঙ্গাপুর থেকে অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ করে শুধু ডিজিটাল সিগন্যাল চালানো হলে এমএসও-দের পক্ষে কলকাতা থেকে যান্ত্রিক ভাবেই অ্যানালগ সিগন্যাল চালানো সম্ভব হবে না।
অন্য দিকে, মহাকরণে নগরোন্নয়ন দফতরের এক সূত্র জানান, সংসদে পাশ হওয়া কেন্দ্রীয় আইন মেনেই সর্বভারতীয় চ্যানেলগুলি সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রক্রিয়া চালু করছে। এর মধ্যে সরাসরি রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। তবে, রাজ্যের বাধার ফলে এত দিন এমএসও এবং অপারেটরেরা অনেক সময় পেয়েছেন সেট-টপ বক্স লাগানোর জন্য। এমএসও-রাও সরকারকে জানিয়েছে, ৯৫ শতাংশেরও বেশি বক্স লাগানো হয়ে গিয়েছে মেট্রো এলাকায়। বাকি ছিলেন ‘গরিব’ দর্শকেরা। নতুন প্রস্তাবের ফলে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বাকি পাঁচ শতাংশও সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। |