আজ মঙ্গলবার ঋণনীতির পর্যালোচনায় বসছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার এক দিন আগে শিল্প ও শেয়ার বাজার মহল ফের সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল করলেও, শীর্ষ ব্যাঙ্কের তরফে তেমন কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি। বরং সব বিকল্প খোলা রেখেও ফের সাবধানে পা ফেলার কথাই বলেছে তারা।
মূলধনী বাজার মহলের আশা, ২৫-৫০ বেসিস পয়েন্ট কমতে পারে রেপো রেট। বিশেষজ্ঞদের কারও কারও মত আবার উল্টো। ঋণনীতি ফিরে দেখার চব্বিশ ঘণ্টা আগে সোমবারও অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার সমীক্ষায় জানিয়েছে, সমস্ত বিকল্পই খতিয়ে দেখছে তারা। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির চড়া হার এবং বাড়তে থাকা রাজকোষ ও বৈদেশিক ব্যণিজ্য ঘাটতি এখনও ঝুঁকির কারণ। এই পরিস্থিতিতে সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যে যথেষ্ট কঠিন, এ দিন সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে প্রকাশিত সমীক্ষা ‘রিপোর্ট অন ম্যাক্রোইকনমিক অ্যান্ড মানিটারি ডেভেলপমেন্টস’-এ সে কথাই জানিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের করানো এই সমীক্ষায় চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৫.৬% থেকে কমে ৫.৫ শতাংশে দাঁড়াবে বলে জানানো হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ দর্শিয়ে সুদ কমানোর আশায় এ মাসের গোড়াতেই জল ঢেলেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর ডি সুব্বারাও। এতে হতাশ ছিল শেয়ার বাজার। কিন্তু পর্যালোচনার দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফের সুদ কমার আশা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম নিজেও চান, সুদ কমিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির চাকায় গতি আনা হোক।
এই আশা তৈরি কি একেবারেই অমূলক? বিশেষজ্ঞদের অনেকেই কিন্তু মনে করছেন, আগে সুব্বারাও যাই বলুন, এ বার বৃদ্ধির হারকে ঠেলে তুলতে সুদ কমানোর পদক্ষেপ করতে পারেন সুব্বারাও। কারণ, চলতি অর্থবর্ষে যে লক্ষ্যে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। সম্প্রতি একাধিক আর্থিক সংস্কারের পথ অনেকটাই সুগম করে ফেলেছে তারা। সব বাধা কাটিয়ে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির পথ পরিষ্কার হয়েছে। ডিজেলের দামে নিয়ন্ত্রণ প্রায় তুলে নেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে বিমান পরিষেবা-সহ আরও কিছু ক্ষেত্রেও বিদেশি লগ্নির পথ প্রসারিত করার উদ্যোগ। ব্যাঙ্কিং শিল্পে লগ্নির ক্ষেত্রে সংস্কার আনার চেষ্টা চলছে। ১০ বছর বাদে বেড়েছে রেল ভাড়া। নানা ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমাতেও উদ্যোগী কেন্দ্র।
এর উপর সব থেকে ভাল খবর, মূল্যবৃদ্ধির হার ক্রমশ কমছে। পাইকারি মূল্য সূচকের ভিত্তিতে হিসাব করা সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি গত তিন বছরে সব থেকে নীচে নেমেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সুদ ধরে রাখা কতটা কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে, তাতেই প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। বরং শিল্পোৎপাদন বাড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি করে বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে।” তবে গত দু’বছর ধরে সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করেই কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি কমাতে সফল হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর এক ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত তাই সুব্বারাওয়ের সুরেই বলেন, “এই অর্থবর্ষে কেন্দ্রের বিলগ্নিকরণ কর্মসূচি সামান্যই সফল হয়েছে। ফলে রাজকোষ ঘাটতি যেখানে রয়েছে, তাতে সুদ কমানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করি না। মূল্যবৃদ্ধি অনেকটাই থিতু হয়েছে। তবে সুদ কমানো হলেই তার বিরূপ প্রভাব পড়বে মূল্যবৃদ্ধির হারের উপর।” |