গলায় লোহার শিকলের ফাঁস লাগিয়ে নিজের বাড়িতেই খুন হলেন এক বৃদ্ধা। রবিবার রাতে মন্তেশ্বরের কুঁড়েপাড়ার ঘটনা। নিহতের নাম সাধনা চট্টোপাধ্যায় (৭০)। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। ঘটনাস্থলে আনা হয় পুলিশ কুকুরও। প্রতিবেশী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁদের বাড়ির জামাই দীপক মুখোপাধ্যায়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশের দাবি, ১ জানুয়ারি ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা পূর্ণিমা গঙ্গোপাধ্যায়ের খুনের সঙ্গে মিল রয়েছে এই খুনের। তবে খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে তারা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট ছেলে মলয় চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকতেন সাধনাদেবী। তাঁর স্বামী
|
সাধনা চট্টোপাধ্যায়।
—নিজস্ব চিত্র। |
চণ্ডীচরণবাবু থাকতেন বড় ছেলে প্রশান্তবাবুর কাছে। তিনি পেশায় কাঠব্যবসায়ী। সকালে বাড়িতে মাকে রেখে স্ত্রী ও কয়েক জন আত্মীয়ের সঙ্গে চড়ুইভাতিতে যান মলয়বাবু। ফেরেন রাত ৮টা ১০ নাগাদ। মলয়বাবু পুলিশকে জানান, বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন দরজা খোলা। ভিতরেরছড়ানো রয়েছে জিনিসপত্র। পাশের ঘরে পড়ে রয়েছে তাঁর মায়ের মৃতদেহ। প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানান তিনি। খবর দেওয়া হয় মন্তেশ্বর থানায়। ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ দেখে সাধনাদেবীর গলায় একটি কালো মাফলার ও লোহার শিকল জড়ানো। মুখচোখে চাপ চাপ রক্ত। এর পর পুলিশ কুকুর নিয়ে এসে তদন্ত করানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাত ২টো নাগাদ বর্ধমান সদর থেকে কুকুর নিয়ে আসে পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার, কালনার এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকার, কালনার সিআই রাকেশ মিশ্র, মন্তেশ্বর থানার ওসি বখতিয়ার হোসেন, কালনার ওসি অমিত মিত্রও ঘটনাস্থলে আসেন।
কুকুর এসে ঘটনাস্থল থেকে ছুটতে শুরু করে। প্রায় ১০০ মিটার দূরে মানিকবাবুর বাড়ির বন্ধ ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। তালা খুলে ভিতর থেকে প্রেশার কুকারে ভেজানো একটি জামা উদ্ধার করা হয়। এরপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয় মানিকবাবু, শিবদাসবাবু ও দীপকবাবুকে । এর পর পুলিশ খুনের কিনারার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ তুলে নেন বাসিন্দারা। ভোর চারটে নাগাদ দেহ নিয়ে আসা হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
পুলিশ জানায়, নিহতের পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, কয়েক ভরি সোনার গয়না ও হাজার খানেক টাকা খোয়া গিয়েছে। তবে দামি মোবাইল বা ক্যামেরায় হাত দেয়নি দুষ্কৃতীরা। তাই এখনই ঘটনাটিকে শুধু ডাকাতি বলতে নারাজ পুলিশ। প্রাথমিক অনুমান, পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে ডাকাতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে মাত্র। ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। তাদের আরও বক্তব্য, ধাত্রীগ্রামের পূর্ণিমা গঙ্গোপাধ্যায়ের খুনের সঙ্গে এই খুনের মিল রয়েছে। একই সময়ে একইভাবে গলায় লোহার শিকল জড়িয়ে পূর্ণিমাদেবীকে খুন করা হয়েছিল। তাই দু’টি খুনের পিছনে একই লোকের হাত রয়েছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠছে। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “দু’টো খুনের মধ্যেই কয়েকটি মিল রয়েছে। তদন্ত আরও এগোলে বিষয়টি স্বচ্ছ হবে।” |