‘দার্জিলিং’ না ‘কালিম্পং’, পাহাড়ে উত্তরবঙ্গ উৎসব কোথায় হবে তা নিয়ে অনুষ্ঠানের পাঁচ দিন আগেও দোটানায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। কিছুদিন আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ঘোষণা করেছিলেন দার্জিলিঙের ম্যালে ওই উৎসব হবে। বৃহস্পতিবার ফের নিজের দফতরে প্রস্তুতি বৈঠক সেরে মন্ত্রী জানান, দার্জিলিঙের পরিবর্তে উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে কালিম্পঙে। তবে কালিম্পঙের কোথায় তা চূড়ান্ত হয়নি। ঘণ্টাখানেক পরেই মন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয় কালিম্পং নয় পাহাড়ে দার্জিলিঙেই উৎসবের আয়োজন হচ্ছে। তবে পাহাড়ের উৎসবের আয়োজন নিয়ে মোর্চা নেতৃত্ব কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। সে কারণেই ঘোষণা হলেও দার্জিলিংই শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত কি না তা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।
সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মোর্চা ফের আন্দোলনের কথা ঘোষণা করে। সামনে আসে জিটিএ সংবিধান মেনে না হওয়ার বিষয়টি। মোর্চার সঙ্গে আলোচনা না করেই তাদের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রীকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে প্রস্তুতি নেওয়ায় তোপ দাগে মোর্চা। সব নিয়েই পাহাড় প্রসঙ্গে অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সে কারণেই উদ্যোক্তারা মোর্চার খাস তালুক দার্জিলিং পাহাড়ে উৎসবের আয়োজন এড়াতে চাইছিলেন। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে বলে। তবে তাতে ভূলবার্তা যেতে পারে ভেবেই ফের দার্জিলিঙে উৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “পাহাড়েও উত্তরবঙ্গ উৎসব হবে তা আগেই জানানো হয়েছিল। তবে কোথায় হবে তা ঠিক ছিল না। দার্জিলিং না কালিম্পং তা নিয়েই ভাবনা চিন্তা করা হয়। শেষ পর্যন্ত দার্জিলিঙেই উৎসবের আয়োজনের বিষয়টি ঠিক হয়েছে। মোর্চা বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারই আমরা পেয়েছি। এ বারও তারা একসঙ্গে চলবে বলে বিশ্বাস।” দার্জিলিঙের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই লামাহাটা পর্যটন কেন্দ্র-সহ পাহাড়ের কয়েকটি প্রকল্পের সূচনা করবেন তিনি। মোর্চা নেতা রোশন গিরি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহাড়ে উত্তরবঙ্গ উৎসবের ব্যাপারে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আয়োজকরা আমাদের সঙ্গে এখনও কোনও রকম যোগাযোগ করেননি।” উত্তরবঙ্গ উৎসব করতে একটি আলাদা কমিটি গড়া হলেও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের তরফেই পুরো বিষয়টি দেখা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের শিল্প, পর্যটন-সহ বেশ কিছু দফতর সহযোগিতা করছে। কোচবিহার শহর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটকেই এ বারের উৎসবে ‘ফোকাস’ করা হয়েছে। কোচবিহারে ৫ টি জায়গায় এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে ৮ টি জায়গায় উৎসবের মঞ্চ হচ্ছে। আগামী ২৮ জানুয়ারি শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উৎসবের উদ্বোধন করবেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ জানুয়ারি থেকে অন্যান্য জেলাগুলিতে উৎসব শুরু হয়ে যাবে। উদ্বোধনের দিন উৎসব মঞ্চ থেকে রাজ্যের ৬ জন কৃতী ব্যক্তিকে সম্মান জানানো হবে। বিভিন্ন কাজে অবদানের জন্য ‘বঙ্গ সম্মান’ দেওয়া হবে। ১০০ জন পড়ুয়াকে বৃত্তি দেওয়া হবে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের একাংশকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গের ১০০ টি ক্লাবকে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে এ বার উৎসবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান জমকালো করতে উপস্থিত থাকছে চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ-সহ ক্রীড়া জগতের এক দল প্রাক্তন তারকা। উদ্বোধনের দিন শিলিগুড়িতে পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। শহরবাসীকে এ দিন থেকে বাড়ির ছাদে দেওয়ালে আলোকসজ্জা করতে বা প্রদীপ জ্বালাতে অনুরোধ করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। |