মহিলা আদালত
খোলা মনে কথা বলতে পেরে খুশি আম্বিয়াবিবি-লক্ষ্মীদেবীরা
ট সন্তান সামলে দু’বছর ধরে ঘুরতে হচ্ছিল আদালতে। স্বামী তাঁকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। খোরপোষ দাবি করেছেন। মহিলা আদালতের প্রথম দিনেই সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় কালিয়াচকের আম্বিয়াবিবির চোখে মুখে বিস্ময়ের ভাবটা আর কাটছিলই না। মালদহ জেলা আদালত ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের মহিলা আদালতের ঘর থেকে বেরিয়েই সামনে একটা ছোট্ট অলিন্দ। সেখানে বিস্ময়ের স্বরেই বললেন, “বিচারক থেকে আদালত কর্মী সকলেই মহিলা। এমন আগে দেখিনি। খোলা মনেই তাই নিজের সব কথা বলতে পেরেছি।” সে কথা শোনার পরে বিচারক কেয়া সরকার আম্বিয়া বিবির পক্ষেই রায় দেন। আম্বিয়াবিবিকে খোরপোষ দিতে এখন বাধ্য তাঁর স্বামীকে। কালচে রঙের মলিন শাড়ি। গায়ে একটা খয়েরি চাদর। আম্বিয়াবিবি বিজয়িনীর মতো মাথা উঁচু করে ছাড়লেন আদালত চত্বর।
সেই অলিন্দে তখন ঠাসা ভিড়। দক্ষিণ-পুবের আরও একটি ঘরে চলছে মহিলা আদালত। খোলা দরজা দিয়ে এজলাস দেখা যাচ্ছে। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র উদ্বোধন করার পরে এই দিনই শুরু হল মহিলা পরিচালিত এই আদালত। যেখানে শুধু মহিলাদের নির্যাতনের মামলারই বিচার হবে। কেবল অভিযুক্ত ও আইনজীবী হলেই এই আদালতে পুরুষদের প্রবেশাধিকার মিলবে। আম্বিয়াবিবির আইনজীবী বিপুল দত্ত যেমন এই দিন আদালতে ছিলেন। তিনি বলেন, “দু’বছর ধরে হয়রান হচ্ছেন আমার মক্কেল। আদালত থেকে বারবার নোটিশ পাঠানো সত্ত্বেও অভিযুক্ত কোর্টে হাজিরা দেননি। এ দিন খোরপোষের মামলা বিচারক নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।” তিনি জানান, তাঁরা মাসে ৮ হাজার টাকা খরপোষ দাবি করেছিলেন। একই ভাবে খুশি রতুয়ার পীরগঞ্জের লক্ষ্মী রায়। দু’বছর আগে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর পাঁচ প্রতিবেশী তাঁকে বাড়িতে ঢুকে মারধর করেছেন। দেড় বছর ধরে সেই মামলা চলছে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে ঘুরছেন এক বছর ধরে। কিন্তু সাক্ষ্য না হওয়ায় রোজই তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছিল। এই দিন আদালতে হাজির হতেই বিচারক তাঁর সাক্ষ্য নেওয়ায় খুশি লক্ষ্মীদেবী। তাঁর কথায়, “এ বার আশা করি দোষীরা সাজা পাবে।”
সুজাপুরের মধ্যপাড়ার রহিমা বিবি, পুরাতন মালদহের পাথরকাটার সখিনা বিবিরাও তাই আশ্বাস পেয়েছেন, তাঁদের মামলারও খুব তাড়াতাড়ি নিস্পত্তি হবে। মানিকচকের বালুটোলার বধূ সুলেখাবিবি ও হবিবপুরের বাণী হেমব্রমও আশা করছেন তাঁদের স্বামীর সঙ্গে যে মামলা চলছে, তার রায় মিলবে তাড়াতাড়িই। তবে শুধু মামলা মেটাই নয়। মনের কথা খুলে বলার সুযোগটাও এই মহিলাদের কাছে খুব দামি। মহিলা আদালতের সরকারি আইনজীবী নার্গিস আরা খাতুন জানান, এই দিন যে মহিলাই অভিযোগের কথা বলতে উঠেছেন, প্রত্যেকেই নিশ্চিন্তে কথা বলতে পেরেছেন। তাঁর কথায়, “পুরুষ ভর্তি আদালত কক্ষে ধর্ষণ কিংবা অন্য নির্যাতনের কথা বলতে মহিলারা লজ্জা পান। অনেক কথা শেষ পর্যন্ত তাঁরা বলতেও পারেন না। এ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই আদালতে চিত্রটা অন্য রকম হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.