দার্জিলিংয়ে তিনিই শেষ কথা। অথচ তাঁরই নিরাপত্তায় রাজ্য সরকারের ‘ঢিলেঢালা মনোভাবে’ প্রবল ক্ষুব্ধ গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর সিইও বিমল গুরুঙ্গ। তাঁর আক্ষেপ, পদমর্যাদায় ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমতুল হলেও নিরাপত্তায় প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
এ বার তাই নিজের জন্য চব্বিশ ঘণ্টার ‘মাছি না-গলা’ সুরক্ষার দাবি তুলেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা। রাজ্য প্রশাসনের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর জন্য সরকার মাত্র ৩ জন কনস্টেবল নিয়োগ করেছে। তা-ও ওই রক্ষীরা কখনও এক সঙ্গে থাকছেন না। অথচ সর্বক্ষণ অন্তত ৫ জন সশস্ত্র দেহরক্ষী তাঁর প্রাপ্য বলে গুরুঙ্গের দাবি। পাশাপাশি লালকুঠিতে তাঁর অফিসের নিরাপত্তাও আরও আঁটোসাঁটো করার দাবি তুলেছেন তিনি।
এতে বিপাকে পড়েছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। তাদের বক্তব্য: সরকারি নিয়মে জিটিএ-প্রধানের যেমন নিরাপত্তা প্রাপ্য, গুরুঙ্গকে তেমনই দেওয়া হয়েছে। এখন গুরুঙ্গের অভিযোগ ও দাবি শুনে দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার সরকারের কাছে ইতিকর্তব্য জানতে চেয়েছেন। এসপি কুনাল অগ্রবাল গত ৩ জানুয়ারি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র-সচিব এবং গোয়েন্দা-প্রধানকে পাঠানো সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে বলেছেন, “রাজ্য নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটি বিমল গুরুঙ্গের জন্য এক্স-ক্যাটেগরি সুরক্ষার সুপারিশ করেছে। সেই হিসেবে তাঁকে এক জন সশস্ত্র লিড কনস্টেবল ও দু’জন রক্ষী দেওয়া হয়েছে।” লালকুঠিতেও এক থেকে পাঁচ জন পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকছে, যা পর্যাপ্ত বলেই জেলা পুলিশ-প্রশাসনের অভিমত।
কিন্তু জিটিএ-প্রধান এতে সন্তুষ্ট নন। এসপি’র রিপোর্টই বলছে, রাজ্যের দেওয়া এই নিরাপত্তায় বিমল গুরুঙ্গ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করছেন, রাজ্য পুলিশ তাঁর নিরাপত্তার ঝুঁকি উপলব্ধি করতে পারেনি, এবং সরকার তাঁকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদা দিলেও সুরক্ষার দিকটায় মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। গুরুঙ্গ চাইছেন, এখনই তাঁর নিরাপত্তা বাড়াতে হবে, সব সময় অন্তত পাঁচ জন দেহরক্ষী মোতায়েন রাখতে হবে।’ জিটিএ-র অন্যতম কর্তা রোশন গিরির মন্তব্য, “বিমল গুরুঙ্গের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো দরকার। যা দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারকে বলা হয়েছে।”
অন্য দিকে এসপি তাঁর রিপোর্টে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গুরুঙ্গের উপরে হামলা বা তাঁর জীবনহানির আশঙ্কার কোনও ইঙ্গিত জেলা গোয়েন্দা বিভাগের কাছে নেই। তাই এই মুহূর্তে তাঁর সুরক্ষার বহর বাড়ানোর কোনও দরকার তাঁরা দেখছেন না। তবে গুরুঙ্গের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, জেলা পুলিশ অবশ্যই তা মেনে চলবে বলে জানিয়েছেন এসপি। সরকার কী ভাবছে? রাজ্য প্রশাসনের মাথারা যে বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন, মহাকরণ-সূত্রে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “বহু প্রচেষ্টায় পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। সরকার চায় না, সামান্য কোনও কারণে তা ফের বিঘ্নিত হোক। প্রয়োজনে বিমল গুরুঙ্গকে চাহিদামতো নিরাপত্তা দিয়ে দেওয়া হবে।”
এবং তা হলে এই প্রথম এ রাজ্যে নিরাপত্তা প্রাপকের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর নিরাপত্তা-স্তরের উন্নতি ঘটবে। স্বরাষ্ট্র-সূত্রের খবর: গুরুঙ্গ যে জাতীয় নিরাপত্তা চেয়েছেন, তাতে তাঁকে জেড অথবা ওয়াই (থ্রেট বেসড) ক্যাটেগরি সুরক্ষার আওতায় আনা হতে পারে। এ জন্য সরকারের খরচও কয়েক গুণ বাড়বে। তবে পাহাড়ে শান্তির খাতিরে সেই বাড়তি খরচকে আপাতত ধর্তব্যের মধ্যে আনছে না স্বরাষ্ট্র দফতর। |