এ বার হোটেলের মধ্যে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল ডায়মন্ড হারবার শহরে।
মন্দিরবাজারের উত্তর শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই ছাত্রী বুধবার বিকেলে টিউশন পড়তে গিয়েছিল স্থানীয় দেউলা গ্রামে। ঘণ্টা খানেক পরে ফেরার সময়ে তার সঙ্গে ছিল আরও দুই ছাত্রী। তারাও শ্যামপুরে থাকে। তবে, তিন জনে সরাসরি বাড়ি না ফিরে ডায়মন্ড হারবার শহরে যায়। জেটিঘাটের পাশের একটি হোটেলে ঢুকে তারা খাচ্ছিল। সেই সময়ে দুই যুবক আসে। তাদের মধ্যে এক জন হোটেলের একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ছাত্রীর দাদা। অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীটিকে রাতে কলকাতার ন্যাশনাল চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ওই ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে এ দিন হাসপাতালে ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তা ভিডিও-রেকর্ডিং করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ওই যুবকদের বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে ছাত্রীটি কিছুই উল্লেখ করেনি। বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে। তবে, ছাত্রীর দুই সহপাঠীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, দুই যুবকের সঙ্গে অসুস্থ ছাত্রীটির পরিচয় রয়েছে। তিন বান্ধবী খেতে বসার কিছু ক্ষণের মধ্যেই দুই যুবক ঢোকে। তাদের ছবি আঁকানো হচ্ছে।
ডায়মন্ড হারবারের হোটেলটি ‘সিল’ করে দেয় পুলিশ। খোঁজ পাওয়া যায়নি মালিকের। শহরের বিভিন্ন হোটেলে অবাধে দেহ ব্যবসা চলে বলে অভিযোগ রয়েছে ডায়মন্ড হারবার শহরের বাসিন্দাদের। পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “ওই এলাকায় একাধিক বেআইনি হোটেল সিল করে দেওয়া হয়েছে। ওই সব হোটেলের বিষয় জেলাশাসককে লিখিত রিপোর্ট পাঠানো
হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ তিন ছাত্রী প্রথমে ডায়মন্ড হারবার শহরের একটি দোকানে সালোয়ার-কামিজ কিনতে ঢোকে। এর পরে তারা ওই হোটেলে যায়। হোটেলের দোতলায় ঘর রয়েছে। দুই যুবক এসে তাদের সঙ্গে খেতে বসে। খাওয়ার ফাঁকে দুই যুবকের এক জন ওই ছাত্রীকে নিয়ে দোতলায় চলে যায়। বেশ কিছু ক্ষণ পরেও বন্ধু নীচে না-নামায় দুই ছাত্রী তাকে ডাকতে উপরে ওঠে। সেই সময়ে অভিযুক্ত যুবক তাদের পাশ দিয়েই নীচে নেমে বন্ধুকে নিয়ে চম্পট দেয়। ঘরের মধ্যে বন্ধুকে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে দুই ছাত্রী হোটেলকর্মীদের জানায়। খবর দেওয়া হয় পাশের একটি ক্লাবেও। ছাত্রীটিকে প্রথমে ভর্তি করানো হয় ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে। পরে স্থানান্তরিত করানো হয় কলকাতার হাসপাতালে। ওই ছাত্রীর দাদা এ দিন দাবি করেন, “বোনের অসুস্থতার কথা ওর সঙ্গে থাকা এক বন্ধুই ফোনে জানায়। রাতে ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে আসল ঘটনার কথা জানতে পারি। বোন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। কারও সঙ্গে প্রেম রয়েছে বলেও জানা নেই। ডায়মন্ড হারবারে যাওয়ার কথা ও বাড়িতে বলে যায়নি। মনে হয় পরিকল্পনা করে ধর্ষণ করা হয়েছে।” হোটেলটির কাছেই থানা, মহকুমাশাসকের কার্যালয় এবং আদালত। তা সত্ত্বেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই পরিবারের লোকজন। ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীকে গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন বিকেলে এসইউসি-র ছাত্র-যুব ও মহিলা সংগঠনের পক্ষ থেকে থানা এবং মহকুমাশাসকের অফিসে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। |