সৌজন্যে রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম
সুন্দরবন সাফারিতে গিয়ে জলে হাবুডুবু সপরিবার পর্যটক
মাঝদরিয়ায় ডিঙি উল্টে হাবুডুবু! সাঁতারে আনাড়ি স্ত্রী, না ৬৫ বছরের বৃদ্ধ বাবা--- কাকে ছেড়ে কাকে বাঁচাবেন ভেবেই দিশেহারা এক যুবক। শেষরক্ষা হল কোনওমতে। বিস্তর জল খেয়ে হাঁচড়ে-পাঁচড়ে লঞ্চে উঠলেন ওঁরা সকলেই।
সুন্দরবন বেড়াতে গিয়ে সম্প্রতি এমনই অভিজ্ঞতার শরিক সল্টলেকের ভট্টাচার্য পরিবার। তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েক জন পর্যটক সলিল-সমাধির হাত থেকে বেঁচেছেন। এটা কোনও ভুইফোঁড় পর্যটন সংস্থার সফর নয়। সুন্দরবন সফরে যাওয়া জনা ৪০ পর্যটকের সঙ্গে ওই পরিবারটিকে কার্যত মোচার খোলের মতো একটি ডিঙিতে উঠতে বাধ্য করেছিল পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম। ওই পর্যটকদের প্রশ্ন, রাজ্য সরকারের এ হেন পর্যটন-পরিকাঠামোর ভরসাতেই কি সুন্দরবনে ‘আফ্রিকান সাফারি’-র স্বপ্ন দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? পশ্চিমবঙ্গের মহিমা-প্রচারে সুন্দরবন-সফরকে প্রথম সারিতেই রাখেন রাজ্যের পর্যটন-কর্তারা। ফলাও করে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। সম্প্রতি হলদিয়ার ‘বেঙ্গল লিড্স’-এ সুন্দরবনের জঙ্গল ভ্রমণের রোমাঞ্চের কথা বড় মুখ করে শিল্পপতিদের শুনিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। সেই ‘রোমাঞ্চ’ হাড়ে-হাড়ে পরখ করার পরে আতঙ্কের ঘোর কাটছে না চিকিৎসক দম্পতি পৃথ্বীরাজ ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী সুতপা রায়ের।
পৃথ্বীরাজের বাবা প্রবালবাবুর অবস্থা আরও করুণ। সুন্দরবন থেকে ফিরে তাঁদের গ্যাংটক বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। আতঙ্কে সেই সফর বাতিল করেছেন তিনি। প্রবালবাবুর পুত্রবধু সুতপা বলেছেন, “আমাদের মোবাইল ফোন, হ্যান্ডিক্যাম ভিজে অকেজো হয়ে গিয়েছে। সেই দুঃখ আর গায়ে লাগছে না। প্রাণে যে বেঁচেছি এই যথেষ্ট!”
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
পৃথ্বীরাজরা বলছেন, “ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-বেলুড় মঠে সফর বা পুজো-পরিক্রমার সময়ে যতটুকু সতর্কতা দেখা যায়, সুন্দরবনের নদী-জঙ্গলে বেড়াতে গিয়ে তার থেকে বেশি কিছু আমাদের চোখে পড়েনি।”
গত ৫ জানুয়ারি সরকারি প্যাকেজ-ট্যুরে সপরিবার সুন্দরবন-সফরে যান পৃথ্বীরাজ। বিবাদী বাগ থেকে বাসে সদলে সোনাখালি পৌঁছনোর পরে লঞ্চে ওঠার কথা ছিল তাঁদের। তখনই ঘটে বিপত্তি। অপরিসর ঘাটে জেটির বালাই নেই। মাঝদরিয়ায় লঞ্চ অবধি পৌঁছে দিতে একটি ভুটভুটিতে এক সঙ্গে জনা ৪০ পর্যটককে তোলা হয়। পৃথ্বীরাজের কথায়, “এক জন বৃদ্ধ মাঝি ছাড়া ডিঙিতে আর কেউ ছিলেন না। ব্যাগপত্তরসমেত গাদাগাদি ভিড়ে সবার বসারও জো ছিল না। কোনওমতে দুরু দুরু বুকে এক ধারে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।”
এমন সময়ে ঢেউ তুলে আর একটি লঞ্চ কাছাকাছি এসে পড়তেই টালমাটাল ডিঙি কাত হয়ে যায়! পৃথ্বীরাজ জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের তিন জন ছাড়াও আরও কয়েক জন পর্যটক ডিঙি থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। লঞ্চের কেটারিং কর্মীরাই তাঁদের উদ্ধার করেন। তাঁর কথায়, “পুরো মান্ধাতার আমলের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। নিগমের কাছে এতটা অপেশাদারিত্ব আশা করিনি।” দুর্ঘটনার পরে তখনই ফিরে যেতে চাইলেও ব্যবস্থা না-থাকায় সফর শেষ হওয়া অবধি থেকে যেতে বাধ্য হন আতঙ্কিত পর্যটকেরা। সুন্দরবনের বিভিন্ন ওয়াচ-টাওয়ারে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার সময়েও ওই পলকা ডিঙিই ছিল ভরসা। তবে এক সঙ্গে সবাইকে না-তুলে এ বার দফায় দফায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পৃথ্বীরাজবাবুদের অভিযোগ পাওয়ার পরে বিব্রত পর্যটন-কর্তারা অবশ্য এই সফরের নিরাপত্তাজনিত খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিচ্ছেন। পর্যটন সচিব বিক্রম সেন ঘটনাটির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজার অনিমেষ ভট্টাচার্যকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনে পর্যটন ক্যাম্পের আয়োজক একটি বেসরকারি সংস্থার কর্তা উদয়শঙ্কর রায় বলেন, “সুন্দরবনের কোর-এরিয়ায় জল খুবই গভীর ও তাতে বড় বড় ঢেউ। সেখানে কাঠের ডিঙি নিরাপদ নয়। কপার-প্লেটেড বোট বরং নিরাপদ।” এই ধরনের ঘটনা পর্যটকদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করে পর্যটন-সচিবের নির্দেশে বলা হয়েছে, সুন্দরবনে পর্যটকদের নিরাপত্তায় এতটুকু আপস করা চলবে না। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আর কী কী করা যায়, তা ভাবা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.