মোহনবাগান-০
ইউনাইটেড সিকিম-০ |
ম্যাচ শেষে দুই পুত্রের হাত ধরে স্টেডিয়াম ছাড়ছেন খেলা দেখতে আসা ওডাফা। ‘কিং কোবরা’-র কাছে অত্যুৎসাহী দর্শকের আবদার, “আপনার ঈশ্বর বিষ্ণু চৌহানকে শাস্তি দেওয়ার সঙ্গে অবনমনটাও যেন বাঁচিয়ে দেন।”
ম্যাচের শুরুতেই সিকিমের নুরউদ্দিনের শট পোস্টে লেগে ফিরল। ছ’মিনিটের মধ্যেই টোলগের ফ্রি-কিক ক্রসপিসে লাগতে গ্যালারিতে ফিসফাস, “আজও বোধহয় হল না!” করিমের দলের ভাগ্য ভাল, ৬৯ মিনিটে বক্সে স্নেহাশিসের হ্যান্ডবল রেফারি সন্তোষকুমারের চোখ এড়িয়ে গেল। নিশ্চিত পেনাল্টি। সে ক্ষেত্রে এক পয়েন্ট প্রাপ্তির স্বপ্নভঙ্গও হতে পারত। ম্যাচ শেষে যুবভারতী ফেরত সবুজ-মেরুন সমর্থকের আফসোস, ‘‘বাতিল আনোয়ারদেরই টপকাতে পারছে না দু’কোটির স্ট্রাইকার। আর কবে জিতবে এরা?”
যদিও সবুজ-মেরুন কোচ করিম বেঞ্চারিফা এর পরেও মানতে নারাজ, নবিরা অবনমনের অন্ধগলিতে ঢুকে পড়েছেন। বরং দ্বাদশ ম্যাচে এসে বাগানে প্রথম পয়েন্ট এনে দেওয়ার দিনে থমথমে মুখে তাঁর দাবি, “ষোলো ম্যাচের মধ্যে সাতটা ম্যাচ ড্র কিংবা হার ধরেই অঙ্ক সাজিয়েছি। বাকি ন’টা ম্যাচ জিতে ফুটবলাররা অবনমন বাঁচাবেই।”
এ দিন আই লিগে ৩৭ গোল হজম করা দলের বিরুদ্ধে মূল্যবান তিন পয়েন্ট পাওয়ার আশাতেই ছিলেন বাগান সমর্থকেরা। কিন্তু সেই আশা নিরাশায় বদলে গেল মাঠে ডেনসনদের আড়ষ্টতা এবং পরিকল্পনার অভাবে। ফুটবলাররা কি ধরেই নিয়েছেন, কর্তারা দৌড়ঝাঁপ করে শেষ পর্যন্ত অবনমন বাঁচিয়ে দেবেন? গোটা ম্যাচের কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে বেরিয়ে এল এ দিনের ড্রয়ের পাঁচ কারণ। |
বাঁধুনি নেই মণীশদের সবুজ-মেরুন মাঝমাঠে নেই জমাট ভাব। মণীশ মৈথানি থেকে ডেনসন। প্রত্যেকেই টোলগে-নবিকে উদ্দেশ্য করে ওভারহেড বল তুলে দিয়েই খালাস। অ্যাটাকিং থার্ডে পাস খেলে বিপক্ষকে ঝাঁকুনি দেওয়ার চেষ্টাই নেই।
ব্যর্থ স্নেহাশিস-জুয়েল যুগলবন্দি উইং দিয়ে ঝড় তোলার ছকেই লেফট ব্যাক স্নেহাশিস। সে ক্ষেত্রে লেফট হাফ জুয়েলের কাজ হত মাঝমাঠে গজ দশেক ভিতরে ঢুকে সিকিমের রাইট ব্যাক অভিষেক দাসকে ব্যস্ত রাখা। যাতে অরক্ষিত স্নেহাশিস উঠে গিয়ে আক্রমণে বল জোগাতে পারেন। ইস্টবেঙ্গলে যে কাজটা করেন সৌমিক-খাবরা। কিন্তু সেই যুগলবন্দি হল কোথায়?
দূরত্ব বেশি যমজ স্ট্রাইকারের বিপক্ষ রক্ষণে চাপ বাড়াতে নবি-টোলগের দূরত্ব কখনওই ১৫ গজের বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু এ দিন নবি-টোলগের মধ্যে এই দূরত্বটাই কখনও কখনও হয়ে যাচ্ছিল ৩৫ গজ। ফলে ডিফেন্ডারদের ভিড়ে একা হয়ে গেলেন টোলগে। এর সঙ্গে পুরো ম্যাচ ফিট না হওয়ায়, মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বলের ধারেকাছে পৌঁছোতে পারছিলেন না। উল্টে, দ্বিতীয়ার্ধে অহেতুক ‘ডাউন দ্য মিডল’ ঢুকতে গিয়ে বাগানের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার হারিয়ে গেলেন সন্দেশদের পায়ের জঙ্গলে।
মণীশ ভার্গবকে তুলে নেওয়া প্রথমার্ধ গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণে লোক বাড়িয়ে গোলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন সিকিমের অস্ট্রেলীয় কোচ। এই সময় দরকার ছিল খেলাটাকে দুই উইংয়ে ছড়িয়ে দেওয়া। যা করছিলেন ভার্গব। তার জায়গায় রাকেশ মাসিকে নামিয়ে ৪-৪-২ থেকে ৪-৩-৩-এ চলে গেলেন করিম। তাঁর যুক্তি, ‘‘রাকেশের রক্ষণাত্মক ভূমিকা কাজে লাগিয়ে মাঝমাঠে মণীশ এবং ডেনসনকে দিয়ে গোলের মুখ খোলার পরিকল্পনা ছিল।” কিন্তু এরা দু’জনেই তো মাঝমাঠে জেনিথ-নিমাদের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছিলেন। বরং ডেনসনকে তুলে লেফট ব্যাকে কাউকে নামিয়ে স্নেহাশিসকে মাঝমাঠে আনলে চাপ বাড়ত ভাইচুংয়ের দলের রক্ষণে।
কৌশলী নাথান টোলগেকে জায়গা দেবেন না। তাই লম্বা-চওড়া দুই পঞ্জাবি স্টপার সন্দেশ এবং আনোয়ারকে সুস্থ করে তুলে নামিয়ে দিয়েছিলেন। ডাবল কভারিংয়ে ওরাই টোলগে-নবিদের সামনে প্রাচীর তুলে দিলেন। আর ম্যাচ সেরা নুরউদ্দিনকে একটু পিছন থেকে অপারেট করে ৮০ মিনিট পর্যন্ত ৪-৪-১-১ ছকে কাউন্টার অ্যাটাকে নির্মল-আইবরদের রক্ষণেও চাপটা রেখে গেলেন। শেষের দশ মিনিট ড্রয়ের জন্য মার্কিন স্ট্রাইকার জন ম্যাটকিনকে ওপরে রেখে ৪-৫-১-এ গিয়ে বাগানের জয়ের স্বপ্নও দিলেন ভেঙে।
রবিবার বাগানের পরবর্তী প্রতিপক্ষ র্যান্টিদের ইউনাইটেড স্পোর্টস। মোহন কোচ বলছেন “ওরা জিততে চাইবে। ফলে আমরা গোলের রাস্তা তৈরির জায়গা পাব।” সপ্তাহান্তে অবনমন বাঁচানোর লড়াইতে ওডাফার ঈশ্বর সেই রাস্তা বানিয়ে মোহনবাগান সমর্থকদের একটু স্বস্তি দেবেন কি?
মোহনবাগান: অরিন্দম, নির্মল, আইবর, ইচে, স্নেহাশিস, মণীশ ভার্গব(রাকেশ), ডেনসন, মণীশ মৈথানি, জুয়েল (সাবিথ), নবি, টোলগে।
|
যেখানে আটকে গেল বাগান |
ইউনাইটেড সিকিম |
• ম্যাচ ১৭, জয় ১, ড্র ৮, হার ৮, পয়েন্ট ১১।
• লিগ টেবলে স্থান ১৩ নম্বরে
• গোল করেছে ১৬
• গোল খেয়েছে ৩৭ এর মধ্যে ভাঙাচোরা ডেম্পোর কাছে হেরেছে ০-৭, র্যান্টিদের ইউনাইটেড স্পোর্টসের কাছে ১-১০।
• এক মাত্র জয় করিম জমানায় সালগাওকরের বিরুদ্ধে ৩-২। |
যে ভাবে ভরাডুবি |
• আট মিনিটে টোলগের ফ্রি-কিক ক্রসপিসে।
• ২৭ মিনিটে ভার্গবের শট বারের ওপর দিয়ে উড়ে গেল।
• ৩৬ মিনিটে নবির হেড বাইরে।
• ৪০ মিনিটে ইচের হেড সিকিম গোলরক্ষকের হাতে।
• ৬৬ মিনিটে নবি-সাবিথের পা ঘুরে আসা বল ফাঁকা গোলে ঠেলার বদলে বাইরে মারলেন ডেনসন। দিনের সহজতম সুযোগ। |
|