দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে বলিউডে কার্যত রাজত্ব করে আসছেন তিনি। দিয়েছেন অসংখ্য হিট ছবি। দেশ-বিদেশে পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের ভালবাসা আর সমর্থন। কিন্তু ৯/১১ পরবর্তী জীবন পাল্টে দিয়েছে অনেক কিছু। পাল্টে গিয়েছে নিজের দেশের মানুষেরই দৃষ্টিভঙ্গি। বিদেশে তো বটেই, শুধুমাত্র পদবির জন্য কখনও কখনও নিজের দেশেও নিজেকে ব্রাত্য বলে মনে হয়েছে তাঁর।
এই উপলব্ধি শাহরুখ খানের।
দেশের একটি নামী সাপ্তাহিক পত্রিকার এ বারের প্রচ্ছদে রয়েছে শাহরুখের কাহিনি। প্রচ্ছদের নাম ‘বিইং আ খান’। মূল বিষয়বস্তু ৯/১১ পরবর্তী বিশ্বে মুসলিমদের অবস্থানটা ঠিক কোথায়।
প্রাণ খুলে কথা বলেছেন শাহরুখ। এই পত্রিকার সাম্প্রতিক প্রচ্ছদ কাহিনিতে আসলে তিনি যেন তুলে ধরেছেন তাঁরই মতো অসংখ্য মানুষের গল্প, যাঁদের পদবি খান বা তার সমগোত্রীয়। শাহরুখ বলেছেন কী ভাবে তাঁরই দেশের কিছু রাজনৈতিক নেতা তাঁকে হিরো থেকে ভিলেন বানিয়েছেন। “আমাকে প্রতীক বানানো হয়েছে। তাঁরা যেটা অন্যায় মনে করেন, আমি যেন ঠিক সেটাই করি। মুসলিম বলে দেশের বিরোধিতা করি।” অনেক দিনের চাপা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শাহরুখ। বলেছেন, “এমনকী সময় সময় এই অভিযোগও উঠেছে, আমি নাকি আমার পড়শি দেশের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। সেই দেশই যেন আমার দেশ। যদিও আমি কিন্তু ভারতীয়। আমার বাবা স্বাধীনতার যুদ্ধে লড়েছেন। তবুও। আমি যাতে নিজের ভিটেয় ফিরে যাই, তার জন্য এ দেশে মিছিল হয়েছে।”
স্ত্রী হিন্দু। ফলে উঠেছে পরিবারের প্রসঙ্গও। শাহরুখ জানিয়েছেন, নিজের ছেলে আর মেয়ের এমন নাম রেখেছেন যা কোনও ধর্ম বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। “আরিয়ান আর সুহানা দু’টো এমন নাম, যা সর্ব ধর্মের। সব এলাকার, সব দেশের লোকই এই নাম রাখতে পারে। শুধু খান পদবিটা ওদের দিয়েছি, যাতে ওরা কোনও দিনই সেটাকে এড়িয়ে যেতে না পারে,” লিখেছেন শাহরুখ।
পশ্চিমে বলিউডের সবচেয়ে বড় আইকন বলে পরিচিত শাহুরুখ। কিন্তু তা সত্ত্বেও একাধিক বার হেনস্থা হতে হয়েছে তাঁকে। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরবর্তী আমেরিকা শাহরুখের কাছে অন্য রূপে ধরা দিয়েছে। একাধিক বার সে দেশের বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে বলিউডের এই সুপারস্টারকে। কেন? কারণ তাঁর পদবি খান। আর নামটাও হয়তো কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। ব্যস, জেরায় জেরায় জেরবার হতে হয়েছে। গত এপ্রিলেই ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানের অতিথি শাহরুখকে নিউ ইয়র্ক বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়েছিল।
শাহরুখ জানান, জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর নামের মিল শুনতে শুনতে তিনি ক্লান্ত। বলেছেন, “সব মুসলিমই যে জঙ্গি নয়, সেটা প্রমাণ করতে একটা ছবি করেছিলাম। আমেরিকায় মুসলিমদের এখন ঠিক কী চোখে দেখা হয়, সেটা দুনিয়াকে বোঝাতে। কিন্তু মজার কথা কি জানেন? সেই ছবিটাই আমেরিকায় প্রচার করতে গিয়ে সেখানকার বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে আমায়।”
শুধু পর্দায় নয়, বাস্তবেও শাহরুখকে বারবার প্রমাণ করতে হয়েছে, “মাই নেম ইজ খান। অ্যান্ড আই এম নট আ টেরোরিস্ট।” |