গোলাপি শহরে স্মৃতিতে সুনীল
ত অসুখ, আগে জানতেন?
‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবির শেষে অসুস্থ মালি-বউয়ের জানলার সামনে অসীমকে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করেছিল অপর্ণা।
জয়পুর সাহিত্য উৎসবের প্রথম দিন ‘রিমেম্বারিং সুনীলদা’ অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি দর্শকের সামনে প্রয়াত লেখকের স্মৃতিতর্পণে সেই অপর্ণাই। শর্মিলা ঠাকুর।
‘আরাধনা’ ছবির ‘মেরে সপনো কি রানি’ গানে এক ফ্রেমে রাজেশ আর শর্মিলা কখনও থাকেন না। কারণ, শক্তি সামন্তকে না জানিয়েই ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র শুটিং করতে চলে গিয়েছিলেন নায়িকা।
যদিও ছবি রিলিজের পর সুনীলের মৃদু অনুযোগ ছিল, পরিচালক চরিত্রগুলোর ‘শ্রেণি’ বা ‘ক্লাস’টাই বদলে দিয়েছেন। পরে অবশ্য তিনি নিজে অতীতের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হাসাহাসি করতেন, ‘‘আরে, তখন বয়স কম ছিল। সাহিত্য আর সিনেমা যে আলাদা মাধ্যম, অত জ্ঞান ছিল না!’’ আমেরিকায় বসে স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়েরও মনে পড়ে,
জয়পুরে শর্মিলা।
ছবি: পিটিআই
‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার ধার শোধ করার জন্য ‘জলসা’ নামে এক সিনেমা-পত্রিকায় উপন্যাসটি লিখেছিলেন সুনীল। সেটি পড়েই সত্যজিতের ফোন। “তখন সবে তিন-চার বছর বিয়ে হয়েছে, সত্যজিৎ রায় ওর গল্প নিয়ে ছবি করবেন শুনে খুব আনন্দ হয়েছিল।”
সুনীলের স্মৃতিতে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে। কলকাতার বইমেলা ও সাহিত্য উৎসব দু’টিই এ বার তাঁর স্মরণে নিবেদিত। জয়পুরেও উইলিয়াম ডালরিম্পল, পিকো আয়ার, শশী তারুর প্রমুখ সেলিব্রিটি দর্শকের সামনে এ দিন অডিও-ভিস্যুয়াল পর্দায় আছড়ে পড়ল ছবি-সহ তাঁর কণ্ঠ। বাংলা ভাষায় কখনও ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, কখনও বা ‘সেই সময়’-এর ইংরেজি অনুবাদ ‘দোজ টাইমস’ থেকে পাঠ করে শোনালেন শর্মিলা। “রেনেসাঁসের সময়েও মেয়েদের প্রতি বাংলার শিক্ষিত উচ্চবর্গের দৃষ্টি কেমন ছিল, তুলে ধরেছিলেন সুনীলদা,” বললেন তিনি।
একদা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও বাংলা কবিতা লেখার জন্য ছটফট করেছেন সুনীল। গ্রিন কার্ডের প্রলোভন, ফরাসি প্রেমিকা সব ছেড়ে এক ধাক্কায় কলকাতা ফিরে এসেছিলেন।
বৃহস্পতিবারের জয়পুর দেখাল, সে দিনের সিদ্ধান্ত আদৌ ভুল ছিল না। বাংলা ভাষাকে ব্যবহার করেই সুনীল পৌঁছে গিয়েছিলেন সাহিত্যের সর্বভারতীয় মানচিত্রে।
রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকারী হিসেবেই এ দিন ‘কৃত্তিবাস’-সম্পাদককে দেখল জয়পুর। শর্মিলা, অমিত চৌধুরী, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মালাশ্রী লাল বললেন, যৌবনে সুনীল ছিলেন বোহেমিয়ান ও বিদ্রোহী।
‘তিন জোড়া লাথির ঘায়ে রবীন্দ্র-রচনাবলী লুটোয় পাপোশে’তেই তখন তাঁর পরিচিতি। কিন্তু ক্রমেই নির্লিপ্ত ভাবে বাঙালির সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ইতিহাসের বিচার করেছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতে বুঁদ হয়েছেন।
“সুনীলদা গান লিখতেন না, ছবিও আঁকতেন না। কিন্তু ওটুকু বাদ দিলে তিনি রবীন্দ্রনাথেরই উত্তরসূরি,’’ বললেন মালাশ্রী।
শুধু সুনীল নন, জয়পুরে এ বার অনেক বাঙালিরই জয়জয়কার। উৎসবের শুরুতেই মহাশ্বেতা দেবীর স্বাগতভাষণ। সাহিত্য অকাদেমির প্রয়াত সভাপতি সুনীল জয়পুরের উৎসবে যোগ দিতে বছর চারেক আগে এসেছিলেন।
‘হাজার চুরাশির মা’ এ বারেই প্রথম এলেন। মহাশ্বেতার লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন যিনি, সেই গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক আসছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে বলবেন।
‘রিপাবলিক অফ আইডিয়াজ’ নিয়ে বলবেন আশিস নন্দী। থাকছে ‘এ পার বাংলা, ও-পার বাংলার সাহিত্য’ নিয়ে অধিবেশন। রাজস্থানের রাজ্যপাল মার্গারেট আলভাও উৎসবের সূচনায় তাঁর বক্তৃতায় বললেন আর এক বিশ্বখ্যাত বাঙালির কথা। দিন তিনেক আগের উগ্রবাদী হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে এত বড় অনুষ্ঠান, বিভিন্ন চিন্তা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ...
মার্গারেট বললেন, ‘‘গুরুদেবের লাইনটা মনে পড়ছে। হোয়্যার দ্য মাইন্ড ইজ উইদাউট ফিয়ার। চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির...।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.