হারা প্রার্থীর উপরে বাজি তৃণমূলের |
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • নলহাটি |
প্রত্যাশিত ভাবেই নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রাক্তন পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝাকেই প্রার্থী করল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার কলকাতার তৃণমূল ভবন থেকে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়।
বিপ্লববাবুই ছিলেন নলহাটি পুরসভা দখলে দলের প্রধান কাণ্ডারি। যদিও নিজে হেরেছিলেন দু’টি ওয়ার্ডেই। প্রার্থী হয়ে বিপ্লববাবুর প্রতিক্রিয়া, “দলের সিদ্ধান্তে আমি খুশি। জেলা সভাপতিকেই এর জন্য ধন্যবাদ জানাই।” জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ধন্যবাদ দিতেই হত। কারণ, দলের একটা বড় অংশের মত, নলহাটিতে বিপ্লববাবুকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়ে অনুব্রতবাবু তাঁর বিরোধীদেরই বার্তা দিলেন রাজ্য নেতৃত্বের আস্থা রয়েছে তাঁর উপর। দলেরই একটি সূত্রের খবর, নিজের অনুগামী বিপ্লব ওঝাকে প্রার্থী না করা হলে তিনি কোনও কাজই করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন দলীয় নেতৃত্বকে। এ বিষয়ে অনুব্রতবাবুর প্রতিক্রিয়া, “নলহাটিতে তৃণমূলের ‘ত’ও ছিল না। ওই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বিপ্লববাবুই সংগঠনটা গড়ে তোলেন। তাঁকে প্রার্থী না করলে বিশ্বাসঘাতকতা করা হত।”
অথচ খুব বেশি দিন আগে নয়। নলহাটি ১ ব্লকে বিপ্লববাবু তখন কংগ্রেসের সভাপতি। ২০০৭ সালের নলহাটি পুরভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন বিপ্লববাবু। নলহাটির প্রথম পুরপ্রধান আইনাল হককে সরিয়ে তাঁকেই পুরপ্রধান করে আনে কংগ্রেস। কিন্তু ২০০৯ সালে বিপ্লববাবুকে নলহাটি ১ ব্লকের কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয় দলীয় নেতৃত্ব। ‘অপমানিত’ পুরপ্রধান দলের ৮ কাউন্সিলরকে ভাঙিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। কংগ্রেসের দখলে থাকা পুরসভা চলে আসে তৃণমূলের হাতে। ২০১২-র পুরভোটে তাই বিপ্লব ওঝাকে আটকানো চ্যালেঞ্জ ছিল কংগ্রেসের। দু’টি ওয়ার্ডেই হেরে যাওয়ায় কংগ্রেসের সেই চেষ্টা খানিকটা সফল হলেও পুরোটা হয়নি। ২০০৭ সালে ১৪টি ওয়ার্ডে ৫০০টি ভোট পাওয়া তৃণমূলকে ২০১২-র পুরভোটেই জিতিয়ে এনেছিলেন বিপ্লববাবু।
পরবর্তীতে জেলা সভাপতির আস্থাভাজন বিপ্লব ওঝাকেই জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি চেয়ারম্যান করা হয়। পরে নলহাটি বিধানসভা এলাকার একাধিক পঞ্চায়েতে (কুরুমগ্রাম, কয়থা ১, বাউটিয়া প্রভৃতি) কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছে তৃণমূল। আর তাতে বিপ্লববাবুর ভূমিকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দলের জেলা নেতৃত্বই। রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের আস্থা থাকলেও বিপ্লববাবুর মনোনয়নে ক্ষোভ রয়েছে দলেরই অন্দরে। উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের রাজ্য সভাপতির কাছে আবেদন করেছিলেন নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের গত বারের তৃণমূল প্রার্থী মনুস্মৃতি দেবনাথ। নাম বাতিল হওয়ায় নিজের ক্ষোভ চাপা রাখেননি তিনি। এ দিন বলেন, “দলের খারাপ সময়ে আমিই ছিলাম। দলের সুদিনে একজন পুরনো কর্মী হিসাবে নিজেকে প্রার্থীপদের দাবিদার বলে মনে করেছিলাম।” তাঁকে নিয়ে দলের জেলা সভাপতির অবশ্য প্রতিক্রিয়া, “কে মনুস্মৃতি? উনি তো তেমন ভোটই পাননি!” তাঁর নাম বিবেচিত না হলেও বিপ্লববাবুর হয়ে প্রচারে নামবেন বলে জানিয়েছেন মনুস্মৃতিদেবী।
গত বিধানসভায় জোটপ্রার্থী কংগ্রেসের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৪৯ শতাংশ ভোট। বামপ্রার্থী ফব-র দীপক চট্টোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৩৯ শতাংশ। এ বারে জোট না হওয়ায় বামেরাই কি এগিয়ে? উপনিবার্চনে ফের দাঁড়ানো দীপকবাবুর প্রতিক্রিয়া, “জোট হোক বা না হোক। গত কুড়ি মাসের অভিজ্ঞতার কথা নলহাটির মানুষ জানেন। আমরা বামপন্থীরা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।” বাম, তৃণমূল নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেও কংগ্রেস কী করবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। যদিও দলের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি-র দাবি, “দু’ একদিনের মধ্যেই আমাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।” |