উৎপাদন শূন্য কুলটি কারখানায় কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে সেল-এর প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এমন অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন কর্মী ও শ্রমিক নেতারা। কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই বিতর্ককে আমল দিতে নারাজ।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেল-এর প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়। সেই উপলক্ষে সেল গ্রোথ ডিভিশনের কুলটি কারখানা কর্তৃপক্ষও ধুমধাম করে উৎসবের আয়োজন করেন। ছিলেন গ্রোথ ডিভিশনের ডিজিএম-সহ একাধিক অফিসার। সকালে প্রভাতফেরি, পদযাত্রা ইত্যাদির আয়োজন1 হয়। সারা দিন খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনও ছিল। রাতে কারখানার কুলটি ক্লাবে বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজনও হয়। ডিজিএম কৃষ্ণকান্ত তিওয়ারি বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আমরা সারা দিনের উৎসব করছি। এলাকার ছাত্রছাত্রী ও প্রায় দেড় হাজার বিশিষ্ট মানুষজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাঁদের জন্য খাওয়া-দাওয়া ও অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” |

উৎসবের শোভাযাত্রা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
আর এ নিয়েই সরব হয়েছেন প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মী ও শ্রমিক নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, উৎপাদন শূন্য অবস্থায় পড়ে থাকা এই কারখানায় কর্মসংস্থানের কোনও ব্যবস্থা করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। সেখানে দেদার খরচ করে এমন উৎসবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। আইএনটিইউসি-র কুলটি শাখার সম্পাদক তথা প্রাক্তন কর্মী দিলীপ দেওঘরিয়ার অভিযোগ, “উৎপাদ শুরুর ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেই। শুধু কয়েক জন অফিসার ব্যক্তিগত স্বার্থে এই লোক দেখানো কর্মসূচি করছেন। এর ফলে সরকারের টাকা নয়ছয় হচ্ছে।”
আর এক প্রাক্তন কর্মী তথা সিটু নেতা দেবদাস নায়েকের বক্তব্য, “উৎপাদন শূন্য কারখানায় এই উৎসব মানায় না।” তিনি অভিযোগ করেন, প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা পুনর্নবীকরণ করতে পারেননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। সে সব থেকে নজর ফেরাতেই লোক দেখানো কর্মসূচি নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দীপক চন্দ নামে এক প্রাক্তন কর্মীর প্রশ্ন, “এই উৎসব আমাদের কী কাজে লাগছে?”
কুলটি কারখানা সূত্রে জানা যায়, ২০০৩-এ প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মী এক সঙ্গে স্বেচ্ছাবসর নেওয়ায় কারখানার ঝাঁপ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৭-এর ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান কুলটিতে এসে পুনরায় উৎপাদন শুরুর কথা ঘোষণা করেন। ২০০৮-এর মাঝামাঝি সেল গ্রোথ ডিভিশনের অধীনে কারখানাটি খোলা হয়। কয়েকশো ঠিকা শ্রমিকও নিয়োগ হয়। তবে সে ভাবে উৎপাদন শুরু হয়নি। বর্তমানে রেলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কারখানার জমিতে রেলের একটি ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন শুরু হয়নি।
এই অবস্থায় প্রতিষ্ঠা দিবস পালনকে কেন্দ্র করে কয়েক লক্ষ টাকা খরচকে অপব্যয় বলে মনে করছে নানা রাজনৈতিক সংগঠনও। যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক ইন্দ্রাণী মিশ্রের কথায়, “বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ না করে এই ধরনের মোচ্ছব আমরা মেনে নিচ্ছি না।” সিপিএমের যুব সংগঠনের নেতা মিলন চট্টরাজের দাবি, যে শহরে কয়েক হাজার বেকার, সেখানে একটি উৎপাদন শূন্য কারখানার এই আড়ম্বর হাস্যকর।
এ সব প্রশ্ন বা অভিযোগকে অবশ্য আমল দিতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। সেল গ্রোথ ডিভিশনের ডিজিএমের দাবি, “এ সব অপপ্রচার। সারা দিনের উৎসব-অনুষ্ঠানে হাজার মানুষের ঢল দেখেই বোঝা যায়, সবাই কত খুশি।” |