শিকল-বন্দি দিন কাটাচ্ছে দুর্গাপুরের দুই মনোরোগী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
এ রাজ্যে মানসিক রোগীর মানবাধিকার সুরক্ষিত নয়, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গেল। বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় দু’টি গ্রামে দুই তরুণ মনোরোগী বছরের পর বছর শিকলবন্দি হয়ে রয়েছেন।
দু’জনের পরিবারই দরিদ্র। চাষের জমিও নেই। বড়জোড়ার মানা বরিশাল পাড়ার বছর সতেরোর মিল্টন সরকারের বেশি সময় কাটে বাড়ির উঠোনে পেয়ারাগাছের তলায়, কোমরে শিকল বাঁধা অবস্থায়। রাতে আটকে রাখা হয় ঘরে। এ ভাবেই চলছে আট বছর। একই অবস্থ রামকৃষ্ণপল্লির বিপুল ঘোষেরও। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবকের পায়ে শিকল, দিন কাটে ঘরের মধ্যে। |
মিল্টনের বাবা মিলন সরকার দিনমজুরি করে সংসার চালান। তিনি বলেন, “মিল্টনকে বাঁকুড়া হাসপাতালে দেখিয়েছি। ওষুধ কেনা ও যাতায়াতের খরচ অনেক। তাই বেশি দিন চিকিৎসা করাতে পারিনি।” পড়শিরা বলেন, শিশু ও মহিলাদের দেখলে মিল্টন ঢিল ছুড়ত। “তাই ওকে বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করি,” বলেন মিলনবাবু।
বিপুলের বাবা নির্মল ঘোষ মুম্বইয়ে কাপড় কলে কাজ করতেন। সেখানেই বিপুলের মানসিক রোগ ধরা পড়ে। খুব কম কথা বলত। সারাদিন একমনে কি সব ভাবত। প্রশ্ন করে উত্তর মিলত না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। “ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। মিল বন্ধ হওয়ায় গ্রামে ফিরে আসি। কিন্তু এখানে জমিও নেই যে চাষ করে খাব। বিপুলের চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই।” বিপুল পড়শিদের মারধর করতে ছুটত। তাই বেঁধে রাখা হয়েছে তাকেও। মিল্টনের মা সবিতা সরকার ও বিপুলের মা অঞ্জলি ঘোষ বলেন, “ছেলেকে বেঁধে রাখতে মন চায় না। কিন্তু উপায় নেই। এখন সরকারই সহায়।”
মনোরোগীদের মূল স্রোতে ফেরানোর কাজ করছেন সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। তিনি বলেন, “এ দেশে মনোরোগের চিকিৎসা শহর-কেন্দ্রিক, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল-নির্ভর। চিকিৎসাকে রোগীর আরও কাছে নিয়ে যেতে না পারলে এমনই ঘটবে।” রত্নাবলী জানান, আগে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মানসিক রোগের যত ওষুধ বিনা পয়সায় পাওয়া যেত, এখন মিলছে তার মাত্র কয়েকটি। ওই ওষুধের দাম খুব চড়া। গরিবদের পক্ষে তা কেনা অসম্ভব। বাঁকুড়ার ডিএম বিজয় ভারতী বলেন, “প্রশাসন শীঘ্রই ওঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।”
|