মেলেনি স্বাস্থ্যবিমার কার্ড, ক্ষোভ কালনায় |
প্রতিশ্রুতি ছিল, ১০০ দিনের প্রকল্পে পনেরো দিনের বেশি কাজ করলেই এপিএল তালিকাভুক্ত লোকেরা পাবেন স্বাস্থ্যবিমার কার্ড। কিন্তু একাধিক পঞ্চায়েতের প্রায় ছ’হাজার মানুষ ৩০ দিন কাজ করেও সেই কার্ড পাননি বলে অভিযোগ। তাঁরা জানান, জেলা স্তর থেকে আসা তালিকায় নামই নেই তাঁদের। কালনার ন’টি পঞ্চায়েত -বেগপুর, কাঁকুড়িয়া, সিমলন-আটঘোড়িয়া, নান্দাই, ধাত্রীগ্রাম, কৃষ্ণদেবপুর, হাট কালনা, বাঘনাপাড়া ও সুলতানপুর জুড়েই কমবেশি এই অভিযোগ উঠেছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১-১২ অর্থ বর্ষে এই পঞ্চায়েতগুলির জব কার্ডের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। যার মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার জব কার্ড সচল ছিল। এই আর্থিক বছরে কাজ হয়েছে ১৫ কোটি ২৪ লক্ষ টাকার। পঞ্চায়তেগুলির দাবি, বিপিএল তালিকায় নাম থাকা পরিবারগুলি রার্ষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনার কার্ড আগেই পেয়েছিল। পুজোর আগে জানানো হয়, ১৫ দিন কাজ করা এপিএল পরিবারগুলিকেও স্বাস্থ্যবিমার কার্ড দেওয়া হবে। এর জন্য ব্লক প্রশাসনের তরফে এপিএল পরিবারগুলো সম্বন্ধে নানা তথ্য জানার জন্য ফর্মও দেওয়া হয়। |
ফর্মে ১৫ দিন কাজ করা এপিএল পরিবারগুলোর সংখ্যা, সদস্য-সহ নানা তথ্য উঠে আসে। ব্লক প্রশাসন মারফত ফমর্গুলি পৌঁছয় জেলা প্রশাসনের কাছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের তরফেও জানানো হয়, কালনা ১ ব্লকের পঞ্চায়েতগুলিতে ১৫ দিনের বেশি কাজ করা এপিএল পরিবারগুলিকে স্বাস্থ্যবিমার কার্ড দেওয়া হবে। একইসঙ্গে বিপিএল পরিবারগুলি অর্থাৎ যাদের এই কার্ড রয়েছে সেই কার্ডেরও নবীকরণ করা হবে। একটি সংস্থার প্রতিনিধিরা সংসদে গিয়ে প্রাপকদের ছবি তুলে সেখানেই কার্ড বিলি করবেন। জেলা প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন পঞ্চায়েতের নতুন কার্ড প্রাপকদের তালিকা এবং টোকেন পাঠিয়ে দেওয়া হয় ব্লক প্রশাসনের কাছে। দেখা যায় ন’টি পঞ্চায়েতে ১৫ দিনের বেশি কাজ করা পরিবারের সংখ্যা যেখানে ১৬ হাজার ৩৯৮ হওয়ার কথা সেখানে নাম এসেছে ১০ হাজার ৪৪৯ জনের। ব্লক প্রশাসনের তরফেও পঞ্চায়েতগুলিকে সেই তালিকা ও টোকেন দেওয়া হয়।
সপ্তাহ তিনেক আগে স্বাস্থ্যবিমার ছবি তোলার কাজ শুরু হয়। এরপরেই শুরু হয় গণ্ডগোল। অনেকেই অভিযোগ জানান, তাঁরা ৩০ দিনের বেশি কাজ করেছেন। তবু তালিকায় নাম নেই। ক্ষোভ চরমে ওঠে ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের মিরলগাছি, ভবানীপুর, বাধাগাছি সংসদে। বাসিন্দারা জানিয়ে দেন, নিয়ম মেনে যতদিন না সঠিক তালিকা তৈরি হবে, ততদিন তাঁরা ছবি তুলতে দেবেন না। বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখতে হয় প্রতিনিধিদের। ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুধীর সরকার বলেন, “আমার এলাকার যে সমস্ত জায়গায় তাঁতিদের বাস সেখানে কার্ড আগেই পৌঁছেছে। তবে তাঁত এলাকার বাইরের সংসদগুলিতে ১৫ দিনের বেশি কাজ করা এপিএল পরিবারগুলির ক্ষোভ রয়েছে নাম না থাকার জন্য।” কার্ড পাননি কতজন? প্রধান বলেন, “সঠিক হিসেব দিতে না পারলেও এটুকু বলতে পারি যতজনের আসা উচিত ছিল তার অর্ধেকের কার্ড এসেছে।” হাটকালনা পঞ্চায়েতে ছবি তোলা ও কার্ড বিলির কাজ শেষ হয়ে গেলেও পঞ্চায়েতের দাবি ক্ষোভের আঁচ এখানেও পড়েছিল। সংসদে ছবি তোলার সময়ে অনেকেই বুঝতে পারেননি নিয়মের থেকে বেশি কাজ করেও তালিকায় তাঁদের নাম নেই। পঞ্চায়েতের এক সদস্য বাপ্পা মজুমদার বলেন, “এলাকায় এমন আদিবাসী পরিবার রয়েছে যাঁদের বিপিএল তালিকায় নাম নেই। এ বারে ১৫ দিনের বেশি কাজ করার পরেও তালিকায় তাঁদের নাম নেই। বিডিওকে জানানো হয়েছে।” তাঁর দাবি, রুস্তমপুর, রংপাড়া, মণ্ডলপাড়া, ধর্মডাঙা, পুরাতন হাট-সহ এলাকায় আরও অন্তত আড়াইশো জনের নাম তালিকায় থাকা উচিত ছিল। নান্দাই পঞ্চায়েতের নান্দাই আশ্রমপাড়া, খাঁপুর, উত্তর রামেশ্বরপুর-সহ কয়েকটি সংসদে ছবি তোলার কাজ শেষ হয়েছে। প্রধান ঈদের আলি মোল্লা বলেন, “যে সংসদে ছবি তোলা হচ্ছে, সেখান থেকেই ক্ষোভ বিক্ষোভের খবর আসছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে যেতে হচ্ছে। নাহলে ছবি তোলার কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।”
ছবি তোলার সময় পঞ্চায়েতগুলিকে সচেতনতামূলক হোর্ডিং লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্লক প্রশাসনের তরফে। তাতে লেখা রয়েছে, ১৫ দিনের বেশি কাজ করলেই মিলবে স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ। সিমলন আটঘোড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সৌরভকান্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই সরকারি হোর্ডিং আমরা টাঙাতে পারছি না। কারণ হোর্ডিং দেখলেই দল দলে লোক এসে জিজ্ঞাসা করছেন তাঁদের নাম তালিকায় নেই কেন। বিডিওকে কাজ আপাতত স্থগিত করার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিডিও পাল্টা জানান, ছবি তোলার কাজ স্থগিত রাখা সম্ভব নয়।”
ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “পঞ্চায়েতগুলি থেকে ১০০ দিনের কাজের পরিমাণ, লোক সংখ্যা-সহ যাবতীয় তথ্য জেলায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাও কেন ছ’হাজারের বেশি মানুষের নাম তালিকায় নেই তা বোঝা যাচ্ছে না। সমস্যার কথা মহকুমা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি জানান, জেলা থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, যাঁদের নাম এ বারের তালিকায় নেই নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের দ্বিতীয়বার ছবি তোলার সময় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কোন কোন পঞ্চায়েতে কত নাম বাদ পড়েছে তার একটি তালিকা তৈরির জন্য বিডিওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “প্রকল্পের যে তথ্য রয়েছে তার ভিত্তিতেই তালিকা তৈরি হয়েছে। সঠিক ভাবে খোঁজ না নিয়ে কী ভুল হয়েছে বলতে পারব না।”
কিন্তু প্রশাসন যাই বলুক না কেন স্বাস্থ্যবিমার কার্ডের তালিকা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে জনপ্রতিনিধিদের অনেককেই। প্রধানদের অনেকেরই দাবি, সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। কার্ড না পাওয়ার ক্ষোভকে হাতিয়ার করতে পারে বিরোধীরা। পূর্বস্থলীর বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প, ভূমি ও বস্ত্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। জেলা প্রশাসনের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |