‘ভুল’ অস্ত্রোপচার, অভিযুক্ত চিকিৎসক |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
বাঁ পা ভাঙলে ডান পায়ে প্লাস্টার করা নিয়ে কার্টুন হয়েছে বিস্তর। কিন্তু এ বার বাঁ দিকের ডিম্বাশয়ের সিস্ট অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে ডান দিকের ডিম্বাশয় বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। শুধু ডিম্বাশয়ই নয়, তিনি ওই রোগিণীর জরায়ুও বাদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল ও ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে রোগিণীর পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, চিকিৎসকের ভুলেই ওই মহিলার ভবিষ্যতে ফের মা হওয়ার সম্ভাবনা নির্মূল হয়ে গিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নিশীথরঞ্জন মল্লিকের অবশ্য দাবি, এমন আকছার হয়, আলট্রাসোনোগ্রাফির রিপোর্টের সঙ্গে বাস্তব মেলে না। ওই রোগিণীর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। অস্ত্রোপচারে ভুল হয়নি। তাঁর দাবি, “ভুলটা রোগিণীর পরিবারের, তাঁরা বিষয়টি বুঝছেন না।”
পেটে অসহ্য ব্যথা হওয়ায় উত্তর ২৪ পরগণার হেমনগরের বাসিন্দা জয়ন্তী মণ্ডলকে (৩১) আলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে বলেন চিকিৎসকেরা। তাতে ধরা পড়ে বাঁ দিকের ডিম্বাশয়ে সিস্ট রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। ওই চিকিৎসকের অধীনে সোনারপুরের এক নার্সিংহোমে ভর্তি হন জয়ন্তীদেবী। অস্ত্রোপচার হয়। জয়ন্তীদেবীর অভিযোগ, এর পরেও পেটে ব্যথা কমার বদলে উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। এর কারণ জানতে ফের আলট্রাসোনোগ্রাফি করান তিনি। তাতে দেখা যায়, বাঁ দিকের ডিম্বাশয়ের সিস্ট রয়েই গিয়েছে। বরং জরায়ু ও ডান দিকের ডিম্বাশয়টি উধাও। ওই চিকিৎসকও এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। ‘ভুল’ অস্ত্রোপচারের কথা জানতে পেরে রোগী-স্বার্থ নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জয়ন্তীদেবী। ওই সংগঠনই তাঁকে মেডিক্যাল কাউন্সিলে নিয়ে যায়। সংগঠনের তরফে দুলাল মুস্তাফা বলেন, “জমিজমা বিক্রি করে অস্ত্রোপচারের টাকা জোগাড় করেছিল ওই পরিবার।” কী বলছে মেডিক্যাল কাউন্সিল? কাউন্সিলের এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ খুবই গুরুতর। প্রমাণিত হলে চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হতে পারে।”
অভিযুক্ত চিকিৎসক নিশীথরঞ্জনবাবুর দাবি, আলট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে ডান দিকটা ভুল করে বাঁ দিক দেখিয়েছিল। এমন ভুল আকছার হয়। তিনি বলেন, “ওই মহিলা টানা ১২ বছর ধরে গর্ভনিরোধক ওষুধ খাচ্ছেন। দু’বার গভর্পাত করান বলেও খবর। এখন মিথ্যা অভিযোগ করছেন। মেডিক্যাল কাউন্সিল আমার কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছে। তাদেরও এটাই বলব।”
কিন্তু গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে ‘ভুল’ অস্ত্রোপচারের কী সম্পর্ক? জরায়ুই বা কেন বাদ দেওয়া হল? ডান দিকের ডিম্বাশয় ও জরায়ুতে সমস্যা থাকলে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী বায়োপসি রিপোর্টে তা ধরা পড়ল না কেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর নিশীথরঞ্জনবাবু দিতে পারেননি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, আলট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে ভুল থাকে। ‘ওপেন’ করার পরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ওটিতে দাঁড়িয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
সত্যিই কি এমন ‘ভুল’ আকছার হয়? স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এমন ভুল বিরল। আর যদি তা হয়ে থাকে তা হলে জরায়ু বাদ দেওয়ার আগে রোগিণীর পরিবারকে তা জানানো ও অনুমতিপত্রে সই করানো বাধ্যতামূলক। জয়ন্তীদেবীর দাবি, ওই চিকিৎসক তা করেননি। স্ত্রী রোগ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর বলেন, “আকছার রিপোর্টে এমন ভুল হয় না। তা ছাড়া যদি ডান দিকের ডিম্বাশয়ে কোনও গোলমাল থাকত, তা হলে বায়োপসি রিপোর্টে সেটা ধরা পড়ত। জরায়ুর ক্ষেত্রেও তাই। কোনওভাবেই এমন অস্ত্রোপচারকে কেউ যুক্তিগ্রাহ্য বলে দাবি করতে পারেন না।” |