|
|
|
|
বিভাজনের সঙ্কটে ভাওয়াইয়া উৎসব |
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • জলপাইগুড়ি |
‘আমরা ওঁরা’ বিভাজনে ভেস্তে যেতে বসেছে অনগ্রসর কল্যাণ দফতর আয়োজিত ২৪তম ময়নাগুড়ি ব্লক ভাওয়াইয়া উৎসব। ইতিমধ্যে উৎসবে মনোনীত বেশির ভাগ বিচারক অব্যাহতি চেয়ে প্রশাসনের কর্তাদের চিঠি দিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। ওই পরিস্থিতিতে এ বার ব্লক ভাওয়াইয়া উৎসব নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যার কথা কথা অস্বীকার করেননি ময়নাগুড়ির যুগ্ম বিডিও সমরেশ রায়। তিনি বলেন, “কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। মেটানোর চেষ্টা চলছে।” অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের ময়নাগুড়ির আধিকারিক এমানুল সোরেন বলেন, “বৃহস্পতিবার এ নিয়ে বৈঠক করা হবে।”
লোকশিল্পী মহলের অভিযোগ, এত দিন যে শিল্পীরা ব্লক ভাওয়াইয়া উৎসব পরিচালনা করতেন তাঁদের মধ্যে ‘আমরা’ ‘ওঁরা’ বিভাজন দেখা দেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পীরা এত দিন পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী লোক শিল্পী সঙ্ঘের সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। কয়েকজন শিল্পী সম্প্রতি ওই সংগঠন ছেড়ে জাতীয়তাবাদী শিল্পী গোষ্ঠী তৈরি করেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার উৎসব আয়োজনের দায়িত্ব দুই তরফ থেকে দাবি করা হয়। বিবাদ এড়াতে চৈতন্যদেব রায় নামে এক বেতার শিল্পীকে বিচারক মণ্ডলী গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ঠিক হয় ৩০ জানুয়ারি ব্লক ভাওয়াইয়া উৎসব হবে। পদমতি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের হেলাপাকড়ি বাজারে উৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার আগে ২১ জানুয়ারি থেকে ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিযোগিতা।
এর পরে অভিযোগ উঠতে শুরু করে চৈতন্যদেববাবু প্রশাসনের চিঠি শিল্পীদের কাছে পৌঁছে না দিয়ে ফোন করে দায়িত্ব শেষ করেছেন। জাতীয়তাবাদী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি কালীপদ রায় বলেন, “ফোনে কেন জানানো হবে! তবু চৈতন্যদেববাবুকে বলেছি উৎসব নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাব।” চৈতন্যদেববাবু কালীপদবাবুর অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “খুবই অল্প সময়ের মধ্যে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে বিচারক ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই প্রত্যেকের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হয়েছে। কালীপদবাবু বলেন ‘আমাদের’ ভাবতে হবে। আমি জানতে চাই এখানে ‘আমরা’ ‘ওঁরা’ কেন!” এর পরে ১১ জন শিল্পীকে নিয়ে বিচারক মণ্ডলী গঠন করে কাজ শুরু হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সহ সভাপতি সুভাষ বসু বলেন, “বিচারকদের কয়েকজনকে সিপিএম অফিস থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে খবর। মঙ্গলবার বিচারকদের বাস সিপিএম অফিসের সামনের রাস্তায় আটক করা হয়।” ওই ঘটনায় বিচারক ও শিল্পীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। লোকশিল্পী ভূপেন রায় বলেন, “এক শিল্পী জানান তিনি সিপিএম অফিসের সামনে রাস্তায় থাকবেন। সেই মতো বাস সেখানে গেলে তৃণমূলের সমর্থকরা ঘিরে ধরে।” ওই ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ বিচারকদের ১০ জন অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। চৈতন্যদেববাবু বলেন, “আমরা ১০ জন বিচারক উৎসবে যোগ দিচ্ছি না।” ওই সিদ্ধান্তের ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের প্রতিযোগিতা। |
|
|
|
|
|