ঘটে চলেছে ট্র্যাজেডি
প্রেম না পেলেই ঘাতক হচ্ছে হেরে যাওয়ার রাগ
ত বছর মে মাসে মঙ্গলকোটে এক তরুণীর বাড়িতে দেশি রিভলভার নিয়ে চড়াও হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রেমিক। গুলিতে মৃত্যু হয় তরুণীর বাবার।
কয়েক মাসের ব্যবধানে উত্তর দিনাজপুরে বিয়েতে রাজি না-হওয়ায় একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পরে নর্দমায় ফেলে দেয় এক প্রভাবশালী সিপিএম নেতার ছেলে।
গত ১৩ অক্টোবর প্রেম-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নবদ্বীপে স্কুলছাত্রীকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে বর্ধমানের এক যুবকের বিরুদ্ধে।
পরপর এই ঘটনাক্রমই বলে দেয় হালিশহরে বিয়ের আসরে বরকে গুলি করে খুন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রেমে প্রত্যাখানের পরে হিংসার ঘটনা ঘটেই চলেছে এই রাজ্যে। কখনও যেমন প্রাক্তন প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পরিচিতদের মধ্যে বা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে প্রতিশোধস্পৃহা মেটাচ্ছে যুবক। সোমবারই কোচবিহারের হলদিবাড়িতে মালিকের মেয়েকে ধর্ষণ করার ছবি বাজারে ছড়িয়ে গ্রেফতার হয়েছে এক গাড়ি চালক। কখনও বা নিজের হাতে শেষ করছে ভালবাসার মানুষটিকে।
মনোবিদদের মতে, প্রেমিকার ‘অধিকার’ না পাওয়ার বেদনা থেকেই আসে হতাশা। সমাজবিজ্ঞানী রুচিরা গোস্বামী (ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিকাল সায়েন্স) বলেন “আমাদের সমাজে এখনও এই বোধ কাজ করে যে সঙ্গী নির্বাচনের বিষয়ে পুরুষের কথাই শেষ কথা। তাই বাবা-দাদাদের অনিচ্ছায় সঙ্গী নির্বাচন করলে ‘অনার কিলিং’। আর প্রেমিককে প্রত্যাখ্যান করলে অ্যাসিড-আক্রমণ বা গুলি। বিশ্বভারতীর হস্টেলে ঢুকে প্রেমিকাকে গুলি করে মেরেছিল প্রত্যাখ্যাত প্রেমিক, হালিশহরে প্রেমিকার হবু বরকে মারল যুবকমানসিকতাটা একই।”
আসলে, ‘হারানোর বেদনা’কে যখন ছাপিয়ে ওঠে ‘হেরে যাওয়ার ক্ষোভ’, তখন তা মারমুখী হয়ে ওঠে, বলছিলেন মনোবিদ সত্যজিৎ আশ। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাগের প্রকাশ হতে পারে অন্তর্মুখী। তখন নিজেকে শেষ করে দেওয়ার উদগ্র বাসনা চেপে বসে। এ ক্ষেত্রে আত্মহত্যাও করতে পারে প্রেমিক, আবার দেবদাসের মতো ক্রমশ নিজেকে ধ্বংস করতে পারে। রাগ যখন বহির্মুখী, তখন যাকে পাচ্ছে না তাকে কিংবা যে তাকে পাচ্ছে তাকে খুন করে ‘ব্যর্থ’ প্রেমিক।
২০১১ সালের জুনে ব্যারাকপুরে এক কনস্টেবল নিজের সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি করেছিলেন বিবাহিতা প্রেমিকার স্বামীকে। ঠিক যে ভাবে হালিশহরের ঘটনায় প্রাক্তন প্রেমিকা নয়, তাঁর হবু স্বামীকে খুন করলেন চাপা স্বভাবের ‘শান্ত ছেলে’ বলে পরিচিত রাজীব বসু।
হারানোর অনুভূতির তীব্রতা যত বেশি, প্রতিক্রিয়াও হয় ততই হিংস্র। বছর পনেরো আগে বনগাঁ-রানাঘাট ট্রেনপথে বেছে-বেছে সুন্দরী মেয়েদের মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটছিল। পরে জানা যায়, বনগাঁর গোপালনগরের এক ছেলে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার রাগে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজের প্রেমিকারও সর্বাঙ্গ অ্যাসিডে পুড়িয়ে দিয়েছিল ‘ভদ্র-শান্ত’ বলে এলাকায় পরিচিত ওই তরুণ।
প্রত্যাখানের এই তীব্র প্রতিক্রিয়া সেই সময় আলোড়ন ফেলেছিল রাজ্যে। চাপা স্বভাবের অন্তর্মুখী ওই তরুণ মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিল বলেই মত মনোবিদের।
“অনেক সময়েই এই ধরনের আচরণের পিছনে বড় হয়ে ওঠার পারিপার্শ্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়” ব্যাখ্যা সত্যজিৎবাবুর। তাঁর কথায়, “সমাজের নানা অংশে নানা ‘সাব-কালচার’ বা বিশিষ্ট-সংস্কৃতি থাকে। যেখানে হিংসার ঘটনা বেশি ঘটে, সেখানে হিংসার গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। তখন হিংসার মাধ্যমে রাগের প্রকাশ স্বাভাবিক বলে মনে হয়।”
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) পল্লবকান্তি ঘোষ অবশ্য মনে করেন, সম্পর্কের রীতিনীতি দ্রুত বদলে যাওয়া মেয়েদের আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। এখন সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে দ্রুত, ছাড়াছাড়িও হয়ে যাচ্ছে ক’দিন পরেই। “প্রত্যাখ্যাত হলে অন্য জন কী করতে পারে, সে বিষয়ে ধারণা করার সময়ও পাচ্ছে না ছেলেমেয়েরা। তার ফলেই ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে,” বলেন পল্লববাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.