সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসকে খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি পূরণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’। খুনের মূল চক্রীরা এখনও ধরা পড়েনি বলে দাবি মঞ্চের নেতাদের। যার পিছনে ‘শাসক দলের মদত’ থাকতে পারে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
গত বছর ৫ জুলাই গোবরডাঙা স্টেশনের কাছে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশন (মেন)-এর শিক্ষক বরুণ। ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তভার নেয় সিআইডি। কিছু দিন আগে খুনের অভিযোগে জুভেনাইল আদালত এক জনকে তিন বছরের কারাবাসের আদেশও দিয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়েছে বনগাঁ আদালতে।
এর পরেও তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে কেন সন্তুষ্ট নয় ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’? কেনই বা সিবিআই তদন্ত চান তাঁরা?
বুধবার সুটিয়া বাজারে এক সভায় মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, “যারা ধরা পড়েছে, সকলেই ভাড়াটে খুনি। কারা মূল ষড়যন্ত্র করল, টাকার জোগানই বা দিল কারা সে সব স্পষ্ট হয়নি। |
খুনিদের শাস্তি ও সিবিআই তদন্তের দাবিতে মিছিল গ্রামবাসীর। ছবি: পার্থসারথি নন্দী। |
সেই সত্য উদ্ঘাটনের দাবিতে আমরা সিবিআই তদন্ত চাই।” ননীগোপালবাবু জানান, সিবিআই তদন্তের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দেখা মেলেনি। বরুণের মৃত্যুর পরে যে স্মরণসভা হয়েছিল, সেখানে তৃণমূল-সহ সব রাজনৈতিক দলকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তৃণমূলের তরফে তার আগের দিন পৃথক স্মরণসভা করা হয়। এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা (তাঁদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের) এ ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন বলেও অভিযোগ করেছেন ননীগোপাল। তাঁর কথায়, “সব মিলিয়ে আমাদের মনে হচ্ছে, বরুণকে খুনের ঘটনায় ষড়যন্ত্রকারীদের পিছনে শাসক দলের মদত থাকলেও থাকতে পারে।” ২০০০-’০৩ সাল নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রাম সুটিয়ায় একের পর এক যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, তার বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’ গড়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন সুটিয়াবাসী। বরুণবাবু ছিলেন ওই মঞ্চের সম্পাদক। সুটিয়া-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী-সহ অনেকেরই পরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। পুরনো আক্রোশের জেরে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসেই সুশান্ত চৌধুরী বরুণকে খুনের ছক কষে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে জানিয়েছিল পুলিশ।
এ দিন সুটিয়ায় সভা প্রসঙ্গে প্রতিবাদী মঞ্চের সম্পাদক পরিমল মণ্ডল জানান, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহিলাদের উপরে নির্যাতনের জেরে যে গণআন্দোলন তৈরি হচ্ছে, তাকে ত্বরান্বিত করতেই এই সভা। সেখানেই রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্য-সহ বাকি বক্তারা।
তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক তথা স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “সিপিএমের মদতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ননীগোপালবাবুরা এই ঘৃণ্য খেলায় নেমেছেন। সুুটিয়ার মানুষ জানেন, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কারা প্রথম থেকে লড়াই করেছে।” যা শুনে সিপিএমের বনগাঁ-গাইঘাটা জোনাল কমিটির সম্পাদক রমেন আঢ্যের প্রতিক্রিয়া, “কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়, প্রতিবাদী মঞ্চ স্বতন্ত্র ভাবে দীর্ঘ দিন আন্দোলন করছে। আজ যে সভা ছিল, তা-ই আমরা জানতাম না।” সিপিএম নেতা এই দাবি করলেও প্রতিবাদী মঞ্চের উদ্যোগে মৌনী মিছিলে সিপিএমের মহিলা সমিতির প্ল্যাকার্ড হাতে এ দিন কাউকে কাউকে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। |