|
|
|
|
স্মৃতি আর ভাবাবেগেই সুভাষ স্মরণ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সালটা ১৯৪০। ১২ মে। রবিবার। ঝাড়গ্রামের জনসভায় বক্তব্য রাখলেন সুভাষচন্দ্র বসু। মেদিনীপুরে পৌঁছে গিয়েছিলেন আগের রাতেই। সে রাতে নাড়াজোলের রাজা দেবেন্দ্রলাল খানের অতিথি হয়ে রাজার ওখানেই রাতটা কাটিয়েছিলেন দেশনায়ক। সুভাষচন্ত্রের রাত্রিযাপনের ঐতিহাসিক সেই স্থানটিই বর্তমান গোপ কলেজ (রাজা নরেন্দ্রলালখান মহিলা মহাবিদ্যালয়)। প্রাক স্বাধীনতার সেই লগ্নে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা উন্নত ছিল না। মেদিনীপুরও তখন অবিভক্ত জেলা। ধেড়ুয়া হয়েই যেতে হত ঝাড়গ্রামে। কংসাবতী পেরনোর জন্য ছিল নৌকা। লোহার নৌকোয় মোটর গাড়ি পারাপারও হত। রাজা দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে মোটরে চেপেই ধেড়ুয়া হয়ে নদী পেরিয়ে ঝাড়গ্রাম পৌঁছন নেতাজি। জনসভায় তাঁর বক্তব্য শুনতে সে দিন ছিল উপচে পড়া ভিড়। কংগ্রেস কর্মী থেকে সাধারণ কৃষক, সকলেই এসেছিলেন জননেতাকে একটি বার কাছ থেকে দেখার জন্য। ১২ মে রাতেই ফিরে গিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র। |
|
এগরায় নেতাজি জন্মজয়ন্তী। —নিজস্ব চিত্র। |
যে জেলা তাঁর পদধূলিধন্য, সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে একটা অন্য ভাবাবেগ রয়েছে। মঙ্গলবার সেই আবেগ থেকেই দুই মেদিনীপুর জুড়ে পালিত হল সুভাষচন্দ্রের ১১৭তম জন্মজয়ন্তী।
এ দিন তমলুকে পুরসভার প্রাঙ্গণে নেতাজি মূর্তিতে মাল্যদান করেন উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়। তমলুক জেলা কংগ্রেস কার্যালয় প্রাঙ্গণে নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসিত পাল, সদর ব্লক সভাপতি বিকাশ প্রামাণিক প্রমুখ। তমলুক শহরের লালদিঘি এলাকায় এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুঃস্থদের শীতবস্ত্র দেওয়া হয়। তাম্রলিপ্ত জনস্বাস্থ্য, কৃষি ও কুটিরশিল্প মেলা কমিটির তরফে তমলুক রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে নেতাজি মূর্তিতে মাল্যদান ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। তমলুক শহরের শঙ্করআড়া সুভাষ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নেতাজি জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নন্দীগ্রামের কালীচরণপুর তরুণের স্বপ্ন ক্লাবে নেতাজি জন্ম-জয়ন্তী উপলক্ষে রক্তপরীক্ষা শিবির ও থ্যালাসেমিয়া নির্ণায়ক শিবির হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক ফিরোজা বিবি, নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ চন্দন দাস প্রমুখ।
কাঁথিতে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে, কাঁথি শিশুমহল ও ফরিদপুর বিবেকানন্দ লোকশিক্ষা নিকেতনের উদ্যোগে প্রভাত ফেরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন বিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও উত্তর কাঁথির মারিশদাতে ডিওয়াইএফের মারিশদা জোনাল কমিটি বেশ কিছু কর্মসূচি নেয়। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ঝাড়েশ্বর বেরা, অশোক পণ্ডা, রাজকুমার মাইতি প্রমুখ।
মেদিনীপুর শহরে মেদিনীপুর কলেজের সামনেই রয়েছে নেতাজির মূর্তি। এদিন সকালে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সেখানে মালা দেওয়া হয়। ফরওয়ার্ড ব্লক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে এসে মাল্যদান করে। দীর্ঘদিন ধরেই এই দিনটিতে মেদিনীপুর অ্যাথলেটিক ক্লাবের উদ্যোগে হয়ে আসছে ১০ মাইল দৌড় প্রতিযোগিতা। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ডিএসও-র পক্ষ থেকে জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকেই পতাকা উত্তোলন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও কোথাও প্রশাসনিকভাবে কোথাও কোনও সংস্থা, সংগঠন বা ক্লাবের উদ্যোগেও পতাকা উত্তোলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে আলোচনা সভা - নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
মেদিনীপুর কলেজের এনএসএস ইউনিট এবং নেতাজি স্মৃতি সংরক্ষণ সমিতির যৌথ উদ্যোগে জননেতার জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন্দ্রনাথ বাগ। এনএসএস ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক এবং শারীরশিক্ষা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল জেলা পরিষদ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের উদ্যোগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদেও দিনটি পালন করা হয়। বিকেলে মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ে নেতাজী মূর্তির পাদদেশে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে ডিএসও।
পিংলার মোহনপুর তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের উদ্যোগেও নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রাজ্য নেতা ওহিদুল হক, মহম্মদ মহসীনেরা। নেতাজীর জীবন ও আদর্শ নিয়েও আলোচনা হয়। চন্দ্রকোনার সারা বাংলা বেকার সমিতির উদ্যোগে শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঘাটাল শহরে নেতাজি ছাত্র সঙ্ঘের উদ্যোগে দৌড় প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন মহকুমা শাসক অংশুমান অধিকারী ও পুরপ্রধান জগন্নাথ গোস্বামী। দাসপুরের বেলেঘাটাতে নেতাজী ক্লাবের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা হয়। ঝাড়গ্রামের সুভাষ পার্কেও এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন গণসংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন সেখানে।
দাঁতন ১ ব্লকের ভাগবতচরণ হাইস্কুলে নেতাজির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, আলোচনাসভার পাশাপাশি এ দিন নবীনবরণ উৎসব হয়। প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ দাস বলেন, “স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এ বারও চাঁদা তুলে এলাকার দশ জন দুঃস্থ মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দিয়েছে।” |
|
|
|
|
|