এত দিন তাঁর শোওয়ার ঘরের দেওয়ালে সেরেনা উইলিয়ামসের বিরাট ছবি টাঙানো থাকত। সেই ‘আইডলের’ বিরুদ্ধে এক সেট ও একটি ব্রেক-এ পিছিয়ে থেকেও অসাধারণ ৩-৬, ৭-৫, ৬-৪ জিতে টিনএজ জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে উঠে নতুন মার্কিন টেনিস প্রতিভা স্লোয়ান স্টিফেন্স বলে দিলেন, “বেডরুমে এ বার নিজেরও একটা ছবি টাঙাব।”
সেরেনার মতোই কৃষ্ণাঙ্গী। তাঁর মতোই ফ্লোরিডায় টেনিসচর্চা। ও রকমই পাওয়ার-গেম খেলেন বলে ১৯ বছরের স্টিফেন্সকে এখনই মার্কিন মুলুকে ‘নতুন সেরেনা’ বলা হচ্ছে। যেটা অনেকের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হলেও বুধবারের পরে তাঁরাও হয়তো ওই নামে তাঁকে ডাকতে রাজি হয়ে যাবেন। গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে ওঠায় স্টিফেন্সের ৫ লাখ ২৭ হাজার ডলারের চেক পাওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। যাঁর কি না এর আগে মোট জেতা পুরস্কারমূল্যই ছিল ৬ লাখ ৯৪ হাজার ডলার! |
সেরেনা উইলিয়ামসকে হারানোর পরে স্লোয়ান স্টিফেন্স। ছবি: এএফপি
|
ঐতিহাসিক জয়ের পরেও টিপিক্যাল টিনএজারের মানসিকতায় টিভি-তে প্রাক্তন মার্কিন টেনিস তারকা পাম শ্রাইভার-কে বলে দেন, “লকাররুমে ফিরে প্রথমেই আমার মোবাইলে চেক করলাম কতগুলো মেসেজ এসেছে। ১৪৫টা! তার মধ্যে জন লেজেন্ডেরও মেসেজ আছে। ওহ! জন লেজেন্ড আমাকে মেসেজ করেছেন। আমি প্রচণ্ড উত্তেজিত। আমি জানি না কী করব! আমি স্বপ্ন দেখি জন লেজেন্ড আমার বিয়েতে এসে গান গাইছেন!” সত্যিই ‘অ্যাটস্লোয়ানটুইটস’ অ্যাকাউন্টে আজ ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্টিফেন্সের ফলোয়ার-এর সংখ্যা ১৭ হাজার থেকে বেড়ে দ্বিগুণ দাঁড়ায়। ৩৩৭০০! “আমেরিকান টেনিসের রানিকে হারানোর কী মহিমা!” বলেছেন সেরেনার ঘাতক।
আমেরিকান টেনিসের রানি অবশ্য অস্ট্রেলীয় ওপেন কোয়ার্টার ফাইনালে পুরো ফিট ছিলেন না। ১৫ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন সেরেনা মেলবোর্ন পার্ক থেকে তাঁর পঞ্চম খেতাব নিয়ে যাওয়ার অভিযানে নেমে প্রথম রাউন্ডেই গোড়ালি মচকে টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় ছিটকে যাচ্ছিলেন। কোর্টে হুমড়ি খেয়ে পড়া থেকে স্বপ্নের উত্থানের পর সেই ম্যাচ জিতলেও গতকাল দিদি ভেনাসকে নিয়ে ডাবলসে হেরে যাওয়া ম্যাচে ফের পুরনো জায়গায় চোট পান। গত সপ্তাহে যদিও বলেছিলেন, “একমাত্র মরে না গেলে আমাকে কোনও চোট কোর্ট থেকে বার করতে পারবে না।” |
টেনিস-রানির ঘাতক |
• বয়স ১৯ উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি ওজন ৬১ কেজি
• পেশাদার সার্কিটে মাত্র ৪ বছর বসবাস ও ট্রেনিং ফ্লোরিডায়
• বর্তমান বিশ্ব র্যাঙ্কিং ২৫ (প্রথম ৪০-এর মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট)
• বুধবারের মেলবোর্নের আগে সেরা গ্র্যান্ড স্ল্যাম পারফরম্যান্স — চতুর্থ রাউন্ড। খেতাব — মাত্র ১টি আইটিএফ |
• মা সিবিল স্মিথ ’৮৮-তে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার দলে প্রথম আফ্রো-আমেরিকান হিসেবে নির্বাচিত হন।
• বাবা জন স্টিফেন্স পেশাদার আমেরিকান ফুটবলার। ২০০৯ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন শুরুর দিন গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। বাবার অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিয়ে ফিরে মেয়ে সে দিনই যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে খেলেছিলেন। |
উইলিয়ামস বোনেরা বিশ্ব টেনিসে উঠে এসেছিল ১৬, ১৭ বছর বয়সে। এ বার স্টিফেন্সের পালা। ১৯-য়ে ও অসমসাহসী। সেরেনার কাছে হারটা কষ্টের। কিন্তু টেনিসের পক্ষে বিরাট দিন।
ক্রিস এভার্ট |
|
গতকালই মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা তাঁকে মেলবোর্নের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন বেছে বলেছিলেন, “সেরেনা অবিশ্বাস্য ফিট, শক্তিশালী।” কিন্তু ৩১ বছরের শরীর এ দিন আর টানতে পারেনি। অগস্টের পর (এর মধ্যে উইম্বলডন-অলিম্পিক-যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জিতেছেন) আজই প্রথম হারের মুখ দেখলেন। ’৭৫-এ মেয়েদের টেনিসে র্যাঙ্কিং প্রথা চালু হওয়ার পর সেরেনার সামনে এখানে মহাসুযোগ ছিল, সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বের এক নম্বর হওয়ার রেকর্ড গড়ার। সেটাও রড লেভার এরিনায় আজকের হারে গেল। তৃতীয় সেটেও ৪-৩ এগিয়ে থাকার সময় স্টিফেন্সের একটা ড্রপশট নেটের সামনে থেকে ব্যাকহ্যান্ড রিটার্ন করতে গেলে পিঠের নীচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত পেশিতে প্রচণ্ড টান লাগে সেরেনার। “এতটাই যে, শটটা মেরেই আমি যন্ত্রণায় ‘আহ’ বলে চিৎকার করে উঠি। পিঠ থেকে পা পর্যন্ত ‘লক্’ হয়ে গিয়েছিল। সত্যিই ব্যাপারটা যন্ত্রণাদায়ক। তবু আমি ম্যাচ শেষ করেছি। তবে আমার ৫০তম গ্র্যান্ড স্ল্যামটাই কেরিয়ারের জঘন্যতম গ্র্যান্ড স্ল্যাম হয়ে থাকল,” বলেছেন বিশ্বের তিন নম্বর সেরেনা। |