|
|
|
|
পুলিশি ভাষার গেরোয় বরাকের মানুষ |
উত্তম সাহা • শিলচর |
বাঙালি অধ্যুষি ত বরাক উপত্যকায় প্রায় সব ক’টি থানার ওসি অসমিয়া জনগোষ্ঠীর। এমনকী ফাঁড়ি ইনচার্জ-রাও ওই একই গোষ্ঠীর। এ নিয়ে সরব হয়েছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। তাদের অভিযোগ, ভাষা-সমস্যার দরুন বিচার পেতে এই অঞ্চলের মানুষকে সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশ অফিসাররা যে-কেস ডায়েরি তৈরি করেন, তাতে বর্ণিত সব তথ্য সত্যি বলেই অভিযোগকারীকে সই করতে হয়। কিন্তু অসমিয়া অফিসাররা তাঁদের মাতৃভাষায় কেস ডায়েরিগুলি তৈরি করেন বলে স্থানীয় মানুষ কিছুই বুঝতে পারেন না। আর না-বুঝেই তাদের কেস ডায়েরিতে সই করতে হয়। ফলে আদালতে শুনানির সময় অভিযোগকারীর বক্তব্যের সঙ্গে ডায়েরির লেখার অসঙ্গতি প্রায়ই ধরা পড়ে। এতে কখনও আবেদনকারী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন, কখনও বা বিচার পেতে অহেতুক বিলম্ব হয়।
তাই অন্তত কেস ডায়েরি লেখার জন্য প্রতিটি থানায় ও ফাঁড়িতে কিছু বাঙালি পুলিশ অফিসার রাখার দাবি তুলেছেন তাঁরা। জেলার পুলিশ সুপার দিগন্ত বরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ নিয়ে কথাও বলেছেন। কিন্তু পুলিশ সুপার জানিয়ে দিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর এক্তিয়ারভুক্ত নয়। কোন জেলায় কোন কোন পুলিশ অফিসার নিযুক্ত থাকবেন, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন। আর ভাষাভিত্তিক পুলিশ অফিসারের জন্য দাবি কৌশলগত বিষয় বলে এ নিয়ে এক মাত্র স্বরাষ্ট্র দফতরই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী জানান, তাঁরা শীঘ্রই এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। তাঁর কথায় এটি ভাষাবিদ্বেষের ব্যাপার নয়। অসমিয়া পুলিশ অফিসারদেরকে দোষারোপও করা হচ্ছে না। কিন্তু অভিযোগকারী ও তদন্তকারী অফিসার একে অপরের কথা বুঝতে না পারলে সমস্যাটি যেমন বুঝিয়ে বলা যায় না, তেমনই অফিসারের পক্ষেও সমস্যার শিকড় খুঁজে বের করা কঠিন। জেলা সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দীনেন্দ্রনারায়ণ বিশ্বাসের কথায়, অসমিয়া না-জানায় অভিযোগকারীকে দোষারোপ করা যায় না। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধিতেই উল্লেখ রয়েছে, অভিযোগকারী তাঁর নিজের ভাষায় অভিযোগ করতে পারেন।
একই সঙ্গে তাঁরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড বা ব্যানারে অসমিয়া ভাষা ব্যবহারের সমালোচনা করেন। সংগঠনের শিলচর শহর কমিটির সভাপতি বিভাসরঞ্জন চৌধুরী বলেন, “সাধারণ মানুষকে জানানোই যদি বিজ্ঞপ্তি- বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য হয়, তবে তাতে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার যথার্থ।” |
|
|
|
|
|