অসম-বাংলা সম্পর্কের রাখি বাঁধল দু’টি বই
বজাতকের কানের পাশ দিয়ে শীতের কলকাতায় হেঁটে যেত ফিরিওয়ালা। তার সেই ‘জয়নগরের মোয়া’-র সুর শিশুর কান হয়ে মরমে এমনই প্রবেশ করেছিল যে তার মুখনিসৃত প্রথম শব্দ ‘মা’ না ‘মোয়া’, তা নিয়ে এই বড় বয়সেও সংশয়ে শিশু। বেচারা যখন স্বভূমে অর্থাৎ অসমে এল, তখন সাহিত্যিক মা, অনুরাধা শর্মা পুজারীকে কাতর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করেছিল ‘‘মা, এখানে কোনও বাঙালি নেই?”
বাংলা-অসম সম্পর্কের ভিতটাকে আরও শক্ত করতে গুয়াহাটি প্রেস ক্লাবে একজোট হয়েছিলেন বাংলা ও অসমের বিদ্বজ্জনেরা। উপলক্ষ অসম পাবলিশিং-এর দু’টি গ্রন্থ প্রকাশের এক অনুষ্ঠান। আলোচনা-সমালোচনার পথ বেয়ে উঠে এল বিস্তর আত্মজিজ্ঞাসা।
অধ্যাপক প্রশান্ত চক্রবর্তীর মাতৃভাষা বাংলা, ধাত্রী ভাষা অসমিয়া। তাঁর সম্পাদিত বই ‘রাগ-অনুরাগ’-এর নির্যাসও বাংলা-অসম সম্পর্কের সেই ইতিবাচক বন্ধন। বাংলার সঙ্গে অসমের প্রাচীন যোগাযোগ, বৈবাহিক সম্পর্ক, বাঙালি-অসমীয়া শিল্পীদের অন্তরঙ্গতা, রবীন্দ্রনাথের প্রভাব-সহ নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, শিল্পীর মতামত সংকলিত হয়েছে দুই মলাটের মধ্যে। অন্য দিকে, গুয়াহাটি বিশেষজ্ঞ কুমুদেশ্বর হাজরিকা ‘ইতিহাসর ছাঁ-পোহরত পুরণি গুয়াহাটি’ বইয়ে প্রাচীন কাল থেকে এই জনপদের বিবর্তনের ধারাকে আমজনতার জন্য লিপিবদ্ধ করেছেন। সেখান থেকেই জানা গেল, যে দীঘলিপুখুরি এখন ব্যস্ত গুয়াহাটির প্রাণকেন্দ্র, সেইখানেই রাজা ভগদত্ত তাঁর প্রিয় কন্যা ভানুমতীর স্বয়ম্বর সভা বসিয়েছিলেন। ধনুখেলার প্রতিযোগিতায় ভানুমতীকে অর্জন করেন কর্ণ। এ তো গেল পুরাণের কথা। ইতিহাস বলছে, এক সময় ব্রহ্মপুত্রের পোতাশ্রয় ছিল আজকের এই পুকুর। ভাবা যায়? ক’জন জানতেন ১৯৫২ সালে রাজেন্দ্র প্রসাদের বিরুদ্ধে প্রথম রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গুয়াহাটির বাসিন্দা নগেন্দ্রনাথ দাস? জানা গেল, গুয়াহাটির কত কী ‘প্রথম’ বাংলারই হাতে গড়া। শুক্রেশ্বরের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে অভিনীত বাংলা নাটক ‘রামরাজ্যাভিষেক’-ই গুয়াহাটিতে অভিনীত স্থানীয় শিল্পীদের প্রথম মঞ্চাভিনয়। আর গুয়াহাটির প্রথম পাঠ্যপুস্তকের দোকানটিও তো সেই বাঙালির হাতেই তৈরি।
অনুষ্ঠানে অনুরাধাদেবী ছাড়াও সাহিত্যিক ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য, নিরূপমা বরগোহাঞি, নাট্যবিদ কুলদা ভট্টাচার্য, নাট্যকার অরুণ শর্মা, সূর্য হাজরিকা হাজির ছিলেন। বাংলা-অসম সম্পর্ক প্রসঙ্গে সাহিত্যিকরা এক মত---শিশুর মনে যেমন কোনও ভেদাভেদ থাকে না, আগের আমলে দুই পড়শির মধ্যেও তেমনই সখ্য ছিল। পরবর্তী কালে, নেহাতই ভৌগোলিক ব্যবধানকে হাতিয়ার করে কিছু মানুষ, অসাধু রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিদ্বেষের দেওয়াল তুলেছিলেন। বাংলা ও অসমের বিভেদ যেমন কাম্য নয়, তেমনই নিজের ঐতিহ্যকে ভুলে থাকাও কাজের কথা নয়। তাই দেওয়াল ভাঙার বিশ্বাস আর ‘আত্মবিস্মৃতি’র তকমা হঠাবার অঙ্গীকার নিয়েই শেষ হয় এই সভা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.