ভাই-বোনের সাফল্যে উজ্জ্বল মুম্বইয়ের চালাঘর
র পাঁচ জনের মতোই হয়তো অনেক স্বপ্ন চোখে নিয়ে ভিটে ছেড়েছিলেন তিনি। প্রায় কুড়ি বছর আগে। পেট চালানোর তাগিদে তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরম থেকে সটান চলে এসেছিলেন মুম্বই। তবে অল্পশিক্ষিত রাজকুমার পেরুমল অবশ্য সে দিন কোনও বড়সড় চাকরি জোটাতে পারেননি। সংসার চালানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন অটোরিকশা চালানোর কাজটাকে। দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে সেই কাজটাই একনিষ্ঠ ভাবে করে এসেছেন রাজকুমার। কিন্তু এ বার বোধহয় তাঁরও ছুটি নেওয়ার পালা।
কারণ একটাই। রাজকুমারের মেয়েই চান না, বাবা আর কষ্ট করে রোজগার করুক। এত দিন ধরে হাড়ভাঙা খাটুনির পর বাবাকে একটু ‘শান্তির জীবন’ উপহার দিতে চান মেয়ে। রাজকুমারের মেয়ের নাম প্রেমা রাজকুমার। এ বারের সর্বভারতীয় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি (সি এ) পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন তিনি। সব বাধা টপকে। দারিদ্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।
গত কাল সি এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। মোট আটশো নম্বরের পরীক্ষায় চব্বিশ বছরের প্রেমার প্রাপ্তি ৬০৭। অর্থাৎ ৭৫.৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন তিনি। যে পরীক্ষা বারবার দিয়েও উত্তীর্ণ হওয়া যায় না, সেই পরীক্ষায় প্রথম বার বসেই প্রথম হয়েছেন তিনি। তবে শুধু প্রেমার সাফল্যই নয়, রাজকুমার পেরুমল পরিবারের খুশির ধাক্কাটা এ বার জোড়া। প্রেমার সঙ্গেই সি এ পাশ করেছেন তাঁর ভাই ধনরাজ। দিদির মতো র্যাঙ্ক না করতে পারলেও, বাইশ বছরের এই যুবকও প্রথম বার পরীক্ষায় বসেই সফল হয়েছেন। পেয়েছেন আটশোর মধ্যে ৪৫০।
পরিবারের সঙ্গে প্রেমা। বুধবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই
কাল থেকেই মুম্বই-সহ গোটা দেশ দিদি আর ভাইয়ের সাফল্য নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। প্রেমা নিজে কিন্তু বলছেন, “আমি জানতাম পরীক্ষায় পাশ করবই। তবে একেবারে প্রথম হব, সেটা ভাবিনি।” যদিও প্রেমার এই সাফল্য আক্ষরিক অর্থেই হঠাৎ নয়। বি কম পরীক্ষাতেও ৯০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন তিনি। একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরার স্থানটা। “লেখাপড়ার জন্য টাকা জোগাড় করতে কখনও অসুবিধা হয়নি। স্কুলে থাকতে বৃত্তি পেতাম। কলেজের ফি-ও সামান্যই ছিল। কোচিং সেন্টার থেকেও চল্লিশ হাজার টাকার বৃত্তি পেয়েছিলাম। বাবা অটো চালিয়ে আমাদের মানুষ করেছেন। যখন আর্টিকলশিপের সময় টাকা পেতে লাগলাম, মা কাজ ছেড়ে দিলেন। তাই টাকা নিয়ে আমার বাবা-মাকে কখনও চিন্তা করতে হয়নি”, বললেন গর্বিত প্রেমা। মেয়ের সুরে সুর মেলালেন রাজকুমারও। বললেন, “ও সব সময় নিজের পড়ার টাকা নিজেই জোগাড় করেছে। আমাদের এ নিয়ে কখনও চিন্তাই করতে হয়নি। তবু চেষ্টা করতাম, ওর যা দরকার সেটা এনে দেওয়ার।”
বাবার রোজগার মাসে পনেরো হাজারের আশপাশই ঘোরাঘুরি করত। মুম্বইয়ের মতো শহরে ভাড়া বাড়িতে থেকে চার-চারটে পেট চালানোর পক্ষে যা কোনও ভাবেই যথেষ্ট নয়। তাই দিদির মতোই নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন ধনরাজ। প্রেমাই জানালেন, স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে কল সেন্টারে কাজ করতেন ধনরাজ। সেই মাইনে থেকেই পরীক্ষার মোটা ফি-র ব্যবস্থা করেছেন ভাই।
নিজেরা স্কুলের গণ্ডি পেরোননি। তাই চেয়েছিলেন সন্তানরা মানুষের মতো মানুষ হোক। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার জন্য ভিল্লুপুরমের জমিটুকুও বেচে দিয়েছিলেন রাজকুমার। আর সেই কৃতজ্ঞতা থেকেই হয়তো বাবাকে এখন একটা বড় ফ্ল্যাট কিনে দিতে চান প্রেমা। নিজে চাকরি পেয়ে গেলে বাবাকে আর কাজ করতে দিতেও নারাজ তিনি।
মালাডের তিনশো স্কোয়্যার ফিটের চালা ঘরে থেকে এত বড় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে কখনও কোনও অসুবিধা হয়নি? এর জন্য প্রতিবেশীদের বেশ খানিকটা কৃতিত্ব দিয়েছেন ধনরাজ। জানিয়েছেন, তাঁরা যখন পড়াশোনা করতেন, প্রতিবেশীরা কোনও রকম হইচই বাধাতেন না। আর প্রেমার কথায়, “পরিশ্রমটাই হল আসল কথা। কে কোথায় থাকছে, সেটা বড় নয়। বড় কথা হল কে কতটা চেষ্টা করছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “আমি আমার এই সাফল্য বাবা-মাকে উৎসর্গ করতে চাই। তাঁদের আশীর্বাদ ছাড়া তো এটা কখনও সম্ভবই হত না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.