|
|
|
|
রাশ হাতে তুলে ইতিবাচক রাজনীতির কথা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও প্রধানমন্ত্রীকে নকল করে দেখাচ্ছেন, কখনও ‘মারব নাকি’ বলে কটাক্ষ করছেন। এমন একটা সময়ে দায়িত্ব নিয়ে রাহুল গাঁধী আজ বুঝিয়ে দিলেন, বিদ্বেষের রাজনীতির পক্ষে তিনি নন। বরং ইতিবাচক রাজনীতির পক্ষে। সব রকম পরিশীলিত বিতর্কে আগ্রহ রয়েছে তাঁর।
কংগ্রেসের সহ সভাপতি পদে তিন দিন আগে অভিষেক হয়েছে রাহুলের। তার পর আজ দলের সদর দফতরে এসে আনুষ্ঠানিক ভাবে সে পদের দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, “এত বেশি নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে, সেটাই আমার অপছন্দ। সার্বিক ভাবে রাজনীতির পরিবেশটাই বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। ছোট ছোট বিষয়েও প্রায়ই লড়াই হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে দেশ এগোবে না। তাই ইতিবাচক রাজনীতিই আমি করতে চাই।”
রাহুল যে রাজনীতির ‘বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশের’ কথা বলেছেন, সে প্রসঙ্গে বারেবারেই উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে করা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিকতম মন্তব্য, যা নিয়ে বিতর্ক গড়িয়েছে বহু দূর। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের স্পষ্ট বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্বেষের রাজনীতি করেন না। তাঁর মন্তব্য খামোখা বিকৃত করা হচ্ছে।” এই তর্কে বাইরে থাকা রাজনীতির মানুষরা কিন্তু স্বীকার করছেন, মোটেই ভুল বলেননি রাহুল। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ যেমন বিদ্বেষপূর্ণ, তেমনই নেতিবাচক। রাজনৈতিক আক্রমণে প্রয়োগ করা শব্দের মানও নেমে এসেছে তলানিতে। মূলত সে কারণে সার্বিক ভাবে রাজনৈতিক শ্রেণি সম্পর্কে যুব সম্প্রদায় তথা শিক্ষিত সমাজের অসন্তোষ বাড়ছে। তাঁদের মতে, সমাজের সেই অংশের আবেগ ছুঁতে চেয়ে রাজনীতিতে স্বকীয়তা গড়তে চাইছেন রাহুল। বাকিদের সঙ্গে ফারাকটাও বোঝাতে তৎপর। সে জন্য রাহুল আজ এ-ও বলেন, “অনেক কিছু ভাল হচ্ছে দেশে। নতুন প্রজন্ম অনেক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। নেতিবাচক বিষয় ছেড়ে সে সব নিয়েও আলোচনা দরকার।” |
|
এআইসিসির সদর দফতরের সামনে ব্যস্ত রাহুল। ছবি: পিটিআই |
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, দেশকে আধুনিক ও প্রগতিশীলতার বার্তা দিতেই হয়তো আজ জেনেবুঝে ‘টিপিক্যাল’ রাজনীতিকদের মতো পোশাকে আসেননি রাহুল। দশ জনপথের পাঁচিলের গায়ে ছোট্ট দরজা গলে ২৪ আকবর রোডে যখন ঢুকছেন, পরনে জিনস। তার ওপর ঢিলেঢালা সাদা পাঞ্জাবি, পায়ে ব্রাউন লোফার। অতীতে যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব নেওয়ার সময় এ ভাবেই জিনস পরে এসেছিলেন রাজীব গাঁধীও। তবে তাঁর গায়ে ছিল টি-শার্ট।
সাজগোজ ‘ক্যাজুয়াল’ হলেও কংগ্রেসের সব সাধারণ সম্পাদক ও কর্মকর্তার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সে ধরনের আচরণ দেখাননি রাহুল। বলেছেন, সাংগঠনিক পরিবর্তনের জন্য জয়পুরে যে দিশা দেখিয়েছেন তিনি, তা এ বার পালন করতে হবে। কংগ্রেস ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করার চেষ্টা করতে হবে সবাইকে।
সূত্রের খবর, দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে রাহুল বলেন, কংগ্রেস নেতাদের সম্পর্কে ইদানিং মানুষের ধারণা ভাল নয়। মানুষ মনে করেন, এঁদের কোনও বিষয়ে হেলদোল নেই। কিন্তু জয়পুরে চিন্তন বৈঠকে যোগ দিয়ে বুঝেছি, কংগ্রেস নেতারা যতটা গভীরতার সঙ্গে কোনও বিষয় বিশ্লেষণ করতে পারেন, এবং সমাধানের পথ খুঁজতে পারেন, তা আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ বাইরের মানুষ সেটা জানেন না। তাই কংগ্রেসের বিপণনে আরও সক্রিয় হতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানান, এই দৃঢ়তা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াসও কিন্তু বিনয়ের সঙ্গেই করেছেন রাহুল। তাঁর অভিষেকের সঙ্গে সঙ্গে দলের বৃদ্ধতন্ত্রের ভিত যে কেঁপে গিয়েছে, তা তাঁর নজর এড়ায়নি। দলের অনেক বর্ষীয়ান নেতা এ-ও ভাবতে শুরু করেছেন যে, সাংগঠনিক রদবদলে কার কার ওপর কোপ পড়তে পারে। কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সঙ্গে এ দিনের বৈঠকে রাহুল আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন, নবীন প্রজন্মকে গুরুত্ব দিলেও প্রবীণদের অভিজ্ঞতাও তিনি পুঁজি করবেন। বলেছেন, “আপনারাই দলের মেরুদণ্ড। আপনাদের মধ্যে মেধার কমতি নেই।” অম্বিকা সোনি, মোতিলাল ভোরা, দ্বিগ্বিজয় সিংহের মতো বর্ষীয়ানদের উদ্দেশে রাহুল বলেন, “আপনাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন, যাঁদের রাজনৈতিক জীবন আমার বয়সের থেকেও বেশি। আপনাদের পরামর্শ নিয়েই চলতে চাই।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যেমন রাহুল আজ ইতিবাচক রাজনীতির কথা বলেছেন, তেমনই দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকেও সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, রাজনীতিতে আরও পরিশীলিত ভাষা ব্যবহার জরুরি। পরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক নেতা বলেন, যে সময়ে রাহুল দায়িত্ব নিলেন, তখন কংগ্রেস, সরকার, এমনকী দেশ সম্পর্কেও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। স্পেকট্রাম থেকে শুরু করে উপর্যুপরি দুর্নীতির ঘটনা যেমন দেশে বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলেছে, তেমনই সম্প্রতি গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে মানুষের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক বার্তা গিয়েছে। এতে ভাবমূর্তি মলিন হয়েছে সরকার এবং দলের। লোকসভা ভোটের আগে সেই পরিবেশটা ঘোরানোই রাহুলের সামনে চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া বিজেপি-র সভাপতি পদের দায়িত্ব নিয়ে রাজনাথ সিংহ আজ যে ভাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন, তার বিপরীতে ইতিবাচক রাজনীতির কথা বলে দৃষ্টান্তও স্থাপন করতে চাইলেন।
সার্বিক ভাবে রাহুলের এই মত ও পথের বাইরে কংগ্রেস সদর দফতরের আরও একটি ছবি উঠে এসেছে আজ। রাহুলকে স্বাগত জানাতে দলের বর্ষীয়ানরা যে ভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যে ভাবে তিনি বৈঠক করেছেন এবং তার পর সেই বৈঠকে তাঁর ভূমিকা নিয়ে যে ভাবে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন কংগ্রেস নেতারা, তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, আসলে এখন কংগ্রেসের রাশ তাঁরই হাতে। সনিয়া সভাপতি থাকলেও দল চালাবেন রাহুল গাঁধীই। |
|
|
|
|
|