সুভাষের আবেগ আঁকড়ে চলেছেন সর্দার
রকারের সাহায্য মেলেনি কোনও দিনই। তবু ঐতিহাসিক সত্যতাকে উপেক্ষা করে নয়, তাকে স্বীকার করে ও টিকিয়ে রাখতে বাঙালির নেতাজি আবেগকে সংরক্ষণ করছেন ঝাড়খণ্ডের এক পাঞ্জাবি সর্দার।
সেটা ১৯৪০ সাল। নেতাজির ভক্ত সহজানন্দ সরস্বতীর আহ্বানে অবিভক্ত বিহারের রামগড়ে এসেছিলেন নেতাজি। ততদিনে কংগ্রেস ছেড়ে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক তৈরি করে ফেলেছেন। ব্রিটিশ রাজত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে রামগড়ের জনসভায় তিনি ‘পূর্ণ স্বরাজ’-এর সপক্ষে জোর সওয়াল করেন। রামগড়ের পুরনো বাসিন্দারা জানান, ওই একই সময়, নেতাজির সভাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই শিবির করেছিলেন মহাত্মা গাঁধীও। যেখানে তাঁর নেতৃত্বে বক্তব্য রেখেছিলেন কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতারা।
অভিযোগ, ইতিহাসের এই অধ্যায়টিকে সে ভাবে সংরক্ষণ করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি বিহার সরকার, পরবর্তী ক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ড সরকার। এখানে ১৯৭৭ সালে কলকাতা থেকে অশোক ঘোষের নেতৃত্বে ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতারা রামগড়ে আসেন। ঠিক যে জায়গায় নেতাজি সভা করেছিলেন সেই ভরকুণ্ডা চকে ’৭৭ সালে অশোকবাবুর উদ্যোগে বসানো হয় সুভাষচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তি। আর সেই উদ্যোগে সামিল হন ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী, পাতিয়ালার বাসিন্দা মহেন্দ্র সিংহ গাঁধী। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছর, মূলত রামগড়ে নেতাজির স্মরণের দায়িত্ব তাঁরই। নিজের কাঁধে নিজেই তুলে নিয়েছেন এই দায়িত্ব। আজও মহেন্দ্রর উদ্যোগেই সুভাষ চকে পালিত হল নেতাজি জয়ন্তী। তবে এখন আর তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মী নন। এখন তিনি কংগ্রেস কর্মী। তা সত্ত্বেও তাঁর তৈরি করা নেতাজি জয়ন্তী কমিটির সদস্যরা প্রতিদিন সুভাষ চকে নেতাজির মূর্তিতে মালা দেন। জায়গাটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
সুভাষ-জয়ন্তীতে মহেন্দ্র সিংহ গাঁধী। বুধবার, রামগড়ে। —নিজস্ব চিত্র
মহেন্দ্রর অভিযোগ, “এক পয়সা সরকারি সাহায্য পাইনি কোনও দিন। নেতাজির স্মৃতি এখানে যতটুকু বেঁচে আছে তা মূলত অশোকবাবুর জন্যই। ১৯৯৭ সালে নেতাজি শতবর্ষে ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক চিত্ত বসুর নির্দেশে আবক্ষ মূর্তি বদলে আমরা নেতাজির একটি পূর্ণ মূর্তি বসাই। নেতাজি সারা দেশের মানুষের জন্য লড়াই করেছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আজ সেই দেশের মানুষই তাঁকে ভুলতে বসেছে। এই রামগড়ে তাঁর স্মৃতি রক্ষার কাজে কয়েকজন বাঙালি ছাড়া কেউ এগিয়ে এলেন না।”
রামগড়ের সুভাষ চকে মঞ্চ বেঁধে নেতাজির জন্মদিন পালন যে মূলত মহেন্দ্রর উদ্যোগেই হয় তা স্বীকার করেছেন সেখানকার মানুষও। পেশায় চামড়ার ব্যাগের প্রস্তুতকারক মহেন্দ্রর উদ্যোগেই ৭৭ সালের শেষের দিকে ভরকুণ্ডা চকের নাম হয় সুভাষ চক। রামগড়ে সুভাষচন্দ্রর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বিহার কিংবা ঝাড়খণ্ড---কোনও সরকারই যে উদ্যোগী হয়নি তা স্বীকার করেছেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্যও। ’৯৭ সালে নেতাজির শতবর্ষে যখন রামগড়ে নেতাজির পূর্ণ মূর্তি বসে তখন সুপ্রিয়বাবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তখন তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী। সুপ্রিয়বাবুর কথায়, “এটা ঠিক, নেতাজির স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য সরকারি স্তরে এখানে কোনও চেষ্টা হয়নি।”
রামগড় ছাড়া অবশ্য ধানবাদ, রাঁচি, জামশেদপুর, সাহেবগঞ্জের বিভিন্ন জায়গাতে আজ নেতাজির জন্মদিন পালন করা হয়। ধানবাদে বেঙ্গলি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রভাতফেরী বের করা হয়। মাকর্সবাদী সমন্বয় সমিতির নেতারাও নেতাজির জন্মদিবস পালন করেন। জামশেদপুরে বিষ্টুপুর কামানি সেন্টারে সুভাষ সাংস্কৃতিক পরিষদের সদস্যরা নেতাজির ছবিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বিষ্টুপুর মিলনী ক্লাবের পক্ষ থেকে নেতাজির নতুন মূর্তি উন্মোচন করা হয়। সাকচি বেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রভাতফেরী করা হয়। রাঁচিতে ইউনিয়ন ক্লাবে নেতাজির ছবিতে মালা দিয়ে মালা দিয়ে সম্মান জানানো হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.