|
|
|
|
দলের রাশ কিন্তু সঙ্ঘেরই হাতে |
কর্তৃত্ব দেখানোর চেষ্টা আডবাণীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাশ কার্যত সঙ্ঘেরই হাতে। নিতিন গডকড়ীর জায়গায় নতুন সভাপতি আনার সময়েও রাজনাথ সিংহ ছাড়া অন্য কোনও নাম বাছাইয়ের সুযোগ তারা রাখেনি। তবু আজ বিজেপি-র উপরে নিজের কর্তৃত্ব দেখানোর মরিয়া চেষ্টা করলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। নতুন সভাপতিকে পথনির্দেশ বাতলে দিয়ে।
এটা ঠিক যে, নিতিন গডকড়ীকে নিয়ে ঘোর আপত্তি ছিল আডবাণীর। কিন্তু শুধু তাঁর আপত্তির কারণেই যে গডকড়ীকে সরতে হল এমন নয়। সঙ্ঘ বুঝতে পেরেছিল, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে বিজেপি সভাপতি পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন নিতিন। তাঁর জায়গায় বসানো হল রাজনাথকে। সেই রাজনাথ, জিন্না-বিতর্কে রুষ্ট সঙ্ঘ আডবাণীর জায়গায় যাঁকে এনেছিল সভাপতি পদে। আরএসএসের সঙ্গে সেতুবন্ধনের কাজটা করতে গিয়ে ক্রমে-ক্রমে বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠায় সঙ্ঘ নেতৃত্বের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন রাজনাথ। কিন্তু গডকড়ীর বিকল্প বাছার সময় তাঁর উপরেই আস্থা রেখেছে সঙ্ঘ।
ঘটনা হল, এর আগে যখন রাজনাথের নাম উঠেছিল, তখন আপত্তি করেছিলেন আডবাণী। এ বার রাজনাথ ছাড়া অন্য কোনও নাম বাছার সুযোগ কার্যত রাখেনি নাগপুর। রাজনাথকে মেনে নিয়েছেন আডবাণীও। আজ বিজেপি দফতরে ব্যান্ড-নাকারা, উচ্ছ্বাসের মধ্যে সর্বসম্মত ভাবেই তিন বছরের জন্য সভাপতি হন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। মহেশ জেঠমলানী, যশবন্ত সিনহার মতো যাঁরা গডকড়ীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার হুমকি দিয়েছিলেন, রাজনাথের নাম মনোনীত হওয়ায় তাঁরাও লড়াই থেকে সরে আসেন। আডবাণী, সুষমা, অরুণ, মুরলীমনোহর জোশীর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের রাহুল সিংহ-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা প্রতিনিধিরা সকলেই রাজনাথের নামেই মনোনয়ন পেশ করেন। |
|
দলের সদর দফতরে আডবাণী-রাজনাথ। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পি টি আই |
কিন্তু তার পরেই কর্তৃত্ব দেখানোর চেষ্টায় আসরে নামেন আডবাণী। প্রকাশ্য মঞ্চেই তিনি রাজনাথকে মনে করিয়ে দেন তাঁর লক্ষ্যগুলি। এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে দলকে জয়ের মুখ দেখানো ও আগামী লোকসভা ভোটে জেতা যার অন্যতম। আডবাণীর আরও বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের নেতা হিসেবে বিশেষ করে সেখানে ভাল ফল করতে হবে রাজনাথকে। এর জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম ও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াই।
শুধু শহরে নয়, বিজেপি-কে ছড়িয়ে দিতে হবে গ্রামেও। দল হিসেবে বিজেপি যে অন্যদের থেকে আলাদা, সেটা বাস্তবে তুলে ধরতে হবে। এই সূত্রেই পরোক্ষে গডকড়ীকে কটাক্ষ করে আডবাণী বলেন, দুর্নীতি নিয়ে কোনও আপস করা চলবে না। শীর্ষ নেতাদের হয়ে উঠতে হবে আদর্শ, অনুকরণীয়। বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে গডকড়ী সরে দাঁড়ানোয় বিদায়ী সভাপতির তির্যক প্রশংসাও করেন তিনি।
বস্তুত, তিন বছরের মেয়াদ পেলেও আগামী এক বছরের মধ্যেই রাজনাথকে ফল দেখাতে হবে। অবিলম্বে কর্নাটক ও রাজস্থান সঙ্কট মেটাতে হবে তাঁকে। অল্প সময়ের মধ্যে গডকড়ীর হাতে গড়া টিমকে বদলে নতুন সদস্য এনে তাঁদের চাঙ্গা করাও এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ রাজনাথের সামনে। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, রাজনাথের বাস্তববোধ, ধৈর্ষ, সকলকে নিয়ে চলার ক্ষমতা কাজে লাগবে দলের উত্থানে। আজ তাঁর নির্বাচনের সময় শিবরাজ সিংহ চৌহান, অর্জুন মুন্ডা থেকে বরুণ গাঁধী উপস্থিত ছিলেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী থেকে নীতীশ কুমারও। মোদী তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা পুরুষোত্তম রূপালাকেও দিল্লি পাঠিয়েছেন।
কিন্তু রাজনাথের সব চেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ, আরও এক বার সঙ্ঘ এবং বিজেপি-র মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলা। বিশেষ করে আডবাণী যখন দলে প্রভাব বাড়াতে তৎপর। দলের এক নেতার মন্তব্য, “গডকড়ীর বিদায়ের পর আডবাণী আবার অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় ফিরে যেতে চাইছেন, যখন বিজেপির কাজে সঙ্ঘ নাক গলাতে পারত না। কিন্তু বিজেপি-র কিছু নেতা যতই চেষ্টা করুন, সঙ্ঘ আর রাশ আলগা করবে না। ফলে সঙ্ঘের সঙ্গে বিজেপির এই দ্বন্দ্ব সবে শুরু হয়েছে। এটি কোন দিকে গড়ায় তা এখন দেখার। কারণ, সভাপতির পদ নিয়ে বিতর্ক মিটলেও দলের নেতাদের মধ্যে কলহ মেটেনি। শুধু একটি বিষয়ে তাঁরা আপাত ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন মাত্র।”
এহেন কঠিন দায়িত্বের মুখে দাঁড়িয়ে রাজনাথ আজ বলেন, “সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় আঁচ পড়েছে দলের বিশ্বাসযোগ্যতায়। সেই অবস্থা থেকে দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে হবে।” কার্যত সঙ্ঘেরও লক্ষ্য এটা। বিজেপি কাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিবাদ করবে যন্তর-মন্তরে। সেটাও বস্তুত সঙ্ঘেরই কর্মসূচি। শিন্দের বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও ভাবছেন মোহন ভাগবতরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কাল যন্তর-মন্তরের কর্মসূচিতে রাজনাথের পাশে থাকবেন সুষমা স্বরাজ, গত কয়েক মাসে যিনি ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন সঙ্ঘের সঙ্গে। |
|
|
|
|
|