|
|
|
|
যাদবপুর |
রাতভর অবরোধ হটাল ক্ষিপ্ত জনতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
ছুটির সকাল, তবু যানজটের নিত্য যন্ত্রণা থেকে রেহাই মেলেনি শহরের। তবে আর পাঁচটা অবরোধ-যানজটের চেয়ে এ বারের ছবিটা ছিল অন্য রকম। দফায় দফায় পুলিশের আশ্বাসে যেখানে কাজ হয়নি, সেখানে ক্ষুব্ধ জনতার চাপেই উঠতে বাধ্য হন অবরোধকারীরা।
মঙ্গলবার রাত থেকেই যাদবপুর থানার সামনে চার মাথার মোড়ে অবরোধ করে বসে ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একাংশ। তার জেরে রাতে বাড়ি ফিরতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন অনেকেই। বুধবার সকাল অবধি একটানা অবরোধ চলতে থাকায় শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় তৈরি হয় যানজট। রাত থেকেই পুলিশকর্তারা দফায় দফায় অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। শেষমেশ যানজটে আটকে পড়া জনসাধারণ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁদেরই চাপে বুধবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে অবরোধ ওঠে।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সকালে। অবরোধকারীদের অভিযোগ, হস্টেলে থাকা ছাত্রদের জন্য এক রিকশাচালক রান্নার বাজার নিয়ে আসার সময়ে ‘নো এন্ট্রি’র অজুহাতে এক ট্রাফিক সার্জেন্ট তাঁর পথ আটকান এবং তাঁকে মারধরও করেন। জনা কয়েক ছাত্র প্রতিবাদ করলে ওই সার্জেন্ট দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ। তখন সেই ঝামেলা মিটলেও রাতে অবরোধ করেন ছাত্রেরা। ওই সার্জেন্টকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, এই দাবিতে সকাল অবধি অনড় থাকেন তাঁরা। |
|
বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়াদের অবরোধ। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিকে, অবরোধের জেরে এক দিকে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড ও ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস কানেক্টরে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। যানজট ছড়ায় এক দিকে গোলপার্ক, অন্য দিকে যাদবপুরের সুকান্ত সেতু পর্যন্ত। মঙ্গলবার রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে সমস্যায় পড়েন গড়িয়ার বাসিন্দা অনিল ঘোষ। তাঁর কথায়, “জনা পঞ্চাশ ছেলে মিলে রাস্তা আটকে রাখল। অথচ, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিল না। অনেক রাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।”
এ দিকে, সকাল হতেই রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। যানজটও জটিল আকার নেয়। পুলিশের অবশ্য দাবি, গাড়ি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকালে ফের পুলিশকর্তারা অবরোধকারীদের অভিযুক্ত সার্জেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিতে থাকেন। তাতেও অবরোধ তুলতে রাজি হননি ওই ছাত্রেরা।
এই সময়ে কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলপড়ুয়াদের অভিভাবকেরা পুলিশের কাছে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অবরোধকারীদের সঙ্গে বচসাও হয় তাঁদের। ইতিমধ্যে দলে দলে এসে জড়ো হন রাস্তায় আটকে পড়া যাত্রীরা। কার্যত তাঁদের চাপেই অবরোধকারীরা পিছু হঠে। শেষমেশ সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে অবরোধ উঠে যায়।
এক নিত্যযাত্রী অমিত রায় বলেন, “প্রশাসন বলে কিছু নেই এখন। হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। আটকে গেলাম অবরোধে। আমাদের কেন এই ভোগান্তি হবে? পুলিশ কেন অবরোধকারীদের সরিয়ে দিল না?”
ট্রাফিক-কর্মীদের একাংশের দাবি, ওই এলাকা কলকাতা পুলিশের আওতায় আসার পরে ধীর গতির যান চলাচলের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাকি সময়ে ‘নো এন্ট্রি’ থাকে। ওই সার্জেন্ট তাঁর দায়িত্বই পালন করেছেন। যদিও ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “ছাত্রেরা অভিযোগ করেছেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ কেন অবরোধ তুলতে পারল না? দিলীপবাবুর বক্তব্য, “আমরা কাল রাতে বুঝিয়েছিলাম। সকালে ফের আলোচনা হয়। তার পরে অবরোধ উঠে যায়।” অবশ্য এক পুলিশকর্তার দাবি, সাধারণ মানুষ ও তাঁদের যৌথ প্রচেষ্টাতেই ছাত্রেরা অবরোধ তুলে নেন। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল, তাতেই পিছু হঠে অবরোধকারীরা। পুলিশ কিছু করেনি। |
|
|
|
|
|