|
|
|
|
এ যেন অচেনা এক দেশ |
সুনন্দ ঘোষ |
চির-পরিচিত দীর্ঘ লাইন নেই। ট্রলির জন্য হাহাকার নেই। শৌচালয়ে ঢুকলে নাক সিঁটকে উঠছে না। কলকাতা বিমানবন্দরের এই চেনা দৃশ্য দেখতেই যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁরা নতুন টার্মিনালে পা দিয়ে প্রায় চমকে উঠলেন। বর্তমান টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালের ফারাক এতটাই যে, সেটা নাদিম আলম, শৈবাল মিত্র বা শ্রীধর রাও-দের চোখে পড়ল বেশি করে। নতুন ট্রলি, পরিষ্কার টার্মিনাল, ঝকঝকে ডিসপ্লে-বোর্ড দেখে তাঁরা খানিকটা অবাক-ই। যাত্রীদের মধ্যে যাঁরা বিদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ঘুরে বেড়ান, তাঁরা অবশ্য নতুন টার্মিনালের ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি সতর্কও করে দিলেন কর্তৃপক্ষকে।
তেমনই এক যাত্রী রোজারিয়া ডেলটন। ভারত-ভ্রমণে এসেছেন। বুধবার নতুন টার্মিনাল থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে দিল্লি গেলেন। সিঙ্গাপুর, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, মালয়েশিয়া-সহ তাবড় বিমানবন্দর ঘুরেছেন তিনি। কলকাতার নতুন টার্মিনাল সম্পর্কে তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, “পারফেক্ট। সুন্দর এবং বিশ্ব মানের। কিন্তু, ক’দিন ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে দেখলাম, কোনও ভাল জিনিসের সে ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। সমুদ্র-সৈকত থেকে জঙ্গল, রাস্তা থেকে রেল স্টেশন, সর্বত্র নোংরা হয়ে আছে। ডাস্টবিন ব্যবহারের চল নেই। এই মানসিকতা থাকলে টার্মিনালের সৌন্দর্য বছরের পর বছর ধরে রাখাটা কিন্তু মুশকিল।” |
...এ কোন ছবি রে
|
ইতালির এই যাত্রীর ক্যামেরায় বন্দি হল নয়া টার্মিনালের প্রথম উড়ান।
বুধবার, কলকাতা বিমানবন্দরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক। |
তবে এ বার কোমর বেঁধে নেমেছেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মার কথায়, “নতুন টার্মিনালের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে সব রকম চেষ্টা করা হবে। তাই আমরা পেশাদারিত্বের দিকে ঝুঁকছি। এটা শুরু। আমরা পারি কি না তা দেখার জন্য যাত্রীদের আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।” ২০ জানুয়ারি উদ্বোধন হয় নতুন টার্মিনালের। বুধবার সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে এয়ার ইন্ডিয়াকে দিয়ে উদ্বোধনী উড়ান চালানো হল। এ বার বন্ধ থাকবে এই টার্মিনাল। যাত্রীদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিতে সময় লাগবে আরও কয়েক মাস। যদিও অনেকেরই ধারণা ছিল, বুধবার থেকে সমস্ত উড়ানের যাত্রীদের জন্যই খুলে দেওয়া হয়েছে নতুন টার্মিনাল। তাই, কলকাতা থেকে আগরতলার উড়ান ধরতে সকালে সটান নতুন টার্মিনালে পৌঁছে যান বিশ্বজিৎ সরকার। পরে ভুল বুঝে তাঁকে ফিরে যেতে হয় পুরনো টার্মিনালে। একই ভুল হয় এমিরেট্স-এর যাত্রী এস কে নারেডিরও। এ দিন নতুন টার্মিনাল দিয়ে যাঁদের যাওয়ার কথা ছিল, তাঁদের প্রায় সকলকেই এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে আগাম বার্তা পাঠানো হয়েছিল। বার্তা পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার মালা মেটা লাউডন স্ট্রিট থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলেন বিমানবন্দরের দিকে। দিল্লি পৌঁছনোর পরে ফোনে বলেন, “ভালই লাগল। তবে, এখনও অনেক কাজ বাকি। কোনও দোকান নেই। বড় বড় বিদেশি ব্র্যান্ডের বিপণি ছাড়া অন্য কিছু বেখাপ্পা লাগবে এখানে। অনেকটা হেঁটে গিয়ে যেখানে বিমানে উঠতে হয়, সেই সব আধুনিক বিমানবন্দরে ছোট মাপের ট্রলি থাকে। বিমান থেকে নামার পরে বা ওঠার আগে ওই ট্রলিতে হাত-ব্যাগ রাখা সুবিধাজনক। এখানে সে সব দেখলাম না।”
এ দিন সকালে বি পি শর্মা ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান যাত্রীদের। ছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার জেনারেল ম্যানেজার গৌতম সাহা, কলকাতায় ডিজিসিএ-এর প্রতিনিধি সানিত কুমার, সিআইএসএফ-এর কম্যান্ডান্ট রাকেশ রাজা। সকালে যাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য খাবারের অস্থায়ী স্টলও করা হয়েছিল। খোলা হয়েছিল এগ্জিকিউটিভ লাউঞ্জও। এয়ার ইন্ডিয়ার ১৫০ জন যাত্রীর মধ্যে ৭ জন ছিলেন সেই শ্রেণির যাত্রী। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগই লাউঞ্জে বসে সময় নষ্ট করতে চাননি। বরং ঘুরে দেখেন নতুন টার্মিনাল। বিমানের যাত্রী মণি পাটানির কথায়, “বহু দিন পরে গর্ব করার মতো কিছু একটা পেল কলকাতা।” |
|
|
|
|
|