ক্ষুব্ধ ফব, বিভেদ চান না সূর্য
আর রেড রোড নয়, নেতাজি জয়ন্তীতে
লাখ লোকে এলগিন ভরাবেন মমতা
সৌজন্য দেখাতে গত বছর রেড রোডে নেতাজি-জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের আগে বাম নেতাদের শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি। আর এ বার রাজ্য সরকারের গোটা অনুষ্ঠানটিকেই নেতাজি ভবনে সরিয়ে নিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! জানালেন, আগামী বছর থেকে অনুষ্ঠান হবে নেতাজি ভবনের বাইরে, এলগিন রোডে। রাস্তার উপরে। এবং সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এক লক্ষ মানুষ। রেড রোডে নেতাজি-মূর্তির পাদদেশ থেকে সরকারি অনুষ্ঠানের এ ভাবে সরে যাওয়া নিয়ে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করলেন প্রবীণ ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অশোক ঘোষ। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর বক্তব্য, ভেদাভেদ না করে এমন একটা অনুষ্ঠান এক সঙ্গে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
দীর্ঘ দিন ধরেই নেতাজি-জয়ন্তীর সরকারি অনুষ্ঠান হয়ে এসেছে রেড রোডে। কিন্তু মাত্র দু’দিন আগে, সোমবার, এলগিন রোডে নেতাজি ভবনে অনুষ্ঠানের বরাবরের উদ্যোক্তা নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো-কে জানানো হয়, সরকারি অনুষ্ঠানও এ বার সেখানে হবে। এবং থাকবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। রিসার্চ ব্যুরোর ধারণাই ছিল না, সরকারি উদ্যোগে ঠিক কী হতে চলেছে সেখানে। আসলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোনও কোনও বছর সেখানে গেলেও সরকারি অনুষ্ঠানটি পালিত হয় রেড রোডেই। গত বছরও যেমন মমতা নেতাজি ভবনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, কিন্তু রাজ্য সরকার নেতাজি-জয়ন্তী পালন করেছিল রেড রোডে। ব্যতিক্রম হল এ বারই।
বুধবার নেতাজি-ভবনে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্য মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাস, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও স্থানীয় সাংসদ সুব্রত বক্সী। নেতাজি ভবনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী শুধু নেতাজির স্মরণে বক্তৃতাই দেননি, পুরোদস্তুর আয়োজকের ভূমিকাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে! কখনও মাইক হাতে ভিড় সামলানোর চেষ্টা, কখনও পুলিশকে, কখনও চিত্র-সাংবাদিকদের ধমক সবই করেছেন তিনি।
খুদেদের সঙ্গে। নেতাজি ভবনে। পাশে সুভাষ-তনয়া অনিতা, সুগত বসু। —নিজস্ব চিত্র
অনুষ্ঠান নিয়ে সরকারের বেমক্কা সিদ্ধান্ত বদলের জেরে এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ নেতাজি ভবনের স্বল্প পরিসরে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি ভিড়ে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে চূড়ান্ত অব্যবস্থা। মুখ্যমন্ত্রী তখন ঘোষণা করলেন, “জায়গা খুব কম। যে-যেখানে আছেন, বসে পড়ুন।” কিন্তু মানুষ বসবেন কোথায়? দাঁড়ানোরই জায়গা নেই! তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, আগামী বছর থেকে অনুষ্ঠান হবে এলগিন রোডে, নেতাজি ভবনের বাইরে।
এ বছরই কেন এলগিন রোডে রাস্তার উপরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল না, সে জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর প্রতি উষ্মাও প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের ক্ষমা করবেন। নন্দিনী চক্রবর্তীকে আমি এখনই নির্দেশ দিচ্ছি, পরের বার বাইরে মঞ্চ করবেন। এ বারও কিন্তু আমি বলেছিলাম। আপনারা কী করে আশা করেন, এই টুকু জায়গার মধ্যে এত মানুষের স্থান সঙ্কুলান হবে?’’ সেই সময়ে ‘খুদে নেতাজি’ সেজে আসা ১১৭ জন কচিকাঁচাদের বাইরে যাওয়ার পথ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, “যাও বাবু, লক্ষ্মী ছেলে হয়ে বাড়ি যাও। আজ সারা দিন ‘জয় হিন্দ’ করবে। নেতাজিকে মনে রাখবে।”
রেড রোডের অনুষ্ঠানে অবশ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় গিয়েছিলেন। বাম নেতাদের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য বিনিময় হয়। অশোক ঘোষের পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন সুব্রতবাবু। মালা দিতে যান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও। রেড রোডে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে আনুষ্ঠানিক ভাবে
ধন্যবাদ জানান বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। তবে সরকারি উদ্যোগে ময়দানে নেতাজি-জয়ন্তী উদ্যাপনের ব্যবস্থা না-হওয়া এবং সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর না-আসার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন অশোকবাবু। রেড রোডের অনুষ্ঠান এ বার কার্যত হয়েছে বামেদের উদ্যোগেই।
নেতাজি ভবনে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ও মুখ্যমন্ত্রী একে অপরের প্রশংসা করেন। রাজ্যপাল বলেন, “আমি আশা করি, নেতাজির কাজ ও আদর্শে দেশবাসী অনুপ্রাণিত হবেন। এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আহ্বান জানাচ্ছি।” আর মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, “আমাদের রাজ্যপাল খুবই সক্রিয়। আমাদের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তিনি উপস্থিত থাকেন।” রাজ্যপাল পরে রেড রোডে গিয়ে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে মালা দেন।
রাজ্যপাল রেড রোডে পৌঁছলে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমানবাবুও। এ বার রাজ্য সরকার নেতাজি মূর্তিতে কোনও অনুষ্ঠান না করা প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, “আমিই তো সরকারের প্রধান। আমি এসেছি শ্রদ্ধা জানাতে।” পরে সূর্যবাবু বলেন, “আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বোঝানোর চেষ্টা করব, আবার কী করে এক মঞ্চেই অনুষ্ঠান করা যায়। নেতাজির মতো কারও জন্মদিনে রাজনীতি বাধা হয়ে দাঁড়াক, এটা চাই না।”
কুশল বিনিময়: রেড রোডে নেতাজি-জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: প্রদীপ আদক
অশোকবাবু জানান, রাজ্যপালকে যে ভাবে ‘লুকিয়ে লুকিয়ে’ এসে মালা দিয়ে চলে যেতে হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে আর না-হওয়াই বাঞ্ছনীয়! ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারি অনুষ্ঠান না-হওয়ায় ক্ষোভ গোপন করেননি অশোকবাবু। পূর্ত দফতর প্রতি বার রেড রোডে নেতাজি মূর্তিতে মালা দেওয়ার সুবিধার্থে সিঁড়ি তৈরি করে। এ বার তা হয়নি। সুব্রতবাবু বলেন, “কেন করেনি, তা আমি জানি না।”
রাজ্য সরকারের তরফে নেতাজি-জয়ন্তী পালনের শুরু এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের সামনে প্রভাতফেরি থেকে। ওই প্রভাতফেরির উদ্যোক্তারাই ১১৭ জন খুদেকে নেতাজি সাজিয়ে নিয়ে যান। প্রভাতফেরি শেষ হয় নেতাজি ভবনে। প্রভাতফেরিতে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা সকলে নেতাজি ভবনে ঢুকতে গেলে পুলিশ আটকায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীই নেতাজি ভবনের সদর দরজায় দাঁড়িয়ে সকলকে ঢোকানোর ব্যবস্থা করেন। তাঁর কথায়, “নেতাজির জন্মোৎসব পালিত হবে আর নেতাজি ভবনে জনগণের পদধ্বনি হবে না, এটা হতে পারে না।”
তা হলে কি নেতাজি ভবনের অনুষ্ঠানও মমতা ‘হাইজ্যাক’ করে নিলেন? যেমন ক’দিন আগেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শেষ যাত্রার দখল নিয়েছিলেন। নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো-র পক্ষে সুগত বসু অবশ্য বলেন, “রিসার্চ ব্যুরো-র অনুষ্ঠান যথারীতি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্তই হয়েছে। বেলা ১২টার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের অনুষ্ঠান নেতাজি ভবনে করেছে, আমাদের সঙ্গে যৌথ ভাবে। সরকারের তরফে জানানো হয়, নেতাজির জন্ম মুহূর্তের সময়কে মনে রেখে সেই সময়ে তাঁরা শ্রদ্ধা জানাতে চান নেতাজি ভবনের মঞ্চেই।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.