অশোধিত তেল বাজি রাখুন ‘তরল সোনায়’
সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এবং শিল্প ক্ষেত্রে শক্তির উৎস হিসেবে অশোধিত তেল রয়েছে প্রথম সারিতে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগাম লেনদেনের বাজারেও এর কেনা-বেচার পরিমাণ অন্য অনেক পণ্যের চেয়ে বেশি।
ভারতে আগাম পণ্য লেনদেনের বাজারে অশোধিত তেল কেনা-বেচা শুরু হয় ২০০৬ সালে। এখন দিনে তার লেনদেনের অঙ্ক ছুঁয়েছে প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা। সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডব্লিউটিআই সুইট ক্রুড (সালফারের পরিমাণ কম) তেলের লেনদেন হয়। এ ছাড়াও রয়েছে ব্রেন্ট (বেশি সালফার), মিড্ল ইস্ট (অত্যধিক সালফার, এই ধরনের তেলই ভারত বেশি আমদানি করে) ইত্যাদি। তবে এগুলি লেনদেনের পরিমাণ খুব কম।

কী ভাবে চলে লেনদেন?
• দেশে পণ্য বাজারে অশোধিত তেল লেনদেনের প্রায় পুরোটাই হয় এমসিএক্স স্টক এক্সচেঞ্জ-এর মাধ্যমে।

• লগ্নিকারী ন্যূনতম ১০০ ব্যারেল তেল কেনা-বেচা করতে পারেন।

• বিদেশে তেলের দাম ব্যারেলে ৯০ ডলার হলে ভারতে ওই ১০০ ব্যারেল তেলের দাম ৯০x১০০x৫৫= ৪,৯৫,০০০ টাকা (ডলারে টাকার দর ৫৫ টাকা ধরে)। অর্থাৎ বিদেশের দর x পণ্যের পরিমাণ x ডলারে টাকার দর= মোট লগ্নি মূল্য। এই হিসেবে এক ব্যারেলের দাম ৪,৯৫০ টাকা।

• আবেদনের সময়েই পণ্যের দামের প্রায় ৬% মার্জিন মানি হিসেবে দিতে হয়। উপরের হিসাবে ৪.৯৫ লক্ষ টাকার ৬% দাঁড়াবে প্রায় ৩০,০০০।

• লগ্নিকারী পণ্য বাড়ি নিয়ে যান না। তাই সাধারণ ভাবে টাকার অঙ্কে লাভ-ক্ষতির হিসাব করা হয়।

• অশোধিত তেলের ক্ষেত্রে টিক সাইজ ১ টাকা। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেলের দাম হবে ৪,৯৫০ টাকা বা ৪,৯৫১ টাকা। কিন্তু কখনওই তা ভগ্নাংশ হবে না। লাভ-ক্ষতি হিসেব করতে কাজে আসে এই ‘টিক সাইজ’।

• তেলের দাম ১ টাকা বাড়লে বা কমলে লগ্নিকারীর ১০০ টাকা লাভ বা ক্ষতি হতে পারে। ধরে নেওয়া হচ্ছে ন্যূনতম পরিমাণের (১০০ ব্যারেল) পণ্যই কিনবেন তিনি।

• সাধারণত দিনে তেলের দাম প্রায় ১% (৫০ টাকা) বাড়ে বা কমে। তাই কোনও লগ্নিকারী একই দিনে তেল কেনা-বেচা করলে তাঁর ৫,০০০ টাকা লাভ বা ক্ষতি হতে পারে।

• তেল কেনা-বেচার আগে জেনে রাখুন, কী ভাবে বিশ্ব জুড়ে পণ্যটির দামের ওঠা-পড়া চলে। যার ভিত্তিতে আগাম পণ্য লেনদেনের বাজারে কষা হবে আপনার লাভ-ক্ষতির হিসাব।

চাহিদা-জোগানের ফারাক
প্রাথমিক ভাবে যে কোনও পণ্যেরই দাম নির্ভর করে বাজারে তার চাহিদা ও জোগানের উপর। অশোধিত তেলও ব্যতিক্রম নয়। যদি উৎপাদন সীমিত থাকে ও চাহিদা বাড়ে, তা হলে দাম বাড়বে। আর চাহিদার তুলনায় বেশি পণ্য থাকলে কমবে দাম।

শেয়ার বাজারের ওঠানামা
অশোধিত তেলের দাম বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ার বাজারের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বাজার নিম্নমুখী থাকলে সংস্থাগুলি ধরে নেয় পণ্যের চাহিদা কমবে। তাই বাড়তি পণ্য উৎপাদন বন্ধ রাখে তারা। ফলে শিল্পে অশোধিত তেলের চাহিদাও কমে যায়। যার জেরে কমে দাম। ফলে শেয়ার বাজারের গতিবিধি দেখে তেলের দাম উঠবে না পড়বে, তার কিছুটা আন্দাজ করা যায়। সে ক্ষেত্রে নজর রাখতে পারেন ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ, ন্যাসডাক, এস অ্যান্ড পি ইত্যাদির মতো বিদেশের শেয়ার সূচকের দিকে।

দামের পূর্বাভাস
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর নিয়ে মাঝে মাঝে পূর্বাভাস করে থাকে মার্কিন তেল মন্ত্রক। সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুসারে, ব্রেন্ট ক্রুড-এর দাম ২০১২ সালে ব্যারেলে গড়ে ১১২ ডলার থাকলেও, ২০১৩ সালে তা গড়ে ১০৫ ডলার এবং ২০১৪ সালে ৯৯ ডলারে দাঁড়াবে।
তেল লেনদেনের বড় এক্সচেঞ্জ
• বিশ্বে অশোধিত তেল লেনদেনের সব থেকে বড় এক্সচেঞ্জ হল নিউ ইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ (এনওয়াইএমইএক্স)। এখানে বেশি পরিমাণ ডব্লিউটিআই তেল লেনদেন হয়।

• ব্রেন্ট লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম এক্সচেঞ্জ (আইপিই)।

• এশিয়ায় শীর্ষ সারিতে আছে জাপানের টোকিও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (টোকোম) এবং ভারতের এমসিএক্স।

ডলারের দাম
ডলারের দামের উপর অনেকটা নির্ভর করে তেলের দামের ওঠা-পড়া। ডলারের দাম বাড়লে, তেলের দাম বাড়ে। আর কমলে উল্টোটা হয়।

ওপেকের উৎপাদন রিপোর্ট
তেল রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন অর্গানাইজেশন অফ দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)। নির্দিষ্ট দিন অন্তর বৈঠকে বসে ওপেক ঠিক করে কোন দেশ কত তেল উৎপাদন ও রফতানি করবে। এই কারণে বিশ্ব জুড়ে অশোধিত তেলের দরও তারাই কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতি বুধবার রাত ৮.৩০ মিনিটে মার্কিন তেল মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে উৎপাদনের রিপোর্ট দেখতে পাওয়া যায়। বিচক্ষণ লগ্নিকারী www.eia.gov ওয়েবসাইটে চোখ রাখেন আগামী দিনে তেলের জোগান ও দর কী হতে পারে, সেই আভাস পেতে।

ভারত ও চিনের চাহিদা
ওপেকের মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলির অভ্যন্তরীণ চাহিদা বিশ্ব বাজারে পণ্যটির দর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ সাধারণ ভাবে অন্যান্য দেশের থেকে ওই সব বাজারে তেলের চাহিদা বেশি। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছে ভারত ও চিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুই দেশের উপর ভর করেই ২০১৩-র দ্বিতীয়ার্ধে উন্নয়নশীল দেশগুলির চাহিদা ওপেক দেশগুলিকে ছাড়িয়ে যাবে।

মার্কিন শ্রম দফতরের রিপোর্ট
দেশে বেকারের সংখ্যা নিয়ে প্রতি মাসে রিপোর্ট পেশ করে মার্কিন শ্রম দফতর। মার্কিন অর্থনীতি কী অবস্থায় রয়েছে, তা বোঝার জন্য এই রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেকার সংখ্যা বেশি হলে মানুষের পণ্য কেনার ক্ষমতা কম বলেই ধরে নেওয়া হয়। ফলে সে দেশের বাজারে চাহিদাও কমে। আর সে জন্য পণ্যের দামও কমে। ঠিক এর উল্টোটা ঘটে যদি এই রিপোর্ট ভাল হলে। তেলের ক্ষেত্রেও তাই হয়।

প্রাকৃতিক গ্যাসের দর
অশোধিত তেলের বিকল্প হিসেবে বহু জায়গায় এখন প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। আমেরিকায় চাহিদার তুলনায় বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন হওয়ায় তার দামও কমেছে। যে জন্য ডব্লিউ টি আই সুইট ক্রুড-এর ক্ষেত্রে অশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দরের অনুপাত নেমেছে ৩১:৮-এ। আগে ছিল ৫২:১। প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ৮.৩০ মিনিটে মার্কিন তেল মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে এই গ্যাস উৎপাদন রিপোর্ট দেখা যায়।

লেখক এমসিএক্স স্টক
এক্সচেঞ্জ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, (মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.