কর বাঁচাতে আর দু’মাস
শীত এ বার জাঁকিয়ে পড়েছিল। তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার মতো। সঙ্গে ছিল নলেন গুড়ের সন্দেশ, জয়নগরের মোয়া, ক্রিকেট আর লেপ -কম্বলের উষ্ণ পরশ। বাঙালিকে আর পায় কে ! কিন্তু সব ভাল জিনিসের মতো শীতের মেয়াদও ফুরিয়ে এসেছে। আসছে বাজেট এবং করের মরসুম। কাজ ফেলে রাখার ব্যাপারে বাঙালির ভালই বদনাম আছে। কিন্তু করের ব্যাপারে ১৮ মাসে বছর হলে চলবে না। এরই মধ্যে প্রায় ১০ মাস আমরা পিছনে ফেলেছি। কর সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করার জন্য হাতে সময় আছে আর বড়জোর দু’ মাস। ওভার প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। সুতরাং খেলতে হবে হাত চালিয়ে। কর বাঁচানোর জন্য যাঁরা এখনও সঞ্চয় করে উঠতে পারেননি, তাঁদের এখনই মাঠে নেমে পড়া ছাড়া উপায় নেই।তাই একেবারে শেষ মুহূর্তের প্র্যাক্টিসের মতো বার একনজরে আমরা দেখে নেব, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে আয়করের হার, কোন প্রকল্পে কতটা সঞ্চয় করলে কী পরিমাণ কর সাশ্রয় হওয়া সম্ভব এবং সেই সঙ্গে কর সংক্রান্ত আরও বেশ কিছু তথ্য।

লক্ষ পর্যন্ত লগ্নিতে ছাড়
বছরে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর কোনও কর দিতে হয় না। আয় এই মাত্রা ছাড়ালে আয়ের স্তর অনুযায়ী বিভিন্ন হারে কর ধার্য হয়। এই করের একটি অংশ বাঁচানো সম্ভব সময় থাকতে বিভিন্ন কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে লগ্নি করে। আয়কর আইনের ৮০সি, ৮০সিসিসি এবং ৮০সিসিডি ধারার অধীনে এক বা একাধিক প্রকল্পে মোট লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করলে, লগ্নির সমপরিমাণ অর্থ বাদ দেওয়া হয় করযোগ্য আয় থেকে। অর্থাত্ওই পরিমাণ অর্থের উপর কোনও কর দিতে হয় না।
যেমন, কোনও ব্যক্তির সব সূত্র থেকে যদি মোট করযোগ্য আয় হয় .৩০ লক্ষ টাকা এবং তিনি যদি ওই বছরে বিভিন্ন কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে সর্বসাকুল্যে ৮০ হাজার টাকা লগ্নি করে থাকেন, তবে তাঁকে কর দিতে হবে .৫০ লক্ষ টাকার উপর।
যে-সব প্রকল্পে লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করে কর ছাড় পাওয়া যায় সেগুলি হল : সংস্থাগত প্রভিডেন্ট ফান্ড, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইক্যুইটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মিউচুয়াল ইউনিট (ইএলএসএস), জাতীয় সঞ্চয়পত্র, ৫ বছর মেয়াদি ব্যাঙ্ক জমা, পেনশন প্রকল্প, জীবন বিমার প্রিমিয়াম, সন্তানের শিক্ষা বাবদ খরচ ইত্যাদি।

সাশ্রয়ের অন্য পথ
ছাড়াও কর বাঁচানোর আরও কয়েকটি রাস্তা আছে।
• ৮০ডি ধারায় কর বাঁচানো যায় স্বাস্থ্যবিমা বাবদ প্রিমিয়াম দিয়ে।
• ৮০জি ধারায় কর সাশ্রয় হয় স্বীকৃত দাতব্য সংস্থায় দান করে।
• ৮০ই ধারায় করছাড় পাওয়া যায় শিক্ষাঋণ বাবদ দেওয়া সুদের উপর।
• করছাড় পাওয়া যায় গৃহঋণের জন্য দেওয়া সুদের উপরও।
• নির্ভরশীল অক্ষম ব্যক্তির ভরণপোষণ এবং চিকিত্সা বাবদ খরচের উপর কর রেহাই পাওয়া যায় আয়কর আইনের ৮০ডিডি ধারা অনুযায়ী।
• চলতি আর্থিক বছরে করছাড় দিতে ৮০সি সি জি নামে একটি নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করেন এমন ব্যক্তি রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস প্রকল্পে যদি ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করেন, তবে তার ৫০ শতাংশের উপর কর রেহাই পাবেন। কোন কোন প্রকল্পে লগ্নি করলে এই সুবিধা মিলবে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ন্যাশনাল এবং মুম্বই শেয়ার বাজারকে দিয়েছে সেবি। সময় যেহেতু ফুরিয়ে আসছে, মানুষ চাইছেন আর দেরি না - করে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।
• আরও একটি বড় সুবিধা করদাতারা পেয়েছেন চলতি আর্থিক বছরে। ৮০টি টি ধারা অনুযায়ী সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বছরে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রাপ্ত সুদ থাকবে পুরোপুরি করমুক্ত।
পরিকাঠামো বন্ডে লগ্নির উপর করছাড় অবশ্য প্রত্যাহার করা হয়েছে ২০১২ - ’১৩ আর্থিক বছরে। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল কোন প্রকল্পে কতটা লগ্নি করলে কী পরিমাণ করছাড় মিলতে পারে, তার হদিস।
যাঁরা কোনও সংস্থায় চাকরি করেন, তাঁদের কর সাশ্রয়কারী লগ্নি আগেভাগেই করে ফেলতে হয়। শেষ মাসের জন্য বসে থাকলে চলে না। লগ্নির পরিমাণ সময় মতো জানালে সেই অনুযায়ী শেষ মাসগুলিতে কর কাটা হয়ে থাকে।

করমুক্ত আয়
বার আসা যাক করমুক্ত আয়ের কথায়। কতগুলি সূত্র থেকে আয় পুরোপুরি করমুক্ত থাকে। এগুলি হল :
• শেয়ারের ডিভিডেন্ড বাবদ আয়
• মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ডিভিডেন্ড বাবদ আয়
• পিপিএফ অ্যাকাউন্টে সুদ বাবদ আয়
• করমুক্ত বন্ড থেকে সুদ বাবদ আয়
• সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সুদ বাবদ ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়
• প্রভিডেন্ট ফান্ডে নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত সুদ বাবদ আয়

রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক
শুধু সময় মতো কর দিলেই হল না। কর সংক্রান্ত রিটার্ন জমা দেওয়াও কিন্তু বাধ্যতামূলক। যাঁদের করযোগ্য আয় নেই, তাঁদের অবশ্য রিটার্ন জমা না -দিলেও চলে। অবশ্য উত্সমূলে কেটে নেওয়া কর (টিডিএস ) ফেরত পাওয়ার জন্য রিটার্ন জমা করা আবশ্যক। বিভিন্ন শ্রেণির করদাতার রিটার্ন দাখিল করার জন্য আছে ভিন্ন ভিন্ন ফর্ম। এগুলি হল আইটিআর -১, ২ এবং আইটিআর -৪। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার শেষ দিন সাধারণত ৩১ জুলাই।

নেটে হেঁটে রিটার্ন
হাতে ফর্ম ভর্তি করে রিটার্ন দেওয়ার পাশাপাশি, অনলাইনে -ফাইলিং করে রিটার্ন জমা দেওয়ারও সুযোগ আছে। বস্তুত, আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি হলে -ফাইলিং বাধ্যতামূলক। -ফাইল করে রিটার্ন জমা দিলে দ্রুত অ্যাসেসমেন্ট হয়, রিফান্ডও পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি। অ্যাসেসমেন্ট বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে রিটার্ন জমা না -দিলে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। যে সব চাকরিজীবীর আয় লক্ষ টাকার মধ্যে, তাঁদের সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদ বাবদ আয় যদি অনধিক ১০ হাজার টাকা হয় এবং অন্যান্য সূত্র থেকে কোনও আয় না - থাকে, তবে তাঁরা ইচ্ছা করলে রিটার্ন না - দাখিল করতে পারেন।

কোন ধারায় কত ছাড়
আয়কর আইনের ধারা প্রকল্পের নাম সর্বাধিক রেহাই (টাকা)
৮০সি,
৮০সিসিসি
৮০সিসিডি
ইপিএফ, পিপিএফ, এনএসসি, ইএলএসএস, ৫ বছর
মেয়াদি ব্যাঙ্ক জমা, জীবন বিমার প্রিমিয়াম, পেনশন
প্রকল্পে জমা, গৃহঋণের মূল টাকা শোধ, সন্তানের
শিক্ষা বাবদ খরচ ইত্যাদি করযোগ্য আয় থেকে
সব প্রকল্প মিলিয়ে বছরে
লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নির
অঙ্ক বাদ দেওয়া হয়
৮০ডি মেডিক্লেম (স্বাস্থ্যবিমা) প্রিমিয়াম বাবদ বছরে ১৫,০০০ টাকা, অতিরিক্ত ১৫,০০০ টাকা নির্ভরশীল পিতামাতার জন্য।
প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে ২০,০০০ টাকা
৮০ডিডি নির্ভরশীল অক্ষম ব্যক্তির চিকিত্সা
এবং ভরণপোষণ বাবদ খরচ
বছরে ৫০,০০০ টাকা। বিশেষ
অক্ষমতার ক্ষেত্রে বছরে লক্ষ টাকা
৮০ই শিক্ষাঋণের উপর সুদ (নিজের /স্বামী
/স্ত্রী /সন্তানের উচ্চশিক্ষা বাবদ)
প্রকৃত সুদ
৮০জি স্বীকৃত দাতব্য সংস্থায় দান সংস্থা /প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী দানের ৫০
অথবা ১০০ শতাংশ। দানের পরিমাণ
মোট আয়ের ১০ শতাংশের মধ্যে হতে হবে
২৪ গৃহঋণের উপর সুদ বাবদ ব্যয় .৫ লক্ষ টাকা
৮০টিটিএ সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বাত্সরিক সুদ ১০,০০০ টাকা
৮০সিসিজি রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিম ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়যুক্ত করদাতারা
৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত নির্দিষ্ট
ইক্যুইটিতে লগ্নির ৫০ শতাংশের
উপর করছাড় পাবেন
১০ চাকুরিজীবীর যাতায়াত খরচ মাসে ৮০০ টাকা
আগাম কর
চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে দেয় কর বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়। স্বনিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিজেকেই হিসেব করে কর জমা করতে হয়। এর নাম অ্যাডভান্স ট্যাক্স। এই আগাম কর জমা করার সময় হল :
কিস্তি করের পরিমাণ জমা করার শেষ তারিখ
১ম ৩০ শতাংশ ১৫ সেপ্টেম্বর
২য় ৬০ শতাংশ ১৫ ডিসেম্বর
৩য় ১০০ শতাংশ ১৫ মার্চ
কত আয়ে কত কর
আয় করের হার
প্রথম ২,০০,০০০ টাকা
২,০০,০০১ টাকা থেকে ৫,০০,০০০ টাকা
৫,০০,০০১ টাকা থেকে ১০,০০,০০০ টাকা
১০,০০,০০১ টাকা এবং তার বেশি
শূন্য
১০ শতাংশ
২০ শতাংশ
৩০ শতাংশ
প্রবীণ নাগরিক (সিনিয়র সিটিজেন)
প্রথম ২,৫০,০০০ টাকা
২,৫০,০০১ টাকা থেকে ৫,০০,০০০ টাকা
৫,০০,০০১ টাকা থেকে ১০,০০,০০০ টাকা
১০,০০,০০১ টাকা এবং তার বেশি

শূন্য
১০ শতাংশ
২০ শতাংশ
৩০ শতাংশ

অতি প্রবীণ নাগরিক (সুপার সিনিয়র সিটিজেন)
প্রথম ৫,০০,০০০ টাকা
৫,০০,০০১ টাকা থেকে ১০,০০,০০০ টাকা
১০,০০,০০১ টাকা এবং তার বেশি
শূন্য
২০ শতাংশ
৩০ শতাংশ
উপরের সব ক’টি ক্ষেত্রেই করের উপর দিতে হবে শতাংশ হারে শিক্ষা
সেস এবং শতাংশ হারে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সেস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.