মিউচুয়াল ফান্ড |
সুরক্ষিত মূলধন
কয়েক বছর টাকাটা আটকে থাকলেও, মূলধনের সুরক্ষাটুকুই
আপনার কাছে প্রথম ও শেষ কথা। তা হলে বলা যায় ক্যাপিটাল
প্রোটেকশন ওরিয়েন্টেড ফান্ড আপনার জন্যই |
|
|
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ভারতে এই ধরনের ফান্ডে লগ্নি করেন, এমন লোক খুব কম। তার অবশ্য কারণ আছে। তবে ফান্ড বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ দেশে এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি ক্যাপিটাল প্রোটেকশন ওরিয়েন্টেড ফান্ডের। তবে এখানে বিনিয়োগকারী জনসাধারণের একাংশ রক্ষণশীল মানসিকতা নিয়েই লগ্নির বাজারে পা রাখেন। ফলে তাঁদের পছন্দের সঙ্গে খাপ খায় এই ফান্ডের শর্তগুলি। |
মাছের চোখ |
ফান্ডের লক্ষ্য নাম থেকেই পরিষ্কার। ‘ক্যাপিটাল প্রোটেকশন’ অর্থাৎ মূলধনের সুরক্ষা। মহাভারতে অর্জুনের কথা জানি, যিনি লক্ষ্যভেদের সময়ে মাছের চোখটি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি। ক্যাপিটাল প্রোটেকশন ওরিয়েন্টেড ফান্ডের কাছে মাছের চোখ, ওই মূলধনের সুরক্ষা। আর তাই এক দিকে এই ফান্ড তহবিলের বেশির ভাগটা ফিক্সড-ইনকাম সিকিউরিটিজ-এই লগ্নি করে, যেগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় ফান্ডটির মেয়াদ পেরোনোর দিনই বা তার আগে। আর অন্য দিকে, একটি খুব ছোট অংশ লাগিয়ে দেয় ইক্যুইটিতে, মানে শেয়ার বাজারে। যাতে তহবিল ফুলে-ফেঁপে উঠে (ক্যাপিটাল অ্যাপ্রিসিয়েশন) লগ্নিকারীর হাতে আসা নিশ্চিত হয়। বাজারে তিন বছর মেয়াদের ক্যাপিটাল প্রোটেকশন ওরিয়েন্টেড ফান্ডই বেশি চলে। |
গ্যারান্টি বলে কিছু নেই |
মিউচুয়াল ফান্ডের জগৎ গ্যারান্টিহীন। তা সে তহবিল সুরক্ষার ব্যবস্থা যতই পোক্ত করা হোক না কেন। কাজেই এ পর্যন্ত এই ফান্ডের কথা পড়ে আপনার যদি মনে হয় “তবে এ বার এখানেই টাকা লাগাই। মেয়াদ গেলে অন্তত মূলধন ফেরত পাওয়াটা তো পুরোপুরি নিশ্চিত হল।” তা হলে আমি বলব, এক মুহূর্তের জন্যও ভাববেন না রিটার্ন নিয়ে কোনও গ্যারান্টি বা ১০০% নিশ্চয়তা দিচ্ছে এ ফান্ড। সাধ্য মতো চেষ্টা করলেও, শেষে কোনও নির্দিষ্ট পরিমাণ রিটার্ন দিতে দায়বদ্ধ থাকেন না ফান্ড ম্যানেজাররা। |
সুরক্ষার রাস্তা
লগ্নিকারীর মূলধনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ফান্ড ম্যানেজার যা করেন
|
১) তহবিলের একটা বড় অংশ উঁচু রেটিংয়ের ঋণপত্র বা ডেট সিকিউরিটিজে লগ্নি করেন। দেশের আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখে, নিজস্ব গবেষণা ও বাজারের দেওয়া সুযোগের ভিত্তিতেও ঋণপত্র বাছেন। সর্বোপরি দেখে নেন, যাতে সেগুলির মেয়াদ শেষ হয় ফান্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার দিন বা তার আগেই। এর ফলে ঋণপত্র ভাঙানোর সময়েই মূলধন হাতে পাওয়া নিশ্চিত হয়।
২) বাদবাকি ছোট অংশ খাটানো হয় শেয়ারে। যাতে এখানে মূলধন ভাল ভাবে বেড়ে ওঠে। এ জন্য ফান্ড ম্যানেজার সক্রিয় ভাবে ফান্ড পরিচালনার (অ্যাক্টিভ ম্যানেজমেন্ট) পন্থা নেন। অর্থাৎ একটি সূচকের আওতায় থাকা বিভিন্ন ধরনের শেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লগ্নি করেন। এবং খুব হিসেব-নিকেশ করে তা পরিচালনা করেন। যাতে সূচকের মুনাফাকে ছাপিয়ে যাওয়া যায়। |
পথের কাঁটা |
আপনার লগ্নির এগোনোর পথ কিন্তু এখানে কাঁটামুক্ত নয়। মূলধনের সুরক্ষা নির্দিষ্ট কিছু শর্তের উপর প্রবল ভাবে নির্ভর করে। যেমন, কোনও বিষয়ে সরকার নীতি সংশোধন করল বা নতুন নীতি আনল কিংবা বাজারে সুদের হারে তীব্র ওঠাপড়া শুরু হল। আবার এমনও হতে পারে, যে-সংস্থার ঋণপত্রে লগ্নি করা হল, আচমকা সেই সংস্থাটিই কোনও আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ল। ফলে প্রতিশ্রুতি মাফিক সুদ দিতে পারল না। এ রকমই নানা ঘটনার প্রভাব পড়বেই লগ্নির উপর। |
ন্যাভ দেখুন, রেটিং নয় |
রেটিংয়ের কথা আগে বলেছি ঠিকই। কিন্তু রেটিং দেখে এই ফান্ডের রিটার্ন সম্পর্কে ধারণা করবেন না। আসলে কোনও সম্পদ পরিচালনাকারী সংস্থা তাদের ফান্ড বাজারে ছাড়ার সময়ে যে-ভাবে সেটি চালাবে বলে কথা দিয়েছিল, বাস্তবে সে ভাবেই তা চালাচ্ছে কি না, তা-ই মূল্যায়ন করে রেটিং সংস্থাগুলি। কিন্তু ফান্ডের নেট অ্যাসেট ভ্যালু বা ন্যাভ কী হবে, তা রেটিং থেকে আন্দাজ করা যায় না। কারণ রেটিং সেই বিষয়টি তুলেই ধরে না কখনও। কাজেই লগ্নিকারী হিসেবে আপনি কখনওই ফান্ডের রেটিং দিয়ে সেটির রিটার্ন কত হতে পারে, বা ভবিষ্যতে তা কেমন আয় দিতে পারে, সেটা বিচার করতে যাবেন না। |
একটি উদাহরণ |
বাজারে আসা একেবারে নতুন একটি ফান্ডের কথা বলছি।
নাম: ইউনিয়ন কেবিসি ক্যাপিটাল প্রোটেকশন ওরিয়েন্টেড ফান্ড, সিরিজ - ওয়ান।
চরিত্র: ক্লোজ এন্ড, মানে নির্দিষ্ট মেয়াদের ফান্ড। তিন বছর পর্যন্ত মেয়াদ। তা উত্তীর্ণ হওয়ার আগে ভাঙানোর সুযোগ নেই।
লক্ষ্য: অত্যন্ত সতর্ক ভাবে বাছাই করা ঋণপত্রে লগ্নি করে প্রাথমিক ভাবে মূলধনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের শেয়ারে লগ্নি করে তহবিল বাড়ানোর চেষ্টাও আছে। তহবিল বণ্টনের এই কাঠামো মূল্যায়ন করেছে ইক্রা। এটি দেশের প্রথম সারির একটি রেটিং সংস্থা।
তহবিল বণ্টন: ২০% শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে পারে ফান্ড। কারণ এটাই ফান্ডের ইক্যুইটিতে লগ্নি করার ঊর্ধ্বসীমা। ইক্রার মতে, একেবারে শুরুতে ঋণপত্র-শেয়ারে (ডেট-ইক্যুইটি) লগ্নির মিশ্রণ হতে পারে ৮৩-১৭ অনুপাতে। অর্থাৎ প্রাথমিক ভাবে ফান্ডটি তহবিলের (যে-অর্থ ফান্ডটি চালু হওয়ার সময় বাজার থেকে তোলা হয়েছে) অন্তত ৮৩% ঋণপত্রে লাগালে ভাল হয়। কারণ সেই একই, মূলধনের সুরক্ষা। |
কাদের জন্য? |
• যাঁরা বাড়তি টাকা কয়েক বছরের জন্য লগ্নি করে আটকে রেখে দিতে পারবেন (অন্তত তিন বছর)।
• যাঁরা সাধারণত লগ্নি নিয়ে কিছুটা রক্ষণশীল। তবে শেয়ারে টাকা লাগানোর পুরোপুরি বিরোধী নন।
• যদি লগ্নিকারী প্রবীণ হন। এমনকী যাঁদের অবসর নেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। কারণ ওই বয়সে এসে তাঁদের মূলধনের সুরক্ষার বিষয়টি আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। তবে সবটাই নির্ভর করছে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও তহবিল বাড়ানোর খিদের উপর।
• নির্দিষ্ট মেয়াদের (ক্লোজ এন্ড) ফান্ড বলে যখন ইচ্ছে ঢোকা যায় না। ফলে এই ধরনের একটি ফান্ডে লগ্নি করার সুযোগ একবার হারালে, পরেরটির জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে। হতে পারে আগের সংস্থাই আর একটি ফান্ড বাজারে ছাড়ল। আবার অন্য সংস্থাও নতুন ফান্ড আনতে পারে। তত দিন অপেক্ষা করতে পারলে অসুবিধা নেই। |
লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|