দয়াল সেনগুপ্ত • দুবরাজপুর |
শালনদীর মাটি কেটে ইটভাটার কারবার চলছে রমরমিয়ে। অবৈধ সেই কারবারের ঠেলায় এক দিকে যেমন নদীগর্ভে বড় বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে, তেমনি নদীর ধার ঘেঁষে যাতায়াতের পথও এক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন হেতমপুর পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজন। বার্ষাকাল বাদে বছরের অন্য সময় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়েতের যে অস্থায়ী পথ তৈরি হয়ে থাকে, ইটের কারবারিরা সেটাও নষ্ট করে দিয়েছে দেখে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানানোর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। মঙ্গলবারই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের একটি প্রতিনিধি দল এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখেন। তাঁরা উপলব্ধি করেন অন্যায় ও বৈআইনি ভাবে ইটের কারবার চলছে।
শালনদীর যেখানে ইটভাটাগুলি তৈরি হয়েছে তার আশপাশে থাকা কেন্দুলা, রসুলপুর দোবান্দা, ধরমপুর চাঁপানগরী, মদনপুর গ্রামের বাসিন্দাদের কথায়, বর্ষাকালে দু-তিন মাসের বেশি জল থাকে না নদীতে। আর সেই সুযোগেই নদীগর্ভের মাটি কেটে চলছে একের পর এক ইটভাটা। নদী গর্ভে দু-তিন কিমি বিস্তৃত এই কারবার।
প্রতি বছর বেড়ে চলছে। আগে তুলনায় নদীর পাশে করা হত ভাটা। এখন কিছু কিছু ইটভাটা হয় নদী গর্ভে নেমে এসেছে, নয়তো মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে ২০-৩০ ফুট গভীর করে নদী থেকে মাটি নিয়ে বিভিন্ন বাংলা ও চিমনি ভাটায় সরবরাহে চলছে। ফলে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কে থাকা শাল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেমনই এই নদীর পাশে থাকা রাস্তাটি বর্ষায় নদীর মধ্যে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই অন্যায় চলতে থাকলেও প্রাশাসন চুপ ছিল। তাই বাধ্য হয়েই গণস্বাক্ষরিত আবেদন করা হয়েছিল প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে। স্থানীয় বাসিন্দা ভজহরি পাল, শেখ নজরুল কিংবা কেন্দুলার নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য দীনবন্ধু নন্দনরা জানিয়েছেন, বর্ষার কিছু দিন বাদ দিয়ে এই নদী পেরিয়ে রসুলপুর, ধরমপুর, চাঁপানগরীর বাসিন্দারা হাসপাতাল (দুবরাজপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র), পঞ্চায়েত এবং হেতমপুরে স্কুল বা কলেজে যান। একই ভাবে কেন্দুলার মানুষ চাষ বা অন্য কাজে নদীর ওপারে যান। ইটভাটার কারবারিরা নদীর মাঝখানে থাকা আস্থায়ী মোরাম রাস্তাটি পর্যন্ত কেটে ফেলেছে। ফলে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে সকলকেই।
ইটের কারবার যে অন্যায় ভাবে চলছে সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন হেতমপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা স্থানীয় বাসিন্দা অব্দুর রউফ চৌধুরী। তিনি বলেন, “এই কারবার চলতে দেওয়া যাবে না।” কী বলছেন ইটভাটার মালিকেরা? বংলা ও চিমনি ভাটার মালিক শেখ গিয়াসউদ্দিন, শেখ নজরুল ওরফে লালন এবং মহম্মদ জানআলমদের দাবি, “কাজটি সমর্থনযোগ্য না হলেও রাজস্ব দিয়ে ইটভাটা চালাচ্ছি।” কেউ কেউ সাফাই দেওযার চেষ্টা করেছেন, এই বছর তাঁরা নদী গর্ভে ইটভাটা করেননি। কারও বক্তব্য মাটি কাটলেও এলাকাবাসীর অভিযোগের পরে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ইত্যাদি। দুবরাজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ পাওয়া মাত্রই গুরুত্ব বুঝে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ও জেলাকে জানানো হয়েছে।”
দুবরাজপুরেরে বিএল অ্যান্ড এল আরও বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “প্রথমত নদীগর্ভে মাটি কাটা বা ইটভাটা করা দুটোই আইনবিরুদ্ধ। তাই কোনও রাজস্ব এই বাবাদ আদায় হওয়ার প্রশ্নই নেই। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে একটি প্রতিনিধি দল তদন্ত করেছে। রিপোর্ট হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তার পরে নির্দেশ মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |