অরুণ মুখোপাধ্যায় • সিউড়ি |
জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ তুলল কর্মচারীদের একটি সংগঠন। সভাধিপতির বিরুদ্ধে বীরভূমের জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত কর্মচারি সমিতির বীরভূম জেলাপরিষদ ইউনিট। আর এই ঘটনাকে ঘিরে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ অভূতপূর্ব চাপানউতোরে জড়িয়েছে।
সভাধিপতি এক দিকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্য দিকে, জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা অসহযোগিতার অভিযোগও করছেন। অন্নপূর্ণাদেবীর দাবি, “জেলা প্রশাসনের অসহযোগিতার জন্য উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।” জেলা প্রশাসন অবশ্য তা মানতে চায়নি।
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “যা বলার অতিরিক্ত জেলাশাসক
|
বিধান রায় |
|
অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায় |
(জেলাপরিষদ) বিধান রায়ই বলবেন।” বিধানবাবু অবশ্য বলেন, “অন্নপূর্ণাদেবীকে অসম্মান জানানোর এতটুকুও ইচ্ছা নেই। তবে এ কথা ঠিক যে, তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম দিকের বেশ কিছু কাজ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।” বিধানবাবুর দাবি, “আমরা ইতিমধ্যেই কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত করেছি। কিছু অভিযোগের ভিত্তি রয়েছে।” এ দিকে অন্নপূর্ণাদেবীর চ্যালেঞ্জ, “সবটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ। তদন্তে কিছু প্রমাণ হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক!”
তৃণমূল প্রভাবিত ওই কর্মী সংগঠনের ইউনিট সভাপতি নিত্যহরি চট্টোপাধ্যায় সভাধিপতির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনেছেন এক, অন্নপূর্ণাদেবীর সহায়তায় পাঁচামির টোলপ্লাজার দায়িত্বে থাকা আগের ঠিকাদার সংস্থা টাকা জমা দিয়েও ১৭ লক্ষ ২৬ হাজার ৪২ টাকা ফেরত নিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে বিধানবাবুরও দাবি, “পাঁচামি টোলপ্লাজার আগের ঠিকাদার টাকা জমা দিলেও প্রায় ১৭ লক্ষেরও বেশি টাকার কোনও হদিশ দিতে পারেনি।” দুই, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও সভাধিপতি অতিরিক্ত ২১ জনকে নিয়োগ করেছেন। তিন, জেলাপরিষদের খেলার তহবিলে থাকা ২০ লক্ষ টাকার পুরোটাই সভাধিপতি দলবাজি করে আগের সভাধিপতি সিপিএমের মনসা হাঁসদার গ্রামের জন্য দিয়েছেন। পরে আন্দোলনের জেরে সেখান থেকে ১২ লক্ষ টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে। চার, জেলা পরিষদে সরকারি ভাবে পাঁচটি গাড়ি বরাদ্দ হলেও বর্তমানে গাড়ি চলছে ১৩টি। পাঁচ, জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে একটি ইট ভাটা রয়েছে। সেখান থেকে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ৩৩ লক্ষ টাকা অনাদায়ী রয়েছে। রাজস্ব না মেলার কথা মেনে নিয়েছেন খোদ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শ্যামাশিস রায়ও।
এ দিকে অন্য কথা বলছেন সিপিএমের অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে শাসকদল বদলে যাওয়ার পর থেকে যে কোনও কাজেই অসহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসন। যার জেরে অনেক উন্নয়নমূলক কাজে সমস্যা হচ্ছে বলেই তাঁর দাবি। সরাসরি জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে অন্নপূর্ণাদেবী বলেন, “জেলাশাসক অর্থ-সমিতির কোনও বৈঠকেই আসছেন না। নিজের খেয়ালখুশি মতো কাজ করছেন। জনপ্রতিনিধিদের কথা শুনছেন না।”
অভিযোগের জবাব দিয়ে জগদীশবাবু বলেন, “আমার বদলে এডিএম ওই মিটিংয়ে যান। তাঁকেই সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” সভাধিপতির আরও অভিযোগ, “পাঁচামি পাথর খাদান এলাকার টোল প্লাজাটির জন্য যে পরিমাণ ডাক ছিল, সম্প্রতি তার অর্ধেক টাকায় অন্য একটি ঠিকাদার সংস্থার হাতে সেই টোল তুলে দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেছেন, “এলাকার উন্নয়নের জন্য তারাপীঠে একটি টোলপ্লাজা ছিল। জেলা প্রশাসন সেটি তুলে নিয়েছে।” এ বিষয়ে বিধানবাবুর অবশ্য দাবি, “টাকা না দেওয়ার জন্য অন্য টেন্ডার দাখিল করা পরের সংস্থাটিকে তাদের ডাক অনুযায়ী বরাত দেওয়া হয়েছে। আর তারাপীঠের টোলপ্লাজাটি ছিল পূর্ত দফতরের জমিতে। তাদের আপত্তিতেই সেটি তুলে নেওয়া হয়।”
তাঁর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠছে, তা নিয়েও সরব হয়েছেন সভাধিপতি। তাঁর দাবি, “পাঁচামিতে দীর্ঘ দিন গণ্ডগোল চলার ফলে ঠিকাদার সংস্থার প্রচুর লোকসান হয়েছিল। তাঁরা জেলাপরিষদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর ইট ভাটার বিষয়টি আগের সভাধিপতির আমলের। গত পাঁচ বছর ধরে ওই ইটভাটা বন্ধই আছে। টেন্ডার ডাকা হলেও তা কেউ নিতে চায়নি।” অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “প্রয়োজন আছে বলেই, ওই ২১ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে।” খেলার তহবিল নিয়ে দলবাজি করার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন অন্নপূর্ণাদেবী। তিনি বলেন, “ওই গ্রামে আদিবাসীদের খেলাধুলার উন্নয়নের জন্যই টাকা খরচ করা হয়। ঘটনাচক্রে সেটি মনসাবাবুর গ্রাম। এর মধ্যে দলবাজির কোনও গল্প নেই।”
কিন্তু প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এই ‘কাজিয়া’য় কি সাধারণ মানুষই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না? অন্নপূর্ণাদেবীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বীরভূমের অতিরিক্ত জেলাশাসকের (জেলা পরিষদ) দাবি, “জেলায় উন্নয়নের গতি আগের তুলনায় অনেক বেশি। কোথাও উন্নয়নের কাজ থেমে নেই।” |