নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
স্থানীয় একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে কলেজের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে কাঁকসার গোপালপুরে। দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা জয়ন্ত চক্রবর্তী অভিযোগ করেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য গোপালপুরে তাঁর কেনা ১৯ একর জমির মধ্যে ৭ একরই দখল হয়ে গিয়েছে। এলাকার দু’জন প্রোমোটার এবং তৃণমূলের কিছু কর্মী একটি ক্লাবকে সামনে রেখে এমন কাজ করেছে বলে তাঁর অভিযোগ। বিষয়টি কাঁকসা থানা ও মহকুমা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন তিনি। মহকুমাশাসক আয়েষা রানি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে গোপালপুরে ওই জমি কেনেন জয়ন্তবাবু। তার একাংশে অছি পরিষদের মাধ্যমে একটি বেসরকারি বিএড কলেজ নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। বছর তিনেক আগে সেখানে পঠন-পাঠনও শুরু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই জমির মধ্যে একটি খেলার মাঠ রয়েছে। সেখানে স্থানীয় এক ক্লাবের সদস্যেরা-সহ এলাকার ছেলেরা খেলাধুলো করেন। বিএড কলেজ চালুর পরেও মাঠটি তাঁরা ব্যবহার করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানাননি। ক্লাবটি বছরে এক বার ওই মাঠে ফুটবল প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। |
বিতর্কিত জমি। —নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু সম্প্রতি সমস্যা শুরু হয়। জয়ন্তবাবু অভিযোগ করেন, খেলার মাঠটি দেওয়াল দিয়ে ঘিরে কংক্রিটের বেঞ্চ তৈরি, দোলনা-সহ শিশুদের খেলার জন্য নানা বন্দোবস্ত করে দেন স্থানীয় দুই প্রোমোটার বাপি দত্ত ও জগন্নাথ দে। জগন্নাথবাবু ওই ক্লাবটির সভাপতিও। জয়ন্তবাবুর আরও অভিযোগ, মাঠের অন্য দিকের বেশ খানিকটা জমিও প্রোমোটারদের দখলে চলে গিয়েছে।
জয়ন্তবাবুর দাবি, ৬৫ জেএল নম্বরের ১৯৫২ প্লটের কেনা ৯.০৭ একরের মধ্যে ৬ একর জমি দখল করে নিয়েছেন বাপি দত্ত, জগন্নাথ দে এবং ক্লাব। তা ছাড়া ১৯৫৬ প্লটের ১.৬০ একরের মধ্যে এক একরেরও বেশি দখল করেছেন বিশু দে ও জগন্নাথ দে। জয়ন্তবাবুর কথায়, “ওই দুই প্রোমোটারকে মদত দিচ্ছেন এলাকার কিছু নিচুতলার তৃণমূল কর্মী। এর জেরে কলেজের নির্মাণ কাজ থমকে গিয়েছে। পলিটেকনিক কলেজ এবং আইটিআই খোলার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। তা আর বাস্তবায়িত হবে কি না, জানি না।”
জমি দখলের অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি বাপিবাবু, জগন্নাথবাবুরা। তাঁদের দাবি, “দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার বাসিন্দারা ওই মাঠে খেলাধুলো করেন। তাই মাঠটি ঘেরার ব্যবস্থা করেছি। মাঠ চলে গেলে ছেলেরা খেলবে কোথায়?” জয়ন্তবাবুর বক্তব্য, “ক্লাবের ছেলেরা খেলার মাঠ ব্যবহার করুক, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু কোনও ভাবেই তা যেন ক্লাবের সম্পত্তি বলে দাবি না করা হয়।” তিনি আরও বলেন, “খেলাধুলোর প্রসারে ক্লাবের ছেলেরা সাহায্য চাইলে হাত বাড়িয়ে দেব।”
দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষা রানি জানান, আজ, বৃহস্পতিবার ওই জমি মাপজোকের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, বিষয়টি নজরে রাখা হচ্ছে। জমি মাপজোক শেষ হওয়ার পরে আর কোনও দখলদারি বা বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। কলেজের জমি দখলে তৃণমূলের একাংশের নাম জড়ানোয় বিব্রত দলের নেতারা। প্রদেশ তৃণমূল সদস্য তথা দলের প্রাক্তন কাঁকসা ব্লক সভাপতি দেবদাস বক্সী বলেন, “দলের কেউ জড়িত কি না, খোঁজ নিয়ে দেখছি। আমরা চাই, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে সমস্যার নিষ্পত্তি হোক।” |