নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
আর্থিক অনটনের জেরে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার (এনবিএসটিসি) এক কর্মী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সকালে কোচবিহার শহরের কলাবাগান এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম লোকনাথ দে (৫৪)। ওই সংস্থায় তিনি গ্যারেজ কর্মী পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বেতন ছিল আনুমানিক ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু, তিন মাস ধরে তিনি প্রতি মাসে গড়ে তিন হাজার টাকা কম পাচ্ছিলেন বলে পরিজনদের দাবি। গত জুলাই মাসে তাঁকে সিউড়িতে বদলি করা হয়। তাঁর স্ত্রী রত্নাদেবী যক্ষ্মায় ভুগছেন।
রত্নাদেবী বলেন, “আমি দু’মাস ধরে টিবি-র জন্য হাসপাতালে ভর্তি। ছেলে সোফা সারানোর কাজ করে। তেমন আয় নেই বলে পুত্রবধূ ও নাতির খরচও আমাদেরই দিতে হয়। এত দিন তাও কষ্টেসৃষ্টে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু, সিউড়িতে বদলির পরে দু’টি সংসার হওয়ায় অর্থাভাব দেখা দেয়। ক’দিন আগে কোচবিহারে ফিরেছিলেন। অনটনের কারণে উনি ভেঙে পড়েই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।” পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আর্থিক অনটনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন মৃতের বাড়ির লোকজন। বাড়িতে লোকনাথবাবুর ঝুলন্ত দেহ মিলেছে জেনে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁর স্ত্রী। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। ঘর থেকে সুইসাইড নোট মেলেনি।”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র দাবি করেন, কর্মীদের কম বেতন দেওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। তাঁর বক্তব্য, “এনবিএসটিসি যে ভাবে বিল করে, নিয়ম মেনে তাই দেওয়া হয়। তা ছাড়া নভেম্বরের বরাদ্দও ছাড়া হয়েছে। কিছু দিন দেরি হয়েছে। তা বলে সে জন্যই উনি আত্মহত্যা করেছেন, এটা মেনে নিতে পারছি না।” পাশাপাশি মন্ত্রীর মন্তব্য, “বাম জমানার দু’লক্ষ তিন হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা রাজ্য সরকারের ওপর রয়েছে। তা হলে তো রাজ্য সরকারকে রোজই আত্মহত্যা করতে হয়।” মন্ত্রীর পরামর্শ, “রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে। আত্মহত্যা করার প্রবণতা ঠিক নয়।”
ঘটনাচক্রে শিলিগুড়িতে এ দিন নিগমের এমডি’র সঙ্গে বৈঠক করেন সংস্থার চেয়ারম্যান, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কর্মীদের পুরো বেতনই দেওয়া হয়। তা ছাড়া আর্থিক অনটন তো কমবেশি সকলেরই আছে।” নিগমের এমডি সি মুরুগন জানান, চাকরিতে বদলি হতেই পারে। তাঁর কথায়, “বদলি নিয়ে সমস্যা হলে কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো যেতে পারে। আত্মহত্যার মানসিকতা ঠিক নয়।”
এনবিএসটিসি সূত্রেও জানা গিয়েছে, কয়েক মাস ধরে নিগম কর্মীদের গড়ে মোট বেতনের ৭৫ শতাংশ বেতন দেওয়া হচ্ছিল। অক্টোবরে দেওয়া হয় ৮০ শতাংশ টাকা। ইনটাক অনুমোদিত কর্মী সংগঠনের সদস্য ছিলেন লোকনাথবাবু। জুলাইয়ে এনবিএসটিসির ছ’জন সিউড়িতে একযোগে বদলি হন। সংগঠনের কোচবিহার শাখার সম্পাদক সুজিত সরকার বলেন, “কর্মীদের এত দূরে বদলি করলে সকলেরই অনটন বাড়বে। তা জানিয়ে কাছাকাছি বদলির অনুরোধ করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ আমল দেননি।” সংস্থার পরিচালন সমিতির অন্যতম ডিরেক্টর আব্দুল জলিল আহমেদ জানান, বদলি রদের আবেদনে সব সমস্যা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করলে তা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয়। উনি তা উল্লেখ করে কেন আবেদন করেননি সেটা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। |