আমরি হাসপাতালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর কেটে গিয়েছে এক বছর। অনেক মানুষের প্রাণের বিনিময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে বেশ কিছু যন্ত্র বসেছে ঠিকই, কিন্তু আগুন লাগলে হয়ত সেগুলি শুধুই নীরব দর্শক হয়ে থাকতে বাধ্য হবে। কারণ, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব। এমনই অবস্থা আরামবাগে।
দমকল দফতরের সুপারিশ অনুযায়ী, আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে বসানো হয়েছে ২৭টি অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার। রয়েছে অন্যান্য সরঞ্জামও। বেশ গর্বের সঙ্গেই সেগুলি দেখাচ্ছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভিতরে কী সত্যি ‘পরিবর্তন’ হয়েছে? |
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং ঘরে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে বৈদ্যুতিক হিটার। যদিও হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায়ের দাবি, “হিটার ব্যবহার বন্ধ করার জন্য করা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চা কিংবা রোগীদের জল গরম করার প্রয়োজনেই হিটার ব্যবহার করা হয়। তবে আগের তুলনায় হিটারের ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছে।”
আমরির দুর্ঘটনার পর তৎকালীন মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগীর উদ্যোগে মহকুমা জুড়ে অগ্নিবিধি-সংক্রাম্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচার চলেছিল। মহকুমা এবং ব্লক হাসপাতালগুলি ছাড়াও সুপার মার্কেট, হোটেল কিংবা নার্সিংহোমের কর্মীদেরও দমকল কর্মীরা আগুন মোকাবিলা করার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। দমকল দফতরের সুপারিশ মেনে সরকারী ও বেসরকারি ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হয়েছিল অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।
কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে সে সব। তার সঙ্গে বাড়ছে এ দিক ও দিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারের জাল।
দমকল বিভাগের আরামবাগ শাখার ওসি সুনীতরঞ্জন চক্রবর্তীর আপেক্ষ, “আগুন নেভাবার তরল ও পাউডার-ভর্তি সিলিন্ডার কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা নিয়মিত অভ্যাস করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা পর্যবেক্ষণে গিয়ে দেখেছি ওই সিলিন্ডারগুলি কেউ আর ছুঁয়েও দেখেনি। আমাদের আশঙ্কা, যদি কোথাও আগুন লাগে তা হলে হয়তো শুধুমাত্র প্রশিক্ষণের অভাবে প্রাথমিক সুরক্ষাটুকুও পাওয়া যাবে না।”
এক বছর আগে আমরির দুর্ঘটনার পর মহকুমা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে বৈঠকে ডাকত দমকল আধিকারিকদের। এখন সেটাও বন্ধ হয় গিয়েছে বলে দমকল দফতর সূত্রের খবর। যদিও এ বিষয়ে মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “প্রয়োজন হলে আমরা দমকল আধিকারিকদের বৈঠকে ডেকে নেব।”
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতি হয়ত ঝাপসা হয়ে যায়। সেটা বেদনার হলে তো আর কথাই নেই। |
