বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অন্তর্ঘাত তত্ত্ব
নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকার তদন্তের নির্দেশ বিধানসভায়
মারপিট হয়েছিল বিধায়কদের মধ্যে। সেই ঘটনায় নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়ে দিল বিধানসভা! তার ফলে বিধানসভার অন্দরে বিধায়কদের সংঘর্ষের ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে ঘুরপথে এসে হাজির হল অন্তর্ঘাত তত্ত্ব!
নিরাপত্তারক্ষীরা কেন মঙ্গলবার বিধানসভার কক্ষে ধুন্ধুমার-পর্বের সময় নির্বাক দর্শক ছিলেন, পাশাপাশি বৃহস্পতিবার অধিবেশন চলাকালীন মিনিট পাঁচেকের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভার ভারপ্রাপ্ত বিশেষ সচিবকে সাত দিনের মধ্যে দু’টি বিষয়েরই তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, পরপর দু’দিনের দু’টি ঘটনাই রহস্যজনক। তাই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দরকার। স্পিকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকও নিষ্ফলা হওয়ায় বিধানসভার অচলাবস্থা কাটেনি। অধিবেশন বয়কট করে বাইরে ধর্না চালিয়ে গিয়েছেন বাম বিধায়কেরা।
গোটা ঘটনায় সন্দেহের তির নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার স্বভাবতই নতুন করে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে। বিরোধী বামফ্রন্টের অভিযোগ, সরকার পক্ষ এখন ডাইনি খুঁজতে নেমেছে! শাসক দলের মন্ত্রী-বিধায়কদের আড়াল করে নিরাপত্তারক্ষীদের চাকরি নিয়ে টানাটানি করতে চাইছে! তদন্তের নির্দেশ জেনে বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশও তাঁদের নিজস্ব বৃত্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্পিকারের নির্দেশ ছাড়া নিরাপত্তারক্ষীরা বিধানসভার মধ্যে কোনও ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। কংগ্রেসের বিধায়কদের একাংশের বক্তব্য, নিরাপত্তারক্ষীদের পরিস্থিতি সামলাতে স্পিকারকে নির্দেশ দিতে তাঁরা শোনেননি।
বিধানসভা কক্ষে মঙ্গলবারের ঘটনার জন্য কোনও বিধায়কের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা এ দিন ঘোষণা হয়নি। অধিবেশনের শুরুতে এ দিন স্পিকার আগের দিন কিছু বিধায়কের ‘অসহিষ্ণু আচরণে’র সমালোচনা করে বিধানসভায় শান্তি বজায় রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা চান। প্রথমার্ধের কাজ বন্ধ রেখে আগে সর্বদল বৈঠক ডাকার দাবি স্পিকার না-মানায় ক্ষুব্ধ বাম বিধায়কেরা সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। তার পরে প্রশ্নোত্তর-পর্ব শুরু হয় এবং তখনই ঘটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ঘটনাচক্রে, তখন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত! বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য আধঘণ্টার জন্য অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়।
মুলতবির পরে ফের অধিবেশন শুরু হতেই পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু প্রস্তাব এনে বলেন, “বিদ্যুৎমন্ত্রী বলার সময়েই কেন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হল? গত কালের ঘটনার সময়ে অধিকাংশ নিরাপত্তারক্ষী কেন নির্বাক (দর্শক) হয়ে রইলেন? দু’টোই অদ্ভুত ঘটনা! আমরা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।” পার্থবাবুর দাবি মেনে নিয়ে স্পিকার দু’টো ঘটনার জন্যই ভারপ্রাপ্ত বিশেষ সচিবকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। স্পিকার বলেন, “কলকাতা হাইকোর্ট, বিধানসভা এবং রাজভবনে বিশেষ সংযোগ থাকে। খোঁজ নিয়েছি, হাইকোর্ট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়নি। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয়েও তদন্ত করে দেখা হোক।”
স্পিকারের নির্দেশ ছাড়া নিরাপত্তারক্ষীরা যে হেতু বিধানসভার মধ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না, তাই স্পিকারও কি তদন্তের আওতায় এসে যাচ্ছেন না? পার্থবাবু প্রথমে মন্তব্য করতে না-চাইলেও পরে বলেন, “স্পিকার মার্শাল মারফত তাঁর নির্দেশ জারি করেছিলেন।” পরিষদীয় মন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই ইঙ্গিত মিলছে, সরকার পক্ষ অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। তদন্তের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “এ বার ডাইনির খোঁজ শুরু হবে! কার কার চাকরি থাকবে, আশঙ্কা হচ্ছে! এখন নিরাপত্তারক্ষী বা মার্শালদের কাজ তৃণমূল বিধায়কেরা হাতে তুলে নিয়েছেন!” সূর্যবাবুদের দাবি সত্ত্বেও তিন সিপিএম বিধায়কের উপর থেকে সাসপেনশন তোলা হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের অধিবেশন শুরুর আগে সর্বদল বৈঠকে স্পিকার সূর্যবাবুকে বলেছিলেন, শাস্তিপ্রাপ্ত বিধায়কদের হয়ে সভায় দুঃখপ্রকাশ করে সাসপেনশন তোলার আবেদন জানাতে হবে। সূর্যবাবু রাজি হননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.