শান্তি নেই, আছে শুধু বিভ্রান্তি |
শহর থেকে দূরে শান্ত, নিরিবিলি এক গ্রামেই ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে তুমুল অশান্তি। গ্রামটার নাম জামথা।
বেশ শান্ত পরিবেশ, অত্যুৎসাহী ক্রিকেটপ্রেমীদের ভিড় নেই। ঝাঁকে ঝাঁকে নিরাপত্তা প্রহরীদের অতিরিক্ত সাবধানতার বিড়ম্বনাও নেই। শহরে অটো রিকশা ধর্মঘটের প্রভাবও নেই। শান্তিতেই সিরিজের শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতি সারার কথা ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের। কিন্তু এরই মধ্যে ফের একটা ঝড়! ধোনিকে নিয়ে মোহিন্দর অমরনাথের অভিযোগের পর এ বার গম্ভীরকে নিয়ে বোর্ডের কাছে ধোনির অভিযোগ। দিনটা ‘আশঙ্কা’র ১২/১২/১২ বলেই কি এমন অশান্তি ভারতীয় ক্রিকেট দলে?
জামথায় ভিসিএ স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে যখন গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে প্রশ্নটা ছোড়া হল তাঁর দিকে, তখনও এই ঝড়টা আছড়ে পড়েনি ভারতীয় শিবিরে। ভারত অধিনায়কের জবাবেও এমন ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল না ছিটেফোঁটা। বললেন, “গৌতমের আগ্রাসী মনোভাবটাই আমার বেশি ভাল লাগে। স্টেপ আউট করে চার-ছয় মারার কথাই শুধু বলছি না, ঠিকঠাক ডিফেন্সিভ খেললেও সেটা ভাল। ও সেটা পারে। শেষ কয়েকটা ম্যাচে তো ও বেশ ভাল ব্যাট করেছে। উন্নতিও করেছে। ও সত্যিকারের বড় ম্যাচের প্লেয়ার। সময় নিলেও আশা করি ও রানে ফিরে আসবে।”
একঘর সাংবাদিকের সামনে কারও সম্পর্কে এই কথা বলার এক দিন আগেই কেউ বোর্ডকর্তাদের ঠিক উলটো কথা বলে তার বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে পারে, এমনটা ভাবা বেশ কষ্টকর। এ তো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মেলানোর পর তাঁর বিরুদ্ধে ঝুরি ঝুরি অভিযোগ করে বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে গ্রেগ চ্যাপেলের লম্বা ই-মেল পাঠানোর ঘটনার মতো ভয়ঙ্কর ব্যাপার। ধোনি সাংবাদিক বৈঠক করে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পর যখন তাঁর নালিশের খবরটা এসে পৌঁছল ভিসিএ স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে, তখন ব্যাগপত্তর গুছিয়ে হোটেলমুখী ভারতীয় দল। |
নাগপুর আপডেট |
পিচ |
ঘাসহীন, শুকনো পিচ। প্রচুর ফাটল। শুরুর দিকে বাউন্স থাকবে, তৃতীয় দিন থেকে ভাঙতে শুরু করবে।
|
দলের খবর
|
ভারত: প্রথম ছ’টি জায়গা ঠিক হয়ে আছে। দুই পেসার ও দুই স্পিনার খেলালে কম্বিনেশন হওয়ার সম্ভাবনা ইশান্ত, দিন্দা, অশ্বিন, ওঝা। তিন স্পিনার খেলানো হলে দিন্দার জায়গায় পীযূষ চাওলা। যুবরাজের বদলি হিসাবে লড়াই অজিঙ্ক রাহানে ও রবীন্দ্র জাডেজার মধ্যে।
ইংল্যান্ড: ব্রড, ফিনের চোট। ফিন না খেললে ব্রেসনান-মিকারের মধ্যে এক জন। স্পিন কম্বিনেশন অবশ্যই সোয়ান-পানেসর এবং সঙ্গে সমিত পটেল। |
|
স্টেডিয়াম থেকে বাসে ওঠার পথে দলের ম্যানেজার এম এ সতীশের কানে বিষয়টা তুলতেই তিনি বললেন, “এ সব ভিত্তিহীন খবর নিয়ে বলার কিছুই নেই। এ সব মিডিয়ার ব্যাপার। কাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আমাদের দলের। ছেলেগুলোকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন।’’ ধোনির নালিশের খবরের ছিটেফোঁটাও যাতে ড্রেসিংরুমে ঢুকতে না পারে, সেই ব্যাপারে সদা সচেতন ভারতীয় দলের ম্যানেজার। বললেন, “এ সব বাজে খবর আমরা পাত্তা দিই না। এ সব নিয়ে দলের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি, হবেও না।” সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য ধোনি প্রাক্তনদের আক্রমণ প্রসঙ্গে বলেছেন, “ওঁদের মতামতকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমাদেরও তো নিজেদের সমস্যাগুলো মেটাতে হবে।”
প্র্যাক্টিসে দু’জন দু’প্রান্তে। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থাতেই এলেন না। গম্ভীর বরাবরের মতোই নেটে ঢুকে মিনিট পনেরো ব্যাট করে চলে গেলেন নেটের পাশে কোচ ডানকান ফ্লেচারের তদারকিতে নক করার জন্য। ফ্লেচারও যে তাঁকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। ধোনি তখন ব্যাট করে চলেছেন। এক পাশে অধিনায়ক, তার পাশে আর এক নেটে সচিন তেন্ডুলকর ভারতীয় ক্রিকেট দলের দুই সমস্যাবোঝাই জাহাজ। ধোনি, গম্ভীররা যে যার কাজ শেষ করে সাজসরঞ্জাম নিয়ে ফিরে গেলেন নিজের মনে। এমনিতেই মাথার ওপর নাগপুর টেস্ট জিতে সিরিজে সমতা আনার বিশাল চাপ। তার উপর বিতর্কের ঘনঘটা। যুবরাজ, হরভজনরা দলে নেই বলে প্র্যাক্টিসে সেই হই-হল্লাও উধাও। সে জন্যই বোধহয় দলের চেহারা বেশ থমথমে, চুপচাপ।
পয়া নাগপুরেই বিপন্ন নেতা ধোনি। স্বীকারও করলেন সে কথা। বললেন, “শুধু নেতা হিসেবে নয়, দলের এক জন ক্রিকেটার হিসেবেও এই টেস্ট আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।” এমন টেস্টের আগে হঠাৎ ড্রেসিংরুমের চেহারাবদলকে মেনে নিতেই হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু দলের কম্বিনেশন কী হবে, ভেবে পাচ্ছেন না। বললেন, “তিন স্পিনারে খেলা যায়। এই উইকেটে পেসাররা রিভার্স সুইং পেতে পারে, স্পিনাররাও টার্ন পেতে পারে। তাই বোলিং কম্বিনেশন নিয়ে ভাবতে হবে।” ব্যাটিং অর্ডারে ছ’নম্বরে যুবরাজের জায়গায় লড়াই রাহানে ও রবীন্দ্র জাডেজার মধ্যে। অশ্বিন, ওঝার সঙ্গে চাওলা, না ইশান্তের সঙ্গে দিন্দাকে টেস্ট অভিষেকের টুপি দেওয়া হবে, এই নিয়েও ধন্দ রয়েছে। কিন্তু এ সব ধন্দ দূর করার জন্য যে শান্তির প্রয়োজন, তা আছে কি? |