কোর গ্রুপকে ঘেঁটে দিলে
আতঙ্ক আরও বেড়ে যাবে
ডেনের হারের পর গত ক’দিন বিভিন্ন মহলে যে সব প্রতিক্রিয়া দেখেছি তাতে আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি, ততটাই দুশ্চিন্তা হয়েছে। হ্যাঁ, মানছি আমাদের টিম ভাল পারফর্ম করেনি। কিন্তু কী করে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, তা নিয়ে গত কয়েক দিনে কোনও গঠনমূলক সমালোচনা বা প্রস্তাব দেখলাম না। প্রত্যেকে শুধু দলটাকে টেনে নামানোর বিভিন্ন চেষ্টা করছেন। বলির পাঁঠা খোঁজা হচ্ছে। কার কার গর্দান নেওয়া যায় সেই চিন্তা চলছে। কিন্তু এ সব করে দলটাকে কী করে সাহায্য করা যাবে, সেটা আমার মাথায় ঢুকছে না।
এই মুহূর্তে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল জয়ে ফেরার রাস্তাটা খুঁজে বের করা। আমি যখন দলে ছিলাম, তখন কয়েক জন সিনিয়রকে নিয়ে একটা নিউক্লিয়াস বা কোর গ্রুপ তৈরি করা হত। দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটা এদের উপর ছিল। রণকৌশল ঠিক করা থেকে শুরু করে অন্য সব ধরনের পরিকল্পনা ছকায় নির্বাচকেরা এবং টিম ম্যানেজমেন্ট এই কোর গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করত। কোর গ্রুপের সদস্যদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা দায়িত্ব থাকত। যার মানে, অধিনায়ক এক জন হলেও নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটা বাকিরা ভাগ করে নিত। একটা দল সাফল্য চাইলে এমন একাধিক নেতা থাকা জরুরি যারা দলকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ক্যাপ্টেনের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সাহায্য করবে। ক্যাপ্টেনের মতো কোর গ্রুপের সদস্যদেরও দলে গুরুত্ব আর মত প্রকাশের অধিকার থাকা জরুরি।
জাহির আর যুবরাজকে নাগপুরের শেষ টেস্টের দল থেকে বাদ দেওয়া হল দেখে আমি অবাক হয়েছি বললে খুব কম বলা হবে। জাক আমাদের সেরা বোলার। মনে রাখতে হবে, এই সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে কিন্তু পেসাররা কোনও রকম দাগ কাটতে পারেনি। তা ছাড়া ইডেনে জাকের বলেই কুকের ক্যাচ পড়েছিল। ভবিষ্যৎ চিন্তাটা যদি এই হয় যে, আগামী বছরের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জাককে দলে দরকার, তা হলে কিন্তু এই কথাটা ওকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে রাখা জরুরি। যে আমাদের পরিকল্পনায় এখনও তুমি সমান গুরুত্বপূর্ণ। ছাঁটাই করে সেই বার্তাটা ওর মতো সিনিয়রের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে না।
যুবির বাদ পড়াটাও আমার ঠিক মাথায় ঢোকেনি। যুবি তো আর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দলে ঢোকেনি। দলীপ ট্রফিতে ডবল সেঞ্চুরি আর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করে দলে এসেছিল। ওকে যদি দলের ভরকেন্দ্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, তা হলে মাত্র তিনটে ম্যাচের পরেই ওকে ছেঁটে ফেলে ঠিক কী ধরনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে? আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি যে এতে ওর আত্মবিশ্বাসে কতটা ধাক্কা লাগবে? অথবা ওর জায়গায় দলে যে-ই আসুক, সেই ছেলেটার আত্মবিশ্বাস প্রচণ্ড চাপের মুখে কতটা নড়বড়ে হয়ে যাবে? নাগপুরে যুবরাজের জায়গায় রাহানে অথবা জাডেজার টেস্ট অভিষেক হবে। কিন্তু মাঠে নেমেই তাক লাগানো পারফরম্যান্স করতে না পারলে আমাদেরও ছেঁটে ফেলা হবে, এই আতঙ্ক কাজ করবে ওদের ভেতর। আমার মতে এটা কখনওই আদর্শ পরিস্থিতি হতে পারে না।
যুবি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে খেলছে। ওর মতো সিনিয়রের নিজেকে প্রমাণ করার জন্য গোটা সিরিজটা অবশ্যই পাওয়া উচিত ছিল। চতুর্থ টেস্টে ওকে বাদ দেওয়ায় অনিশ্চয়তা আর ভ্রান্তি তৈরি হতে বাধ্য। এতে দলের অন্যদের মধ্যেও নেতিবাচক চিন্তা ছড়িয়ে পড়লে অবাক হব না। এই সময় কিন্তু প্রত্যেক প্লেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোটা খুব জরুরি। পারফরম্যান্স অবশ্যই অন্যতম প্রধান মাপকাঠি। কিন্তু দলে এমন একটা পরিবেশ থাকা জরুরি যে পরিবেশে প্রত্যেকের সেরাটা বেরিয়ে আসে। যদি প্রতি তৃতীয় ম্যাচে দলের কোর গ্রুপকে ঘেঁটে দেওয়া হয়, তা হলে কিন্তু এমন আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়বে যে আসল উদ্দেশ্যটাই মাটি হবে। এই অনিশ্চয়তার বাতাবরণ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ, সবচেয়ে প্রতিভাবান প্লেয়ারদেরও প্রভাবিত করে ফেলে। তা হলে জুনিয়রদের দশা কী হবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
ভারতীয় দল এখন একটা পালাবদলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। পুরনো কোর গ্রুপের খুব কম সদস্যই এখনও দলে খেলছে। তাই ভীষণ জরুরি এখনই ভবিষ্যতের কোর গ্রুপটাকে চিহ্নিত করে ফেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা। এবং ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তাটা খোলা রাখা। সেটা টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে হোক বা নির্বাচকদের তরফে বা দুই তরফ থেকেই।
এই মুহূর্তে প্রথম কাজটা অবশ্যই নাগপুরে জয় নিশ্চিত করা। মনে পড়ছে দু’বছর আগের কথা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজের শেষ টেস্টটা ছিল নাগপুরে। তার আগে প্রথম দুই ম্যাচে আমরা তেমন ভাল করতে পারিনি। গ্যারি কার্স্টেন তাই কোর গ্রুপকে নিয়ে নাগপুর টেস্টের আগে বসেছিল। যে বৈঠকে টেস্টটার গুরুত্বের উপর কোচ বার বার জোর দিয়েছিল। আমাদের কোথায় কোথায় ভুল হচ্ছে আর কী করলে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে, তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। আমরা কিন্তু প্রত্যেকে সে দিন দায়িত্বটা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম। যার নিট ফল, নাগপুরে আমাদের দুরন্ত বডি ল্যাংগুয়েজ আর প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ক্রিকেট ম্যাচের ফয়সালা করে দিয়েছিল চার দিনেই। আশা করছি এই ভারতীয় দলটাও নাগপুরে সেই একই রকম একাগ্রতা, মানসিকতা আর বডি ল্যাংগুয়েজ নিয়ে মাঠে নামবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.